কলকাতা, 8 নভেম্বর : চলে গেলেন মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব অঞ্জন মিত্র। আজ ভোররাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি ৷
পঁচিশ বছর তিনি সবুজ মেরুনের সচিবের দায়িত্ব সামলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন ৷ আজ ভোররাত 3টা 10 মিনিটে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রয়াত সচিব ধীরেন দে যদি সবুজ মেরুন আভিজাত্যের নাম হন তাহলে অঞ্জন মিত্র ছিলেন সাপোটার্স সচিব। আটের দশকের শেষভাগে মোহনবাগানের প্রশাসনে এসেছিলেন। প্রথমে অর্থ সচিব, তারপর সচিব। তাঁর এবং টুটু বসুর যুগলবন্দী মোহনবাগান ক্লাব প্রাশসনিক কর্মকাণ্ডে রেভোলিউশন এনেছিল। তাঁদের উদ্যোগে নিয়ম বদলে বিদেশি ফুটবলার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ক্লাব। যার প্রথম রিক্রুট চিমা ওকোরি। পঁচিশ বছরের সচিব মেয়াদকালে মোহনবাগান চারবার আই লিগ জিতেছে।
অঞ্জন ও টুটুর হাতেই ছিল মোহনবাগানের প্রশাসনিক চালিকা শক্তি। সবুজ মেরুন জার্সিতে বিদেশি ফুটবলার খেলানো যদি অঞ্জন মিত্রের প্রশাসনিক জীবনের প্রথম ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হয় তাহলে মোহনবাগান রত্ন প্রদান আরও একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। 1911 সালে মোহনবাগানের প্রথম IFA শিল্ড জয়েয় স্মরণে এই পুরস্কার চালু করেছিলেন তিনি। তাঁর আমলে মোহনবাগানে স্পনসর আসে। ক্লাবের অর্থনৈতিক অবস্থার হাল ফেরাতে হার্ড টাস্ক মাস্টার ছিলেন তিনি। তবে একাধিক অপ্রিয় এবং বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছিল এই সময়ে। নিয়মিত কোচ বিতাড়ন এবং তা ঘিরে টানাপোড়েন মানুষটির প্রশাসক পরিচয়ের অন্যতম বিতর্কিত দিক ছিল। ফুটবল খেলাকে ভালোবাসতেন। তাই ময়দানের ঘেরা মাঠ থেকে ক্রিকেট ম্যাচ না হওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আস্ট্রোটার্ফ ছাড়া হকি হয় না বলে মোহনবাগানের হকি তুলে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
এই সবকিছুর মাঝে গোষ্টপালকে দেওয়া পদক হারিয়ে ফেলার বিতর্কও রয়েছে অঞ্জন মিত্রের নামে। তবে প্রশাসকের চেয়ারের শেষ কয়েকটি বছর মোটেই মসৃণ ছিল না। অভিন্ন হৃদয় বন্ধু টুটু বসুর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ৷ পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান অঞ্জন ৷ প্রস্থানটাও সসম্মানের হয়নি। গতবছর মোহনবাগানের নির্বাচনে বন্ধু টুটু বসুর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে ক্লাবে আর দেখা যায়নি। অঞ্জন মিত্রের প্রয়াণ এক অধ্যায়ের ইতি।
সকাল 8টা 30 মিনিট নাগাদ হাসপাতাল থেকে ট্যাংরার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর মরদেহ । সকাল 9টা থেকে 11টা পর্যন্ত নিজের বাড়িতেই রাখা হবে । পরে বেলা 12 টা নাগাদ মোহনবাগান ক্লাবে আনা হবে মরদেহ । বিকেল 3টা 30 নাগাদ কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে ।