ETV Bharat / state

মল্লিক বাজারে এশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাস চুল্লি নিয়ে এবার তথ্যচিত্র, হচ্ছে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো

Documentary on Asia's oldest gas furnace in Kolkata: মল্লিক বাজারে এশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাস চুল্লি নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি হচ্ছে ৷ দর্শক আকর্ষণের জন্য হবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো ৷

Gas crematorium
এশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাস চুল্লি নিয়ে এবার তথ্যচিত্র
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 8, 2023, 7:44 PM IST

Updated : Dec 8, 2023, 7:53 PM IST

এশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাস চুল্লি নিয়ে এবার তথ্যচিত্র

কলকাতা, 8 ডিসেম্বর: কলকাতার মল্লিক বাজার মোড়ে লোয়ার সার্কুলার কবরস্থানের পিছনের অংশে পরিত্যক্ত অবস্থায় এখনও আছে এশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাস চুল্লি । ঘরটি জরাজীর্ণ হলেও আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে । লন্ডনের ভিলেজ চার্চের আদলে এটি তৈরি হয়েছিল । ফরাসি সংস্থা এই চুল্লি নির্মাণ করে । আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, সুখলতা রাও, নেলি সেনগুপ্তদের এখানেই দাহ করা হয়েছে । এখানে একাধিকবার পরিচিতদের দাহ কাজে উপস্থিত হন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । অবিভক্ত ভারতে, ইউরোপের বহু বড় ব্যবসায়ী থেকে বিশিষ্ট মানুষকে এখানে সৎকার করা হয়েছে ।

ইতিহাসের ভান্ডার এই গ্যাস চুল্লি । এ বার তাকে সংস্কার করে তথ্যচিত্র ও লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো করার প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছে খ্রিস্টান বেরিয়াল বোর্ড । এই চুল্লির সঙ্গেই অদূরে থাকা সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিকে নিয়েই কাজ হবে । তৎকালীন ইতিহাস তথ্যচিত্র ও লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানান বোর্ডের সাম্মানিক সদস্য রণজয় বসু ।

বিধান রায়ের আমলে গ্যাসের সমস্যার জন্য বন্ধ হয়েছে চুল্লি । তারপর থেকেই পড়ে আছে । বাম আমলে অনেকেই চেয়েছিলেন চুল্লির আশপাশের বিরাট ফাঁকা জমিতে হোক অবৈতনিক বিদ্যালয় । তেমনই তৃণমূল আমলে সেখানে প্রাথমিক হাসপাতাল করার পরিকল্পনা করেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর । তবে কেউই এই চুল্লি রক্ষায় সদর্থক ভূমিকা নেয়নি । এখন এই চুল্লি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালাচ্ছে ।

এক সময় কবরস্থানের জায়গায় অভাব, মহামারি এ সব কারণে এই চুল্লি তৈরি করে ব্রিটিশ শাসক । ব্রহ্মসমাজের অনেককেই এখানে দাহ করা হয় । বহু খ্রিস্ট ধর্মের মানুষও তাঁদের পরিজনদের দেহ দাহ করে সেই ছাই কবরে চাপ দিত, তাতে জায়গা কম লাগত । সেই সময় বিদ্যুৎ আসেনি । গ্যাস বাতি ছিল ভরসা । ফরাসি কোম্পানি এই গ্যাস চুল্লি নির্মাণ করে । রাজাবাজার এলাকা থেকেই বায়োগ্যাস আসত লাইন মারফত এই চুল্লিতে । সেখানে উৎপাদন বন্ধ হয় ।

এর পর স্বাধীন ভারতে বিধান রায়ের সরকারের সময় মাটির নিচে লাইন করে গ্যাস আনা হয় । তবে মাঝে মধ্যেই পরিষেবায় ছেদ পড়ে । ফলে সঠিক ভাবে দাহ কাজ হত না । সমস্যার জেরে বন্ধ হয় দাহ কাজ । পরে ডানকুনি থেকে গ্যাসে লাইন করার কথা হলেও আর হয়নি । ফলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এই চুল্লি । রাতবিরেতে টুকটাক লোহা চুরি হচ্ছে । বয়সের চাপে দেওয়ালে ফাটল । গজিয়েছে বিরাট বিরাট গাছ । চিনে যখন লং মার্চ হয়, বহু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ পালিয়ে এ দেশে এসেছিলেন । ট্যাংরা এলাকায় বসবাস করেন তাঁরা । তাঁদের শেষকৃত্যও এখানে হত একসময়ে ।

গোপালকৃষ্ণ গান্ধি রাজ্যপাল থাকাকালীন একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন । পর্যটন ফতরের সঙ্গে কথা খানিকটা এগিয়েছিল । তবে শেষমেষ বাস্তবায়িত হয়নি । খ্রিষ্টান বেরিয়াল বোর্ডের সাম্মানিক সদস্য রণজয় বসু বলেন, "ইতিহাসের ভান্ডার বলা চলে এই গ্যাস চুল্লি ও লোয়ার সার্কুলার আর সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রি । সেই ইতিহাসকে সহজ ভাবে তুলে ধরা, রহস্য রোমাঞ্চের আদলে যাতে দর্শক আকর্ষণ করা যায় সেই পরিকল্পনা অনেকটা এগিয়েছে । সম্প্রতি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা এই গ্যাস চুল্লি ভবনটি সংস্কার করব । আশপাশের ফাঁকা জমি পরিষ্কার করে বাগান ও তথ্য চিত্র ও লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো করার পরিকাঠামো করব । কিন্তু এটা বড় খরচ । তাই চাইছিলাম কোনও বড় কোম্পানি যদি সিএসআর টাকা দিয়ে সাহায্য করে । সংস্কারের কাজ, তথ্যচিত্র, লাইট অ্যান্ড সাউন্ড নিয়ে সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড আর্কিওলজি ম্যানেজমেন্ট ও রিচ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কথা এগিয়েছে ।সরকারি অনুমতি নেওয়ার বিষয় আছে । এই কাজ বাস্তবায়িত হলে নজির তৈরি হবে । ভারতের বুকে কোনও কবরস্থান ও গ্যাস চুল্লি নিয়ে এই প্রথম তথ্যচিত্র হবে । পেশাগত ইতিহাসবিদ, স্ক্রিপ্ট রাইটারের সঙ্গে কথা চলছে ।"

উল্লেখ্য, স্যার লুইস ভিভিয়ান ডিরোজিও, উইলিয়াম জোন্স-সহ বহু প্রসিদ্ধ মানুষের কবর আছে সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতে ।

আরও পড়ুন:

  1. বিকল চুল্লি, কোভিড দেহ সৎকারে কাঠই ভরসা বাঁকুড়ার
  2. করোনা মৃতদের দাহ করতে কালিম্পংয়ে বৈদ্যুতিক চুল্লি চালু রাজ্য সরকারের
  3. বর্ধমানের নির্মলঝিল শ্মশানে খারাপ গ্যাস চুল্লি, ভোগান্তি মৃতের পরিবারের

এশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাস চুল্লি নিয়ে এবার তথ্যচিত্র

কলকাতা, 8 ডিসেম্বর: কলকাতার মল্লিক বাজার মোড়ে লোয়ার সার্কুলার কবরস্থানের পিছনের অংশে পরিত্যক্ত অবস্থায় এখনও আছে এশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাস চুল্লি । ঘরটি জরাজীর্ণ হলেও আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে । লন্ডনের ভিলেজ চার্চের আদলে এটি তৈরি হয়েছিল । ফরাসি সংস্থা এই চুল্লি নির্মাণ করে । আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, সুখলতা রাও, নেলি সেনগুপ্তদের এখানেই দাহ করা হয়েছে । এখানে একাধিকবার পরিচিতদের দাহ কাজে উপস্থিত হন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । অবিভক্ত ভারতে, ইউরোপের বহু বড় ব্যবসায়ী থেকে বিশিষ্ট মানুষকে এখানে সৎকার করা হয়েছে ।

ইতিহাসের ভান্ডার এই গ্যাস চুল্লি । এ বার তাকে সংস্কার করে তথ্যচিত্র ও লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো করার প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছে খ্রিস্টান বেরিয়াল বোর্ড । এই চুল্লির সঙ্গেই অদূরে থাকা সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিকে নিয়েই কাজ হবে । তৎকালীন ইতিহাস তথ্যচিত্র ও লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানান বোর্ডের সাম্মানিক সদস্য রণজয় বসু ।

বিধান রায়ের আমলে গ্যাসের সমস্যার জন্য বন্ধ হয়েছে চুল্লি । তারপর থেকেই পড়ে আছে । বাম আমলে অনেকেই চেয়েছিলেন চুল্লির আশপাশের বিরাট ফাঁকা জমিতে হোক অবৈতনিক বিদ্যালয় । তেমনই তৃণমূল আমলে সেখানে প্রাথমিক হাসপাতাল করার পরিকল্পনা করেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর । তবে কেউই এই চুল্লি রক্ষায় সদর্থক ভূমিকা নেয়নি । এখন এই চুল্লি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালাচ্ছে ।

এক সময় কবরস্থানের জায়গায় অভাব, মহামারি এ সব কারণে এই চুল্লি তৈরি করে ব্রিটিশ শাসক । ব্রহ্মসমাজের অনেককেই এখানে দাহ করা হয় । বহু খ্রিস্ট ধর্মের মানুষও তাঁদের পরিজনদের দেহ দাহ করে সেই ছাই কবরে চাপ দিত, তাতে জায়গা কম লাগত । সেই সময় বিদ্যুৎ আসেনি । গ্যাস বাতি ছিল ভরসা । ফরাসি কোম্পানি এই গ্যাস চুল্লি নির্মাণ করে । রাজাবাজার এলাকা থেকেই বায়োগ্যাস আসত লাইন মারফত এই চুল্লিতে । সেখানে উৎপাদন বন্ধ হয় ।

এর পর স্বাধীন ভারতে বিধান রায়ের সরকারের সময় মাটির নিচে লাইন করে গ্যাস আনা হয় । তবে মাঝে মধ্যেই পরিষেবায় ছেদ পড়ে । ফলে সঠিক ভাবে দাহ কাজ হত না । সমস্যার জেরে বন্ধ হয় দাহ কাজ । পরে ডানকুনি থেকে গ্যাসে লাইন করার কথা হলেও আর হয়নি । ফলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এই চুল্লি । রাতবিরেতে টুকটাক লোহা চুরি হচ্ছে । বয়সের চাপে দেওয়ালে ফাটল । গজিয়েছে বিরাট বিরাট গাছ । চিনে যখন লং মার্চ হয়, বহু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ পালিয়ে এ দেশে এসেছিলেন । ট্যাংরা এলাকায় বসবাস করেন তাঁরা । তাঁদের শেষকৃত্যও এখানে হত একসময়ে ।

গোপালকৃষ্ণ গান্ধি রাজ্যপাল থাকাকালীন একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন । পর্যটন ফতরের সঙ্গে কথা খানিকটা এগিয়েছিল । তবে শেষমেষ বাস্তবায়িত হয়নি । খ্রিষ্টান বেরিয়াল বোর্ডের সাম্মানিক সদস্য রণজয় বসু বলেন, "ইতিহাসের ভান্ডার বলা চলে এই গ্যাস চুল্লি ও লোয়ার সার্কুলার আর সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রি । সেই ইতিহাসকে সহজ ভাবে তুলে ধরা, রহস্য রোমাঞ্চের আদলে যাতে দর্শক আকর্ষণ করা যায় সেই পরিকল্পনা অনেকটা এগিয়েছে । সম্প্রতি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা এই গ্যাস চুল্লি ভবনটি সংস্কার করব । আশপাশের ফাঁকা জমি পরিষ্কার করে বাগান ও তথ্য চিত্র ও লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো করার পরিকাঠামো করব । কিন্তু এটা বড় খরচ । তাই চাইছিলাম কোনও বড় কোম্পানি যদি সিএসআর টাকা দিয়ে সাহায্য করে । সংস্কারের কাজ, তথ্যচিত্র, লাইট অ্যান্ড সাউন্ড নিয়ে সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড আর্কিওলজি ম্যানেজমেন্ট ও রিচ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কথা এগিয়েছে ।সরকারি অনুমতি নেওয়ার বিষয় আছে । এই কাজ বাস্তবায়িত হলে নজির তৈরি হবে । ভারতের বুকে কোনও কবরস্থান ও গ্যাস চুল্লি নিয়ে এই প্রথম তথ্যচিত্র হবে । পেশাগত ইতিহাসবিদ, স্ক্রিপ্ট রাইটারের সঙ্গে কথা চলছে ।"

উল্লেখ্য, স্যার লুইস ভিভিয়ান ডিরোজিও, উইলিয়াম জোন্স-সহ বহু প্রসিদ্ধ মানুষের কবর আছে সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতে ।

আরও পড়ুন:

  1. বিকল চুল্লি, কোভিড দেহ সৎকারে কাঠই ভরসা বাঁকুড়ার
  2. করোনা মৃতদের দাহ করতে কালিম্পংয়ে বৈদ্যুতিক চুল্লি চালু রাজ্য সরকারের
  3. বর্ধমানের নির্মলঝিল শ্মশানে খারাপ গ্যাস চুল্লি, ভোগান্তি মৃতের পরিবারের
Last Updated : Dec 8, 2023, 7:53 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.