কলকাতা, 11 জুলাই : নামমাত্র চলছে সরকারি অফিস ৷ সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের বেশি কাজে যোগ দিতে পারছেন না অধিকাংশ কর্মী ৷ বেশিরভাগই দিনই ফাঁকা পড়ে থাকছে দপ্তরগুলি ৷ সংক্রামকের আতঙ্ক নিয়ে কাজে যোগ দিতে চাইছেন না অনেকে ৷ 70 শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে মান্যতা পাচ্ছে না কোনও রস্টার বা ডিউটি শিডিউল ৷ কোরোনা আবহে রাজ্যের কর্মসংস্কৃতি একপ্রকার শিকেই উঠেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল ৷
নবান্ন, মহাকরণ, খাদ্য ভবন, বিকাশ ভবন, ময়ূখ ভবন, উন্নয়ন ভবন-সহ রাজ্যের অন্যান্য সচিবালয়গুলিতে কাজের সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক মানুষ ৷ কর্মীদের মধ্যে অধিকাংশই কলকাতা সংলগ্ন শহরতলির বাসিন্দা ৷ আশপাশের জেলাগুলি থেকে প্রতিদিন সকালে কাজের তাগিদে শহরে আসেন তাঁরা ৷ কিন্তু, মাত্র কয়েক মাসেই বদলেছে গোটা চিত্র ৷ লকডাউনের সময় বন্ধ রাখা হয়েছিল রাজ্য সরকারের অফিস কাছারি ৷ শেষের দিকে অফিস খোলার কথা সরকারের তরফে জানানো হলেই শুরু হয় বিপত্তি ৷ ট্রেন, মেট্রো পরিষেবা বন্ধ থাকায় বা রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বাস না থাকার কারণে হয়রানির মুখে পড়তে হয় কর্মীদের ৷ কর্মচারী সংগঠনগুলির অভিযোগ, ইচ্ছে থাকলেও নিয়মিত কাজে যোগ দিতে পারছেন না বহু কর্মী ৷
BJP-র সরকারি কর্মচারী সংগঠনের আহ্বায়ক দেবাশিস শীল বলেন, "কোনও কোনও দপ্তর রোটেশন চার্ট দিয়ে কর্মীদের জানিয়ে দিচ্ছে ৷ যাঁরা পারছেন ঝুঁকি নিয়ে আসছেন ৷ সরকার যেভাবে হাজিরায় কড়াকড়ি করেছিল, সেভাবে কর্মীরা আসছে না ৷ মাঝে মধ্যেই বলছে কড়া ব্যবস্থা নেবে ৷ কিন্তু, যারা বলছে তারাই কোরোনায় আক্রান্ত হচ্ছে ৷ বাস অপ্রতুল ৷ আর কোনও মাধ্যম নেই ৷ তাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করলেই বেশি কাজ হবে ৷"
কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়ের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, "যেভাবে কোরোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে ভয়েই রয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে সরকারি কর্মচারীরা । রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কীভাবে অফিসে আসবে ? এই যে বাদুড় ঝোলা বাসে চেপে সকলে আসছে ৷ এতে কোরোনা সংক্রমণ বাড়ছে । স্বাস্থ্য ভবনের কর্মচারীদের কোরোনা হওয়াই সরকারি কর্মচারীদের ভয় আরও বেড়েছে । মুখ্যমন্ত্রী 70 শতাংশ কর্মীর উপস্থিতির কথা বলেছেন । কিন্তু হলপ করে বলতে পারি 70 শতাংশ কর্মীর উপস্থিতি থাকছে না । সরকারি কর্মচারীদের বাড়ি থেকে কাজ করানোর কোনও পরিকাঠামো নেই । যারা সাধারণ মানুষের পরিষেবা দেয় তারা যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে কী করে হবে । সরকারকে এ বিষয়ে দেখতে হবে । সরকারকে মানবিক হতে হবে ।"
রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের কোর কমিটির সদস্য বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, "রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা যথাসাধ্য পরিষেবা দিয়ে তাদের দ্বায়িত্ব বোধের পরিচয় দিয়েছেন । বিশেষ করে কোরোনা প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত দপ্তরগুলো । অফিসে যাওয়া আসায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা । ট্রেন চলছে না । মেট্রো পরিষেবা নেই । বাস খুব সীমিত । কেউ বাধ্য হয়ে আসছেন । কেউ স্বেচ্ছায় আসছেন । বিভিন্ন দপ্তরে আপাতভাবে উপস্থিত কম । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কর্মচারীদের প্রতি মানবিক দৃষ্টি দেওয়ার কারণে সমস্ত দপ্তর নাগরিক পরিষেবা দিয়ে চলেছে ।"