ETV Bharat / state

শিশুশ্রম, শিক্ষা এবং পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ইউনিসেফ ও রোটারি ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে আলোচনাসভা শহরে - রোটারি ইন্টারন্যাশনাল

UNICEF Programme: শিশুশ্রম, শিক্ষা এবং পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কলকাতায় আলোচনাসভার আয়োজন ইউনিসেফ ও রোটারি ইন্টারন্যাশনালের ৷

ETV Bharat
ফাইল ছবি
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 24, 2023, 10:46 PM IST

কলকাতা, 24 নভেম্বর: শিশুশ্রম, শিক্ষা এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, বর্তমান সময়ে এই তিনটি বিষয় অন্যতম আলোচ্য এই সমাজে ৷ শিশুশ্রম ও ছোচটদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও ৷ ইউনিসেফ এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত একটি অনলাইন আলোচনায় শুক্রবার এই বিষয়গুলিই উঠে আসে ৷ সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের শিশুদের প্রতি কীভাবে যত্ন নেওয়া উচিত সেই বিষয়টিও এদিনের আলোচনায় উঠে আসে ৷

এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী চিরাগ তুলসিয়ান নামে এমসি কেজরিওয়াল বিদ্যাপীঠের এক পড়ুয়া জানায়, শিশুশ্রম বালক ও বালিকাদের জীবনে অনেক ক্ষেত্রে অভিশাপ নিয়ে আসে ৷ তাই এই বালক-বালিকাদের জীবনে আলো দেখানোর জন্য সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করে এই ছাত্র ৷ তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে চিরাগ জানায়, একবার তাদের গ্রামে গিয়ে সে দেখে সেখানকার বেশকিছু নাবালক, নাবালিকা অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছিল । তাদের দারিদ্রতার কারণ ছিল অনাবৃষ্টি এবং অসময়ের বৃষ্টিপাত । এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, ফলে অর্থ রোজগারের জন্য অভিভাবকরা ওই বাচ্চাদের কাজ করতে পাঠায়, স্কুলে না পাঠিয়ে ৷ চিরাগ জানিয়েছে, গ্রামে একমাস থাকার সময় সে একটি বাচ্চাকে পড়ানো শুরু করে এবং দেখে ধীরে ধীরে আরও অনেক বাচ্চা তার সঙ্গে যোগ দিচ্ছে । চিরাগের কথায়,"আমি প্রথমেই তাদের বৃষ্টির জল সংরক্ষণের বিষয়ে পড়াই। এতে তারা অসময়ে বৃষ্টির কবলে পরে কষ্ট পাওয়ার বদলে তা থেকে কীভাবে লাভবান হতে পারবে সেটা শেখে ৷ " ওই বাচ্চাদের অভিভাবকদেরও বিষয়টি পছন্দ হয় ৷ এর কিছুদিন পর হঠাৎ অসময়ে বৃষ্টি হলে এমসি কেজরিওয়াল বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রটি তার প্রচেষ্টার ফল দেখতে পায় । বাচ্চারা ওই বৃষ্টির জলকেই তাদের কাজে লাগায় ৷

আর এক ছাত্রী তপস্যা জৈন সকলকে মনে করিয়ে দেয় যে, শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সম্পত্তি নয়। তাঁর কথায়, "আমার অনুরোধ আপনারা সকলে বুঝুন যে তারাও মানুষ এবং এই বয়সটা তাদের উপার্জন করার সময় নয় । শিশু শ্রম তাদের বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতনের শিকার করে তোলে । এতে তাদের পড়াশুনার দফারফা হয়ে যায় ৷" নিজের হাতে তৈরি 'স্টপ চাইল্ড লেবার' লেখা একটি পোস্টার ক্যামেরার সামনে তুলে ধরে হরিয়ানা বিদ্যামন্দিরের এই ছাত্রীটি।

চিরাগের উদ্যোগ শুনে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের (WBCPCR) চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করেন, তাদের বাড়িতে যারা কাজ করেন তাদের বাচ্চাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য । তিনি বলেন, "রান্নার লোক, বাড়ির কাজের লোক অথবা গাড়িচালকের ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী । এদেরকে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলো প্রয়োজন ৷"এছাড়াও, ছাত্রছাত্রীরা যে এখন যথেষ্ট মানসিক চাপের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে তা নিয়েও অনেক বক্তা ও পড়ুয়া এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেন । কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার ক্রমবর্ধমান হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ৷ ডিপিএস মেগাসিটি স্কুলের বঞ্ছিত আগরওয়াল বলে, জীবনে বেড়ে ওঠার সময় হতাশা যেন কারও সামনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হতে এবং প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ করে সে ৷

রোটারি এবং ইউনিসেফ এই লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করবে বলে ঘোষণা করন পশ্চিমবঙ্গের ইউনিসেফের ভারপ্রাপ্ত প্রধান অমিত মেহরোত্রা ৷ তিনি বলেন,"সরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি ইউনিসেফ বঞ্চিতদের কাছে পৌঁছনোর জন্য অন্য অনেক সংস্থার সঙ্গেও কাজ করার চেষ্টা করছে। শিশুদের আরও উন্নতির জন্য তাদের মতামত নেওয়া জরুরি।"

অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা ইউনিসেফের কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ সুচরিতা বর্ধন জানান, শিশুবিকাশের জন্য নীতি প্রণয়ন এবং তাদের নিয়ে আলোচনার সময় শিশুদের মতামতের গুরুত্ব অপরিসীম। আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক জয়ন্ত বসু বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও সুন্দরবনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী মানুষের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে শিশু অধিকার আয়োগের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তীও উপস্থিত ছিলেন। রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমানে এই সংস্থার ইন্ডিয়া লিটারেসি মিশনের মুখ্য উপদেষ্টা শেখর মেহতা জানান, শিশুরা তাদের যেসব বিষয় নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন সেইগুলি নিয়েই বিভিন্ন কাজ করবে ইউনিসেফ এবং রোটারি ।

আরও পড়ুন:

  1. একই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফের ভুল ইঞ্জেকশন! দেড় মাসের শিশুর মৃত্যুতে ইনচার্জকে তালাবন্দি স্থানীয়দের
  2. পুরানো সেই দিনের কথা, জাপানি শিল্পীর পিয়ানো শুনে মুগ্ধ শান্তিনিকেতন

কলকাতা, 24 নভেম্বর: শিশুশ্রম, শিক্ষা এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, বর্তমান সময়ে এই তিনটি বিষয় অন্যতম আলোচ্য এই সমাজে ৷ শিশুশ্রম ও ছোচটদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও ৷ ইউনিসেফ এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত একটি অনলাইন আলোচনায় শুক্রবার এই বিষয়গুলিই উঠে আসে ৷ সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের শিশুদের প্রতি কীভাবে যত্ন নেওয়া উচিত সেই বিষয়টিও এদিনের আলোচনায় উঠে আসে ৷

এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী চিরাগ তুলসিয়ান নামে এমসি কেজরিওয়াল বিদ্যাপীঠের এক পড়ুয়া জানায়, শিশুশ্রম বালক ও বালিকাদের জীবনে অনেক ক্ষেত্রে অভিশাপ নিয়ে আসে ৷ তাই এই বালক-বালিকাদের জীবনে আলো দেখানোর জন্য সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করে এই ছাত্র ৷ তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে চিরাগ জানায়, একবার তাদের গ্রামে গিয়ে সে দেখে সেখানকার বেশকিছু নাবালক, নাবালিকা অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছিল । তাদের দারিদ্রতার কারণ ছিল অনাবৃষ্টি এবং অসময়ের বৃষ্টিপাত । এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, ফলে অর্থ রোজগারের জন্য অভিভাবকরা ওই বাচ্চাদের কাজ করতে পাঠায়, স্কুলে না পাঠিয়ে ৷ চিরাগ জানিয়েছে, গ্রামে একমাস থাকার সময় সে একটি বাচ্চাকে পড়ানো শুরু করে এবং দেখে ধীরে ধীরে আরও অনেক বাচ্চা তার সঙ্গে যোগ দিচ্ছে । চিরাগের কথায়,"আমি প্রথমেই তাদের বৃষ্টির জল সংরক্ষণের বিষয়ে পড়াই। এতে তারা অসময়ে বৃষ্টির কবলে পরে কষ্ট পাওয়ার বদলে তা থেকে কীভাবে লাভবান হতে পারবে সেটা শেখে ৷ " ওই বাচ্চাদের অভিভাবকদেরও বিষয়টি পছন্দ হয় ৷ এর কিছুদিন পর হঠাৎ অসময়ে বৃষ্টি হলে এমসি কেজরিওয়াল বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রটি তার প্রচেষ্টার ফল দেখতে পায় । বাচ্চারা ওই বৃষ্টির জলকেই তাদের কাজে লাগায় ৷

আর এক ছাত্রী তপস্যা জৈন সকলকে মনে করিয়ে দেয় যে, শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সম্পত্তি নয়। তাঁর কথায়, "আমার অনুরোধ আপনারা সকলে বুঝুন যে তারাও মানুষ এবং এই বয়সটা তাদের উপার্জন করার সময় নয় । শিশু শ্রম তাদের বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতনের শিকার করে তোলে । এতে তাদের পড়াশুনার দফারফা হয়ে যায় ৷" নিজের হাতে তৈরি 'স্টপ চাইল্ড লেবার' লেখা একটি পোস্টার ক্যামেরার সামনে তুলে ধরে হরিয়ানা বিদ্যামন্দিরের এই ছাত্রীটি।

চিরাগের উদ্যোগ শুনে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের (WBCPCR) চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করেন, তাদের বাড়িতে যারা কাজ করেন তাদের বাচ্চাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য । তিনি বলেন, "রান্নার লোক, বাড়ির কাজের লোক অথবা গাড়িচালকের ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী । এদেরকে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলো প্রয়োজন ৷"এছাড়াও, ছাত্রছাত্রীরা যে এখন যথেষ্ট মানসিক চাপের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে তা নিয়েও অনেক বক্তা ও পড়ুয়া এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেন । কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার ক্রমবর্ধমান হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ৷ ডিপিএস মেগাসিটি স্কুলের বঞ্ছিত আগরওয়াল বলে, জীবনে বেড়ে ওঠার সময় হতাশা যেন কারও সামনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হতে এবং প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ করে সে ৷

রোটারি এবং ইউনিসেফ এই লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করবে বলে ঘোষণা করন পশ্চিমবঙ্গের ইউনিসেফের ভারপ্রাপ্ত প্রধান অমিত মেহরোত্রা ৷ তিনি বলেন,"সরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি ইউনিসেফ বঞ্চিতদের কাছে পৌঁছনোর জন্য অন্য অনেক সংস্থার সঙ্গেও কাজ করার চেষ্টা করছে। শিশুদের আরও উন্নতির জন্য তাদের মতামত নেওয়া জরুরি।"

অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা ইউনিসেফের কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ সুচরিতা বর্ধন জানান, শিশুবিকাশের জন্য নীতি প্রণয়ন এবং তাদের নিয়ে আলোচনার সময় শিশুদের মতামতের গুরুত্ব অপরিসীম। আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক জয়ন্ত বসু বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও সুন্দরবনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী মানুষের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে শিশু অধিকার আয়োগের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তীও উপস্থিত ছিলেন। রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমানে এই সংস্থার ইন্ডিয়া লিটারেসি মিশনের মুখ্য উপদেষ্টা শেখর মেহতা জানান, শিশুরা তাদের যেসব বিষয় নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন সেইগুলি নিয়েই বিভিন্ন কাজ করবে ইউনিসেফ এবং রোটারি ।

আরও পড়ুন:

  1. একই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফের ভুল ইঞ্জেকশন! দেড় মাসের শিশুর মৃত্যুতে ইনচার্জকে তালাবন্দি স্থানীয়দের
  2. পুরানো সেই দিনের কথা, জাপানি শিল্পীর পিয়ানো শুনে মুগ্ধ শান্তিনিকেতন
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.