কলকাতা, 18 জুন : COVID-19-এর প্রভাবে রাজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দাঁতের চিকিৎসা পরিষেবা। ব্যক্তিগত চেম্বারগুলিতে দাঁতের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার খরচও দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে । এই পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যের সাধারণ মানুষের সরকারি হাসপাতালে দাঁতের চিকিৎসা পরিষেবার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে । পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সব ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র , জেলা সদর হাসপাতাল এবং স্টেট জেনেরাল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দন্ত চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানান দন্ত চিকিৎসকরা । মুখ্যমন্ত্রীকে এই বিষয়ে চিঠিও পাঠান তাঁরা । পাশাপাশি দন্ত চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে COVID-19-এর চিকিৎসায় নিযুক্ত করার আর্জিও জানায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম ।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই চিঠি পাঠানো হয় । চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এই রাজ্যের মানুষের জন্য দাঁতের চিকিৎসা ব্যবস্থা যুক্ত চিকিৎসক, জুনিয়র ডাক্তার, ডেন্টাল পড়ুয়ারা সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বিপুল সমস্যায় রয়েছেন । গোটা রাজ্যে দাঁতের চিকিৎসা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে । সাধারণ মানুষ দাঁতের চিকিৎসার সামান্যতম পরিষেবা থেকে অধিকাংশ সময় বঞ্চিত হচ্ছেন । স্বাস্থ্যদপ্তর এবং ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশিকা মেনে COVID-19 পরিস্থিতিতে দাঁতের চিকিৎসা করা সব চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না । আগামী 2-3 বছরের মধ্যে সাধারণ মানুষের জন্য দাঁতের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া কতটা সম্ভব, তা নিয়ে এই দন্ত চিকিৎসকদের সন্দেহ রয়েছে ।
চিকিৎসকরা মনে করেন, সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য । কিন্তু সেই লক্ষ্য উপেক্ষিত হচ্ছে বলেই তাঁরা মনে করছেন বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে । কেন উপেক্ষিত হচ্ছে? মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, দন্ত চিকিৎসকের প্রাথমিক চেম্বারের প্রয়োজন । শুরুতে তার খরচ যথেষ্ট বেশি । কারণ, অনেক চিকিৎসা-যন্ত্র কিনতে হয় । নিয়মিত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য আরও অনেক সামগ্রীর প্রয়োজন । আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন । প্রয়োজন আরও বেশি অর্থ । এই পরিস্থিতিতে চেম্বার খরচ দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে । ফলে সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে । একদিকে লকডাউনের জন্য সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নিম্নমুখী, সেই সঙ্গে চিকিৎসার খরচ ঊর্ধ্বমুখী । এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । এইদিকে দন্ত চিকিৎসকদের অর্থনৈতিক অবস্থাও নিম্নমুখী ।
মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া এই চিঠিতে দাবি জানানো হয়েছে, সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার মাধ্যমে ন্যূনতম যে দাঁতের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব, তা অবিলম্বে সাধারণ মানুষকে দিতে হবে । তার জন্য সব চিকিৎসক, সরকারি কর্মীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা আপৎকালীন ভিত্তিতে সুনিশ্চিত করতে হবে । সরকারি স্তরে সাধারণ মানুষের কাছে আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা আরও ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে দুই জন করে দন্ত চিকিৎসক রাখতে হবে । পাশাপাশি জেলা হাসপাতালগুলিতে কমপক্ষে তিনজন করে ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ করতে হবে । আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে । সব শূন্যপদ এবং যে সব নতুন পদ তৈরি হবে, পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে তা অতি দ্রুত পূরণ করতে হবে ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডেন্টাল সার্ভিসে 2016-র পর থেকে কোনও নিয়োগ হয়নি । ওয়েস্ট বেঙ্গল ডেন্টাল কাউন্সিলে রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জন রয়েছেন 6500-র কাছাকাছি । এই সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে । অধিকাংশ সদ্য পাশ করা ডেন্টাল সার্জন বেকারত্বের সমস্যায় জর্জরিত । এই অবস্থায় ডেন্টাল সার্ভিসে অবিলম্বে কর্মসংস্থানের প্রয়োজন । সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজন অনুসারে জেলায় চুক্তির ভিত্তিতে দন্ত চিকিৎসক নিয়োগ করতে হবে । এই প্যানডেমিকে সাধারণ মানুষের স্বার্থে ডেন্টাল সার্জনদের COVID-19-এর চিকিৎসায় নিয়োগ করাও প্রয়োজন । এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে ।
শুধুমাত্র আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাদান করা হয় । বাকি সরকারি ডেন্টাল কলেজগুলিতে উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা শুরু করানোর বিষয়ে সরকারকে বিবেচনা করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে এই চিঠিতে ।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো এই চিঠিতে জানানো হয়েছে, দন্ত চিকিৎসকরা মুখের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তাই COVID-19-এ তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে । সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সব দন্ত চিকিৎসককে সরকারি স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । সব চিকিৎসকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে ।