কলকাতা, 27 অগস্ট: এগরার পর দত্তপুকুর ৷ আবারও রাজ্যে বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ৷ আবারও প্রাণহানির ঘটনা ৷ কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বারবার ? ইটিভি ভারতের অন্তর্তদন্ত ৷
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ কাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল একাধিক জনের । এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রবিবার ফের বাংলার বুকে বেআইনি বাজি কারখানায় বড়সড় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল ৷ এগরার পর এ বার ঘটনাস্থল উত্তর চব্বিশ পরগনার দত্তপুকুর এলাকা । বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে অন্তত আট জনের । স্থানীয় প্রশাসনের দিকে অনেকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন । শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন । এই ঘটনায় গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান, বাজি তৈরি করার জন্য দেশি মশলার পরিবর্তে বাইরে থেকে চোরাগোপ্তা পথে আমদানি করা হচ্ছে সস্তায় চাইনিজ মশলা ।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই মশলাগুলি জোরদার এবং অত্যন্ত ক্ষমতাযুক্ত । তবে এই চাইনিজ মশলা দিয়ে বাজি তৈরিতে যে কারিগরি দক্ষতা দরকার, তার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে সস্তায় কাজে লাগানো হচ্ছে স্থানীয় শ্রমিকদের । কারিগরি বিদ্যার অভাবে মশলার অনুপাত অনেক সময় ভুল হয়ে যাওয়ার ফলে এই প্রকারের ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়ে থাকে । পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বিস্ফোরণের ঘটনার পর ফের উত্তর 24 পরগনায় দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ এবং একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিকভাবে এমনটাই মত রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তার ।
আরও পড়ুন: দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, এদিক ওদিক ছিটকে দেহাংশ! মৃতের সংখ্যা ঘিরে সংশয়
নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের এক ডেপুটি পুলিশ সুপারের বক্তব্য, কারখানাটি আইনি নাকি সেটি পুলিশের নাকের ডগায় বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল সেটি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার । পুলিশি নজরদারি ব্যবস্থা ঢিলেঢালা থাকার কারণেই এই প্রকারের ঘটনা ঘটছে কি না, তাও তদন্ত সাপেক্ষ । তবে এই প্রকারের ঘটনার কারণ হল চোরাগোপ্তা পথে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে রাজ্যের বাইরে থেকে বাজি তৈরির চাইনিজ মশলা এই রাজ্যে আনা এবং অদক্ষ কারিগরি বিদ্যা নিয়ে এই সব কারখানাগুলিতে দিনের পর দিন তা ব্যবহার করা ৷ তার ফলেই ঘটছে বিস্ফোরণের ঘটনা ৷
এই বিষয়ে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এডিজি নজরুল ইসলাম আঙুল তুলেছেন পুলিশি নজরদারির অভাবের দিকে । ইটিভি ভারতকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এডিজি নজরুল ইসলাম বলেন, "স্থানীয় প্রশাসনকে কাঠের পুতুল হিসেবে ব্যবহার করছে একশ্রেণির নেতানেত্রীরা । তবে পুলিশের নিজস্ব যে নেটওয়ার্ক রয়েছে তাতে এলাকায় কোথায় কোন পথে বেআইনি জিনিস সরবরাহ হচ্ছে, তা সবই পুলিশের নখদর্পণে থাকে । তবে এদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তাঁদের একাধিক বিষয়ে ভাবতে হয় । এছাড়াও বেশ কিছু জিনিস দেখেও না দেখার ছলে থাকতে হয় পুলিশ কর্মীদের । আর তার ফলেই যখন দত্তপুকুরের মতো বড়সড় বিস্ফোরণ কাণ্ড ঘটে, সেই সময় পুলিশি নজরদারি এবং ধরপাকড় একটা নাটকীয় মোড় নেয় ৷"
আরও পড়ুন: দত্তপুকুর থেকে এগরা, বাংলাজুড়ে অবৈধ বাজি কারখানার দগদগে স্মৃতি