কলকাতা, 12 নভেম্বর : কোরোনার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোরে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে রোগী পিছু 50 টাকা করে নেওয়ার কথা নির্দেশিকায় বলেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC) ৷ অথচ স্বাস্থ্য কমিশনের এই নির্দেশিকা অমান্য করে রোগী পিছু 250 টাকা করে নিচ্ছিল মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল । এক অভিযোগের জেরে ওই হাসপাতালকে 10 লাখ টাকা দিতে বলল কমিশন । এই টাকায় অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুদের জন্য প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা ।
কমিশন জানিয়েছে, ঢাকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব এক প্রৌঢ় তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন 15 অক্টোবর । সেখানে তাঁদের কাছ থেকে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে 250 টাকা করে মোট 500 টাকা নেওয়া হয় । এই চার্জ দেওয়ার আগে এই প্রৌঢ় ওই হাসপাতালে বলেছিলেন, ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে 50 টাকা করে নেওয়া যাবে বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে । তারপরও ওই হাসপাতালে প্রৌঢ় ও তাঁর স্ত্রীর জন্য 250 টাকা করে মোট 500 টাকা নেওয়া হয় । পর দিন এই বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন ওই প্রৌঢ় । COVID-19 প্রতিরোধের জন্য বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে বিভিন্ন রকমের চার্জ নেওয়ার বিষয়টি জানতে পারে কমিশন ।
এর জেরে 1 অগাস্ট নির্দেশিকা জারি করে কমিশন জানিয়েছিল, বেসরকারি কোনও হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা করাতে গেলে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে রোগীর কাছ থেকে 50 টাকা নেওয়া যাবে । রোগীর সঙ্গে অন্য কেউ থাকলে সে ক্ষেত্রে আরও 50 অর্থাৎ মোট 100 টাকা নেওয়া যাবে । চিকিৎসক যদি রোগী দেখার জন্য PPE ব্যবহার করেন, তাহলে ওই PPE-র জন্য সংশ্লিষ্ট রোগীর কাছ থেকে আরও 50 টাকা নেওয়া যাবে । কমিশন জানিয়েছে, কমিশনের এই COVID-19 নির্দেশিকা না মানার জন্য বেসরকারি ওই হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়নি । তবে কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটি (CSR) হিসাবে ওই বেসরকারি হাসপাতালকে 10 লাখ টাকা জমা করতে বলা হয়েছে । অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুদের জন্য এই 10 লাখ টাকা খরচ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রাজ্যের এই স্বাস্থ্য কমিশন ।
কী রকম এই পরিকল্পনা ? স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের আশপাশের অঞ্চলে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা যে সব শিশু রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত 100টি শিশুকে বেছে নিয়ে প্রতিদিন তাদের জন্য একটি করে ডিম দেওয়া হবে । যতদিন পর্যন্ত এই 10 লাখ টাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত 100 শিশুকে ডিম দেওয়া যাবে, ততদিন দেওয়া হবে । এই বিষয়টি দেখবেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের প্রিন্সিপাল, কমিশনের এক মহিলা সদস্য ও পার্কসার্কাসে অবস্থিত বেসরকারি একটি শিশু হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসক । তাঁদেরকে সহায়তার জন্য কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে । তবে ওই বেসরকারি হাসপাতাল যদি মনে করে তাহলে তাদের তরফেও তারা একজন মহিলা প্রতিনিধিকে রাখতে পারে । তবে নির্দেশিকা অমান্য করার জেরে শুধুমাত্র যে এই 10 লাখ টাকা বেসরকারি ওই হাসপাতালকে দেওয়ার কথা বলেছে কমিশন তা নয় ।
কমিশন জানিয়েছে, গত 15 অক্টোবর এই প্রৌঢ়র কাছ থেকে 250 টাকা করে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে নেওয়া হয়েছে । কমিশনের অ্যাডভাইসরি ইশু হওয়ার দেড় মাস পরেও যখন এই ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে ওই প্রৌঢ়কে ৷ এই দেড় মাসের মধ্যে এভাবে লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে বেসরকারি ওই হাসপাতাল । যাদের কাছ থেকে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে এভাবে বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে ৷ তাঁদের সকলকে অতিরিক্ত ওই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কমিশন নির্দেশ দিয়েছে বেসরকারি ওই হাসপাতালকে । এরপর ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে নেওয়া অতিরিক্ত ওই টাকা এই প্রৌঢ়কে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল হাসপাতাল । তবে ওই প্রৌঢ় তা নেননি । কমিশনকে ওই হাসপাতাল জানিয়েছে, কম্পিউটারাইজ়ড সিস্টেমের ভুলের জন্য এভাবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে । যদিও ওই হাসপাতালের এই ধরনের যুক্তিকে মান্যতা দেয়নি কমিশন ।
রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জাস্টিস (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আগামী এক মাসের মধ্যে ওই 10 লাখ টাকা বেসরকারি ওই হাসপাতালকে দিতে বলা হয়েছে । যাঁদের কাছ থেকে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে বেসরকারি ওই হাসপাতাল, তাঁদের সকলকে অতিরিক্ত ওই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না, কমিশন তা নজরে রাখা হবে । "