কলকাতা, 8 মার্চ : আজ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজগুলিতে শুরু হয়েছে স্নাতকের বিজোড় সেমেস্টারগুলির পরীক্ষা । করোনা আবহে এবারও অনলাইন মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে । আর পরীক্ষা শুরুর দিনেই অ্যাডমিটের অভাবে অধীনস্থ কয়েকটি কলেজের কয়েকজন পড়ুয়া দিতে পারলেন না পরীক্ষা । জানা গেছে, সুরেন্দ্রনাথ সান্ধ্য কলেজ, নেতাজি নগর কলেজ ফর উইমেন্সের মতো বেশ কয়েকটি কলেজের পড়ুয়ারা আজ এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন ।
নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, আজ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজগুলিতে বি.এ, বি.এস.সি ও বি.কম-এর বিজোড় সেমেস্টার তথা প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম সেমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়েছে । আর আজই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কয়েকটি কলেজের পড়ুয়ারা এসে জমায়েত করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের সামনে । তাঁদের মধ্যে সুরেন্দ্রনাথ সান্ধ্য কলেজ, নেতাজি নগর কলেজ ফর উইমেন্স সহ আরও কয়েকটি কলেজের তৃতীয় ও পঞ্চম সেমেস্টারের পড়ুয়ারা ছিলেন । আজ থেকে পরীক্ষা শুরু হলেও অ্যাডমিট কার্ডের অভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি বলে জানান তাঁরা । অ্যাডমিট কার্ডের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান বলেও জানা গেছে । কিন্তু, তাতে বিশেষ লাভ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ফিরে যান ওই ছাত্র-ছাত্রীরা ।
আবার দুপুর দুটো থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল নেতাজি নগর কলেজ ফর উইমেন্সের এক ছাত্রীর । কলেজের তরফে ওই ছাত্রীকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হলে দুপুর দুটো নাগাদ কলেজ স্ক্যয়ারে বসেই তাঁকে পরীক্ষা দিতে দেখা যায় । অন্যদিকে, সুরেন্দ্রনাথ সান্ধ্য কলেজের 14 জন পড়ুয়া এবারের মতো পরীক্ষার বসার সুযোগ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে ।
সুরেন্দ্রনাথ সান্ধ্য কলেজের অধ্যক্ষ জাফর আলি আখান বলেন, "অনলাইন ফর্ম ফিলাপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় দুটো সময়সীমা দিয়েছিল । তারমধ্যে শেষ সময়সীমা ছিল 1 মার্চ । ওইদিনের মধ্যে হয় তাঁরা কলেজে যোগাযোগ করেনি বা অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করেনি । এর ফলে ওরা পরীক্ষায় বসতে পারছে না । যে পরীক্ষায় বসতে পারছে না সেটা আজ থেকে শুরু হয়েছে । যদিও ওই পড়ুয়াদের যুক্তি, আজ থেকে অনার্সের পরীক্ষা শুরু হয়েছে । আমরা জেনারেলের পড়ুয়া । জেনারেলের পরীক্ষা আর কয়েকদিন পরে শুরু হবে । যদি বিশ্ববিদ্যালয় কয়েক ঘণ্টার জন্যও পরীক্ষার পোর্টালটা খুলে দেয় তাহলেই আমরা এন্ট্রি করতে পারব । তা নাহলে সেটা সম্ভব নয় ।" অধ্যক্ষ জানাচ্ছেন, তিনি নিজে পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরেও যোগাযোগ করেছিলেন । কিন্তু, তাঁকে পরীক্ষা নিয়ামকের দফতর থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, যেহেতু পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে তাই আর পোর্টাল খোলা সম্ভব নয় ।
জাফর আলি আখান বলেন, "ওরা আপাতত সুযোগ পাচ্ছে না । আমার কাছে আবেদন আছে । আমি নিজে পরীক্ষা নিয়ামকের অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম । আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেও গিয়েছিলাম । কিন্তু, কিছু করা গেল না । তৃতীয় ও পঞ্চম সেমেস্টার মিলিয়ে 14 জন আমার কাছে আবেদন করেছে । বিশ্ববিদ্যালয় যদি পোর্টাল না খোলে তাহলে ওদের সমস্যাটা সমাধান হতে পারে । নাহলে হবে না ।"
আরও পড়ুন : পরীক্ষার দাবিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান-বিক্ষোভে পড়ুয়ারা
অ্যাডমিট কার্ডের এই সমস্যা নিয়ে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিটির ফাউন্ডার কনভেনার অনিক দে বলেন, "পরীক্ষা শুরুর দিনেই ছাত্র-ছাত্রীরা চূড়ান্ত সমস্যার সম্মুখীন হল । নেতাজি নগর গার্লস কলেজ ও সুরেন্দ্রনাথ কলেজ সহ বেশকিছু কলেজের বহু ছাত্র-ছাত্রী তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয় । বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সঙ্গে সহযোগিতা না করায় তাঁরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন । এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কলেজ স্কোয়ারে বসে তাঁরা পরীক্ষাও দিয়েছে । পরীক্ষা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের চূড়ান্ত গাফিলতির ফলে তাঁরা তাঁদের রোল নং পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারল না । এর ফলে তাঁরা পরীক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় গণ্য হবে না । এতো বড় একটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার দাবি, রেজাল্টের দাবি, রেজাল্ট সংশোধন সহ একাধিক দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন । এর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ও কলেজগুলির চরম অবস্থার চিত্র ফুটে ওঠে । এভাবে বারবার শত শত ছাত্র-ছাত্রীকে হতাশার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে । এর দায় কে নেবে ?"
