ETV Bharat / state

শাসকদল পিএসি চেয়ারম্যান নিয়োগের নীতি মানে না, অভিযোগ বাম-কংগ্রেসের - আব্দুল মান্নান

সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বিরোধীদের দেওয়া হয় । পরিষদীয় রাজনীতিতে এটাই রীতি । তবে এর জন্য কোনও লিখিত নিয়ম নেই । অধ্যক্ষ চাইলেই অন্য কাউকে এই পদ দিতে পারেন । আইন অনুযায়ী, পিএসি-র চেযারম্যানের পদ বিরোধী দলকে দিতেই হবে— এমন কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই ।

সুজন চক্রবর্তী এবং আব্দুল মান্নান
সুজন চক্রবর্তী এবং আব্দুল মান্নান
author img

By

Published : Jun 22, 2021, 8:35 AM IST

Updated : Jun 22, 2021, 3:26 PM IST

কলকাতা, 22 জুন : রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় মুকুল রায়ের ভবিষ্যৎ । শুভেন্দু অধিকারী দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ করতে বদ্ধপরিকর । অন্যদিকে শাসকদলের তরফ থেকে শোনা যাচ্ছে এখনই তাঁকে পদত্যাগ করতে বারণ করা হয়েছে । আর এসবের মধ্যেই জল্পনা বেড়েছে আগামী দিনে বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বা পিএসির চেয়ারম্যান পদ দেওয়া হতে পারে মুকুল রায়কে । আর সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক । যদি তা বাস্তবায়িত হয় তাহলে অতীতে মানস ভুঁইয়া, শঙ্কর সিংহদের পথে হাঁটা হবে । যাঁরা নামে বিরোধী বিধায়ক ছিলেন কিন্তু বিরোধী দল ত্যাগ করে শাসক শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন তাঁরা ।

যদিও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বিরোধীদের দেওয়া হয় । পরিষদীয় রাজনীতিতে এটাই রীতি । তবে এর জন্য কোনও লিখিত নিয়ম নেই । অধ্যক্ষ চাইলেই অন্য কাউকে এই পদ দিতে পারেন । আইন অনুযায়ী, পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ বিরোধী দলকে দিতেই হবে— এমন কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই । পুরোটাই হয়ে আসছে রীতি এবং রেওয়াজের উপর ভিত্তি করে । দেশের সংসদীয় এবং রাজ্যের পরিষদীয় গণতন্ত্রে শাসক ও বিরোধীপক্ষের পরিষদীয় দলের আলোচনার ভিত্তিতে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদটি বিরোধীপক্ষকে দেওয়া হয়ে থাকে । ঠিক যে ভাবে লোকসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী । কেন্দ্রের শাসক বিজেপি ওই রেওয়াজ না মানলেও অন্তত আইনগত দিক থেকে বিরোধী কংগ্রেসের কিছু বলার ছিল না ।

যেমন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেও শাসক তৃণমূল যদি মনে করে, তাঁরা বিরোধী বিজেপিকে পদটি ছাড়বে না, তা হলে বিজেপিরও কিছু করণীয় থাকবে না । মনে রাখতে হবে, রাজ্যে পিএসি-র শীর্ষ পদ নিয়ে গত কয়েক বছরে টানাপড়েন হয়েছে বিস্তর । প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস 2016 সালে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ বামেদের দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে সুপারিশ করেছিল । কিন্তু সুপারিশ এড়িয়েই স্পিকার তাঁর ক্ষমতাবলে কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়াকে চেয়ারম্যান করে দেন । যার জেরে কংগ্রেসে প্রবল অন্তর্দ্বন্দ্ব বাঁধে । মানসবাবুকে বয়কট করেন কংগ্রেস বিধায়কেরা । শেষ পর্যন্ত মানসবাবু দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন । তাঁর পরে চেয়ারম্যান করা হয় শঙ্করবাবুকে । অথচ তিনিও যোগ দেন তৃণমূলে !

এর পর সরাসরি কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সুপারিশ করা কোনও বিধায়ককেই পিএসি-র দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তোলা হলেও তা মানা হয় না । তবে ভোটের আগে শেষ কয়েক মাস সুখবিলাস বর্মাকে পিএসি চেয়ারম্যান করা হলেও নতুন সরকার গঠনের পর একই প্রবণতা দেখছেন বিরোধীরা ।

এই অবস্থায় প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, "পিএসি চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে একটা অনর্থক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে । এর থেকে সরকারের ত্রুটিটাই বেশি প্রকাশ্যে আসছে । পিএসি চেয়ারম্যানের নির্বাচন নিয়ে বারবার বিতর্ক তৈরি হওয়ায় বলতেই হয় সরকার চায়না তার আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়টি আলোচনা হোক। এখানে কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে সরকার । বামফ্রন্ট সরকার চেয়েছিল তার সরকারি ত্রুটি তুলে ধরার দায়িত্ব বিরোধীদের হাতে দিতে । যাতে ভুলগুলো চোখে পড়ে । সে কারণে পিএসি চেয়ারম্যানের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয় । কিন্তু উল্টো পথে হাঁটছে এই সরকার । আমার মনে হয় এইবিষয়টি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ।"

শাসকদল পিএসি চেয়ারম্যান নিয়োগের নীতি মানে না, অভিযোগ বাম-কংগ্রেসের

আরও পড়ুন : বিজেপিকে টেক্কা দিতে তৃতীয় ফ্রন্ট ? জল্পনা ওড়ালেন প্রশান্ত কিশোর

একইভাবে বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও । মান্নান সাহেবের কথায়, কংগ্রেস আমলে মেম্বার হিসাবে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছিল তাঁদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল‌। কিন্তু এবার যদি মুকুল রায়কে পাবলিক একাউন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে হয়, তবে ন্যূনতম নমিনেশনটুকু তো জমা দিতে হবে । মুকুল রায় দল ছেড়েছেন এই অবস্থায় কীভাবে বিজেপি থেকে তাঁর নামে নমিনেশন জমা পড়বে? তবে পিএসির ক্ষেত্রে বিরোধীদল যা চায় সেটা মেনে নেওয়াই কনভেনশন । কিন্তু বর্তমান শাসকদল কোনও নিয়ম নীতির ধার ধারে না । ফলে যা হওয়ার তাই হবে । তবে মুকুল রায়কে শেষ পর্যন্ত পিএসি চেয়ারম্যান করা হলে জল আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে । আব্দুল মান্নান মনে করছেন, দলত্যাগ বিরোধী আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগ নেই এসব করা সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে দলত্যাগ বিরোধী আইন আরও শক্তিশালী হওয়া জরুরি ।

কলকাতা, 22 জুন : রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় মুকুল রায়ের ভবিষ্যৎ । শুভেন্দু অধিকারী দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ করতে বদ্ধপরিকর । অন্যদিকে শাসকদলের তরফ থেকে শোনা যাচ্ছে এখনই তাঁকে পদত্যাগ করতে বারণ করা হয়েছে । আর এসবের মধ্যেই জল্পনা বেড়েছে আগামী দিনে বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বা পিএসির চেয়ারম্যান পদ দেওয়া হতে পারে মুকুল রায়কে । আর সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক । যদি তা বাস্তবায়িত হয় তাহলে অতীতে মানস ভুঁইয়া, শঙ্কর সিংহদের পথে হাঁটা হবে । যাঁরা নামে বিরোধী বিধায়ক ছিলেন কিন্তু বিরোধী দল ত্যাগ করে শাসক শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন তাঁরা ।

যদিও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বিরোধীদের দেওয়া হয় । পরিষদীয় রাজনীতিতে এটাই রীতি । তবে এর জন্য কোনও লিখিত নিয়ম নেই । অধ্যক্ষ চাইলেই অন্য কাউকে এই পদ দিতে পারেন । আইন অনুযায়ী, পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ বিরোধী দলকে দিতেই হবে— এমন কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই । পুরোটাই হয়ে আসছে রীতি এবং রেওয়াজের উপর ভিত্তি করে । দেশের সংসদীয় এবং রাজ্যের পরিষদীয় গণতন্ত্রে শাসক ও বিরোধীপক্ষের পরিষদীয় দলের আলোচনার ভিত্তিতে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদটি বিরোধীপক্ষকে দেওয়া হয়ে থাকে । ঠিক যে ভাবে লোকসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী । কেন্দ্রের শাসক বিজেপি ওই রেওয়াজ না মানলেও অন্তত আইনগত দিক থেকে বিরোধী কংগ্রেসের কিছু বলার ছিল না ।

যেমন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেও শাসক তৃণমূল যদি মনে করে, তাঁরা বিরোধী বিজেপিকে পদটি ছাড়বে না, তা হলে বিজেপিরও কিছু করণীয় থাকবে না । মনে রাখতে হবে, রাজ্যে পিএসি-র শীর্ষ পদ নিয়ে গত কয়েক বছরে টানাপড়েন হয়েছে বিস্তর । প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস 2016 সালে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ বামেদের দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে সুপারিশ করেছিল । কিন্তু সুপারিশ এড়িয়েই স্পিকার তাঁর ক্ষমতাবলে কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়াকে চেয়ারম্যান করে দেন । যার জেরে কংগ্রেসে প্রবল অন্তর্দ্বন্দ্ব বাঁধে । মানসবাবুকে বয়কট করেন কংগ্রেস বিধায়কেরা । শেষ পর্যন্ত মানসবাবু দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন । তাঁর পরে চেয়ারম্যান করা হয় শঙ্করবাবুকে । অথচ তিনিও যোগ দেন তৃণমূলে !

এর পর সরাসরি কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সুপারিশ করা কোনও বিধায়ককেই পিএসি-র দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তোলা হলেও তা মানা হয় না । তবে ভোটের আগে শেষ কয়েক মাস সুখবিলাস বর্মাকে পিএসি চেয়ারম্যান করা হলেও নতুন সরকার গঠনের পর একই প্রবণতা দেখছেন বিরোধীরা ।

এই অবস্থায় প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, "পিএসি চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে একটা অনর্থক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে । এর থেকে সরকারের ত্রুটিটাই বেশি প্রকাশ্যে আসছে । পিএসি চেয়ারম্যানের নির্বাচন নিয়ে বারবার বিতর্ক তৈরি হওয়ায় বলতেই হয় সরকার চায়না তার আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়টি আলোচনা হোক। এখানে কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে সরকার । বামফ্রন্ট সরকার চেয়েছিল তার সরকারি ত্রুটি তুলে ধরার দায়িত্ব বিরোধীদের হাতে দিতে । যাতে ভুলগুলো চোখে পড়ে । সে কারণে পিএসি চেয়ারম্যানের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয় । কিন্তু উল্টো পথে হাঁটছে এই সরকার । আমার মনে হয় এইবিষয়টি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ।"

শাসকদল পিএসি চেয়ারম্যান নিয়োগের নীতি মানে না, অভিযোগ বাম-কংগ্রেসের

আরও পড়ুন : বিজেপিকে টেক্কা দিতে তৃতীয় ফ্রন্ট ? জল্পনা ওড়ালেন প্রশান্ত কিশোর

একইভাবে বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও । মান্নান সাহেবের কথায়, কংগ্রেস আমলে মেম্বার হিসাবে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছিল তাঁদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল‌। কিন্তু এবার যদি মুকুল রায়কে পাবলিক একাউন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে হয়, তবে ন্যূনতম নমিনেশনটুকু তো জমা দিতে হবে । মুকুল রায় দল ছেড়েছেন এই অবস্থায় কীভাবে বিজেপি থেকে তাঁর নামে নমিনেশন জমা পড়বে? তবে পিএসির ক্ষেত্রে বিরোধীদল যা চায় সেটা মেনে নেওয়াই কনভেনশন । কিন্তু বর্তমান শাসকদল কোনও নিয়ম নীতির ধার ধারে না । ফলে যা হওয়ার তাই হবে । তবে মুকুল রায়কে শেষ পর্যন্ত পিএসি চেয়ারম্যান করা হলে জল আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে । আব্দুল মান্নান মনে করছেন, দলত্যাগ বিরোধী আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগ নেই এসব করা সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে দলত্যাগ বিরোধী আইন আরও শক্তিশালী হওয়া জরুরি ।

Last Updated : Jun 22, 2021, 3:26 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.