কলকাতা, 4 নভেম্বর: বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে চন্দ্রযান 3-এর মডিউল যুক্ত করার নামে ‘বৈদিক বৈমানিক শাস্ত্র' অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ উঠেছে এনসিইআরটি-এর বিরুদ্ধে, যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷ একাধিক বিজ্ঞানপ্রেমী যুক্তিবাদী মানুষ ও বিজ্ঞান সংগঠনের অভিযোগ, কাল্পনিক পৌরাণিক কাহিনীকে বিজ্ঞান বলে তুলে ধরা হয়েছে ওই পাঠ্যসূচিতে। শুধু তাই নয়, ইসরোর চেয়ারম্যান এসপি সোমনাথের উপস্থিতিতে এই মডিউল প্রকাশ করা হয়েছে । যা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে শিক্ষা মহলের একাংশে। এনসিইআরটি’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজ্ঞানীরা । অবিলম্বে বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকে চন্দ্রযান 3-এর অবৈজ্ঞানিক মডিউল বাদ দেওয়ার দাবি উঠছে ।
সম্প্রতি ইসরো (ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশন)-র চন্দ্রযান 3-এর সাফল্যের পর ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন্যাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) বিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যসূচিতে বিশেষ সাপ্লিমেন্টারি মডিউল হিসেবে চন্দ্রযান-3 মিশনের কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার মহাপাত্র বলেন,"নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ । কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই মডিউলগুলিতে মহাকাশ বিজ্ঞানের সঙ্গে ‘বৈদিক বৈমানিক শাস্ত্র’-এর কথা একীভূত করা হয়েছে ৷ শুধু তাই নয় অবৈজ্ঞানিকভাবে, প্রামাণ্য তথ্যের পরিবর্তে কাল্পনিক পৌরাণিক কাহিনিকে বিজ্ঞান বলে তুলে ধরার অপপ্রয়াস করা হয়েছে। পরিতাপের বিষয় এই বিভ্রান্তিকর মডিউল প্রকাশিত হয়েছে ইসরোর চেয়ারম্যান এসপি সোমনাথের উপস্থিতিতে । এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে ভারতের বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চাকে হাস্যস্পদ করা হচ্ছে ৷ পরিকল্পিতভাবে আগামী প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভুল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে তাদেরকে বিপথে পারিচালিত করা হচ্ছে। এই ঘটনা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতের কৃতিত্বকে খাটো করে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রগতির ধারাকে অস্বীকার করা হয়।"
অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে দেশের 25টি রাজ্যে কাজ করে সারা ভারত জনবিজ্ঞান নেটওয়ার্ক। সেই নেটওর্য়াকের সাধারণ সম্পাদক আশা মিশ্র বলেন, "এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ধারাবাহিকভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈজ্ঞানিক প্রচার চলছে । নয়া শিক্ষা নীতিতে উল্লিখিত ‘প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানতত্ত্ব'-এর নামে তারা কী শিক্ষা দিতে চায় তা এতে স্পষ্ট। আমরা বিজ্ঞানের নামে এই অপবিজ্ঞান প্রচারের পরিকল্পিত উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এনসিইআরটি'র কাছে এই মডিউলগুলি বিদ্যালয় পাঠ্যসূচি থেকে স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি । বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানপ্রেমী যুক্তিবাদী মানুষ এবং অন্যান্য বিজ্ঞান সংগঠনগুলিকে এর প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আবেদন করছি।"
আরও পড়ুন: চাঁদ ছুঁল চন্দ্রযান, ইতিহাসে ভারত 'বিক্রম'
উল্লেখ্য, সারা ভারত জনবিজ্ঞান নেটওয়ার্কের তরফে এনসিইআরটি’র ভুলগুলিকে যুক্তি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে যে, তাঁরা 25টি রাজ্যে এই বিষয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলবে ।