বেহালা, 27 অক্টোবর: হাতের নাগালে ফুচকা, আর তা কেউ তুলে নেবে না এমনটা হয় নাকি ? বেহালা নূতন দলে এ বছর ঠাকুর দেখতে এসে এমনটাই ঘটিয়েছেন দর্শনার্থীরা । বেহালা নূতন দলের এবারের থিম ছিল 'তুষ্টি'। আর থিমের রসদ ছিল ফুচকা । যা খেলে মানুষ তুষ্ট হয়, তৃপ্তি ক'রে এই খাবার খায় সবাই । মন ভালো করার আদর্শ চটপটা খাবার এই ফুচকা । আর তা দিয়েই তৈরি হয়েছিল এবারের বেহালা নূতন দলের প্যান্ডেল । ফুচকাগুলিকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হয়েছিল 'ইপক্সি' নামক রাসায়নিক । আর তাই মাইকে বারবার প্রচার করা হচ্ছিল যে, "কেউ ফুচকাতে হাত দেবেন না । এতে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল লাগানো আছে ।" কিন্তু কে শোনে কার কথা । হাতের নাগালে ফুচকা পেয়ে ছিঁড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন অনেকেই । তবে, সেগুলি তাঁরা মুখে পুড়েছিলেন কি না, তা জানা নেই কারোরই । তবে এই ঘটনার পর থেকেই একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে জনমানসে ৷
যেহেতু কেমিক্যাল রয়েছে, তাই মুখে দিলে কি ক্ষতি হবে শরীরের ? কেন এই ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করলেন শিল্পী ? এই ধরনের কেমিক্যাল প্যান্ডেলে ব্যবহার করার জন্য কি ডাক্তারি পরামর্শ কিংবা প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হয় ?
এই সব প্রশ্ন শিল্পী অয়ন সাহাকে ইটিভি ভারতের তরফে করা হলে তিনি বলেন, "প্রত্যেক পুজো প্যান্ডেলেই এরকম কোনও না কোনও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় । যেগুলি বাতাসে কোনও প্রতিক্রিয়া ছড়ায় না । আর কোনও কেমিক্যাল বাতাসে প্রতিক্রিয়া না ছড়ালে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই । যে কেমিক্যাল আমি ব্যবহার করেছি ফুচকাতে, সেই একই কেমিক্যাল ভবতোষ সুতার তাঁর ফাইবার গ্লাস দুর্গাতে ব্যবহার করেছেন । এরকম আরও অনেকেই করে থাকেন । এতে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই । মাইকে প্রচার করা হয় যাতে কেউ হাত না দেয় । যেহেতু একটা কেমিক্যালের ব্যবহার তাতে রয়েছে, তাই হাত না দেওয়াই ভালো । সিকিউরিটি গার্ডের বারণ এবং মাইকের প্রচার সত্ত্বেও মানুষ হাত দিয়েছেন, ছিঁড়েছেন । এতে কারোরই কিছু করার নেই ।"
আরও পড়ুন : হাত বাড়ালেই নাগালে ফুচকা, রসনাতৃপ্তিতে মণ্ডপ দেখতে এসে ফুচকা নিয়ে পগারপার দর্শনার্থীরা
শিল্পী আরও বলেন, "প্রত্যেক প্যান্ডেলে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকে । সেগুলিও ফায়ার প্রুফ করা থাকে । সেক্ষেত্রেও তো একটা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় । কিন্তু সবাই তো হাত দেয় । কিছু হয় কি ? আমরা পাবলিকের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই প্যান্ডেল বানিয়েছি । যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে এই কেমিক্যাল প্রত্যেক প্যাণ্ডেলেই ব্যবহার করা হয়, অনুষঙ্গ সতেজ রাখার জন্য । এর জন্য ডাক্তার কিংবা পুলিশ প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে বলে আমার মনে হয় না । আর্টওয়ার্কের ক্ষেত্রে অনুমতির দরকার পড়ে না । তা ছাড়া পুজো প্যান্ডেলে এমন জিনিস ব্যবহার করা হয় না যেটা মানুষের বড় ক্ষতি করতে পারে । পুজোর পর প্যান্ডেলের যা অবস্থা হয় তাতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে । যে পরিমাণ ধুলো ওড়ে তাতে যাদের ডাস্ট অ্যালার্জি আছে তাদের পুজোর প্যান্ডেলে যাওয়াই উচিত নয় ।"
শিল্পীর সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি এই ব্যাপারে ইটিভি ভারত কথা বলে ড: প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের (ফুড টেকনোলজি প্রফেসর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) সঙ্গে । তিনি অয়ন সাহার বক্তব্য না মেনে নিয়ে বলেন, "ইপোক্সি খাওয়া কখনওই ঠিক নয় । এটা যথেষ্ট ক্ষতিকারক শরীরের জন্য । এটা ব্যবহার করা হয় কোটিন অথবা মেঝেতে কোনও দরকারে । এর সরাসরি সেবনে ত্বক, অ্যাজমা ও ফুসফুসের সমস্যা দেখা যায় । যদি কেউ বেশি পরিমাণে ইপক্সি খেয়ে নেয় তাহলে তখনই শারীরিক এই সমস্যাগুলো দেখা যায় । আমি জানি না এখানে কোটিন সমেত কেউ কেমিক্যালটা খেয়েছে কি না । যদি তাই হয় তাহলে বড় সমস্যা দেখা যাবে । এটা খাওয়ার জিনিসই নয় । এর প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী ।"