কলকাতা, 9 জুলাই : মোদি মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে যে মন্ত্রীরা বাংলা থেকে জায়গা পেলেন তাঁরা সকলেই 'হাফপ্যান্ট মন্ত্রী'। পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে কাউকে পায়নি বাংলা । বাবুল সুপ্রিয়র মত প্রাক্তন মন্ত্রীদের সাত বছরের অভিজ্ঞতার পরেও তাঁদের প্রমোশন তো হয়নি উল্টে ডিমোশন হয়েছে । তবে লাভের লাভ এটাই, বাংলা থেকে আগে ছিল দু'জন মন্ত্রী । বুধবার মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে 4। সুভাষ সরকার, শান্তনু ঠাকুর, জন বার্লা ও নিশীথ প্রামানিককে মন্ত্রী করা হলেও তাঁরা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বই পেয়েছেন । এই অবস্থায় রাজ্যের শাসকদল রাজ্য বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি । শুক্রবার তার পাল্টা হিসাবে মুখ খুললেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ । তাঁর প্রশ্ন, বাংলা থেকে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়নি বলে তৃণমূল কি এবার ধর্না দেবে ?
মোদি মন্ত্রিসভায় বাংলা থেকে সুযোগ পাওয়া চার প্রতিমন্ত্রী নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল, "4 জনই প্রতিমন্ত্রী । নামেই মন্ত্রী, তাঁদের কোনও কাজে অবশ্য লাগবে না ।" এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, "মোদিজি আছেন, তিনি সব ঠিকঠাক ভাবেই দেখছেন । আমাদের রাজ্য থেকে চারজন নতুন মন্ত্রী হয়েছেন । সংগঠনে নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমীদের সব সময় সামনের সারিতে জায়গা দেওয়া হয় । নতুন মন্ত্রিসভায় কেন বাংলা থেকে কাউকে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়নি, তা নিয়ে তৃণমূলের অনেক অভিযোগ । তাঁরা কি এবার এই বিষয়টি নিয়ে ধর্না দেবে ?"
উল্লেখ্য, এদিনও পূর্ণমন্ত্রী নিয়ে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে এমন দাবি তুলে বিজেপিকে খোঁচা দিতে সক্রিয় হয়েছেন রাজ্যসভার তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন। তাঁর দাবি, বিজেপি শাসিত রাজ্য হিসেবে গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বিহার যেখানে 4 জন করে পূর্ণমন্ত্রী পেয়েছে । সেখানে বিরোধী রাজ্য কেরালা, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গ এক জনও পূর্ণমন্ত্রী পায়নি । এর থেকেই বোঝা যায়, বিজেপি বাংলাকে কী চোখে দেখে ।
আরও পড়ুন, মতুয়া ভোটে কর্তৃত্বই কি শান্তনুর মন্ত্রিত্বের চাবিকাঠি ?
এদিকে এ বিষয়ে রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিজেপি কখনও বাংলার জন্য ভাবে না । নির্বাচনের সময় ওরা সোনার বাংলা গড়ার কথা বলেছিল । সেকথা কতটা সারবত্তাহীন তা বোঝা যায় বাংলা সম্পর্কে এহেন আচরণেই । তিনি বলেন, "সত্যি যদি বিজেপি বাংলার উন্নয়ন করতে চাইত, তাহলে অবশ্যই এ রাজ্যে একজন পূর্ণমন্ত্রী তো দিত । কিন্তু তারা সে কথা ভাবেনি । আমার মনে হয়, যে চারজনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে, তাও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত । উত্তরবঙ্গের ভাল চাইলে কেন চা-বাগান খোলা বিষয় নিয়ে ভাবছে না কেন্দ্র । কেন দিনের পর দিন দার্জিলিং থেকে সমতলের সংযোগকারী রাস্তা ভাঙা । আসলে ওরা জানে এই মুহূর্তে প্রতিমন্ত্রী না করা হলে ভাঙ্গন রোখা যাবে না । তাই ভাঙ্গন রুখতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি ।
এদিকে, বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা এ বিষয়ে বলেন, "মোদিজির কাছে বাংলা সমান গুরুত্বপূর্ণ । আর এ কারণেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজ্য থেকে মন্ত্রী করা হয়েছে । এ রাজ্যে সংখ্যালঘুরা ভোটে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন হয়নি । তাই সেখানেও বাংলা থেকে মন্ত্রী করা হয়েছে । এরপরেও যদি তৃণমূল বলে মোদিজি বাংলার কথা ভাবেননি তাহলে তা ভুল বলা হবে।
আরও পড়ুন, জঙ্গলমহল ফ্যাক্টরেই কি মোদির মন্ত্রী বঙ্গ-বিজেপির ডাক্তারবাবু ?
এদিকে, এই বিষয় নিয়ে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কে মন্ত্রী হলেন বা কতজন মন্ত্রী হলেন সেটা বড় কথা নয়, আদতে বাংলার উন্নয়ন হল কি না সেটা দেখার । এটা ঠিক প্রতিমন্ত্রীদের হাতে কোনও ক্ষমতা থাকে না । এই অবস্থায় তারা যদি সত্যি বাংলার উন্নয়ন করতে পারেন তাহলে সে তো ভাল কথা । আর যদি তা না সম্ভব হয়, তাহলে বাংলার উন্নয়নে একজন পূর্ণ মন্ত্রী থাকলে ভাল হত মানতেই হবে ।
যদিও তৃণমূলের এই খোঁচায় মাথা ঘামাতে নারাজ বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। দিলীপ ঘোষের কথায়, তারা চারজন প্রতিমন্ত্রী পেয়েই খুশি ।