কলকাতা, 11 জানুয়ারি : শিক্ষকদের নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড । আজ দুপুরে শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের ডাকে ধর্মতলায় জমায়েতকারী হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী হঠাৎ নবান্নের উদ্দেশে মিছিল শুরু করে দেন । প্রস্তুত ছিল না পুলিশ । তড়িঘড়ি প্রাথমিকভাবে ব্যারিকেড করে বিশাল সেই মিছিল শহিদ মিনারের ময়দানেই আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ । কিন্তু সেই ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা । মেয়ো রোড থেকে লেডি ডাফরিন রোড হয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা । বারবার তাদের আটকানোর চেষ্টা করে উপস্থিত থাকা কয়েকজন পুলিশ । কিন্তু সব বাধা ভেঙে এগিয়ে যায় বিশাল মিছিল । উপস্থিত থাকা পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের উপরই চড়াও হয় আন্দোলনকারীরা । অবশেষে রেড রোড ও লেডি ডাফরিন রোড ক্রসিংয়ে মিছিল আটকায় পুলিশ ।
বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের দাবিদাওয়া আদায় করে নিতে 11 জানুয়ারি আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চ । সেই সংগঠনে ছাতার তলায় এক হয় 10টি স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা । পরিকল্পনা ছিল নবান্ন অভিযানের । এর পাশাপাশি রানি রাসমণি রোডে অবস্থান ও অনশনের কর্মসূচি করারও পরিকল্পনা ছিল তাদের । কিন্তু সেখানে বসার অনুমতি পাননি তারা । শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট তাদের শহিদ মিনারের ময়দানে তিনদিন অবস্থানের অনুমতি দেয় । তবে নবান্ন অভিযান না করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট । পরিকল্পনা অনুযায়ী এদিন মাদ্রাসা শিক্ষক, স্পেশাল এডুকেটর, এসএসকে-এমএসকে, উচ্চমাধ্যমিকের আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ মোট 10 ধরনের স্তর থেকে হাজারে হাজারে শিক্ষক-শিক্ষিকা আসেন শহিদ মিনারের ময়দানে । প্রথমে অবস্থান মঞ্চে কর্মসূচি চললেও দুপুর দেড়টা নাগাদ হঠাৎই নবান্ন অভিযান শুরু করে দেন আন্দোলনকারীরা ।
এই হঠাৎ মিছিলের জন্য প্রস্তুত ছিল না পুলিশ । তবু উপস্থিত কয়েকজন পুলিশ মিছিল আটকানোর চেষ্টা করতেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয় । কখনও রাস্তার ধারে থাকা বাস-গাড়ি রাস্তার মাঝে এনে ব্যারিকেডের চেষ্টা, তো কখনও প্রিজন ভ্যান রাস্তার মাঝে রেখে হিউম্যান চেন করে আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ । মেয়ো রোড হয়ে লেডি ডাফরিন রোডে মিছিল আসতেই মরিয়া পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তেড়ে যায় । সেই সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের একাংশ চড়াও হন পুলিশের উপরে । ঘটনাস্থানে থাকা কলকাতা পুলিশের ডিসি সাউথ সুধীর কুমার নীলকণ্ঠম আহত হন । আহত হন আরও এক পুলিশ । অবশেষে রেড রোড ও লেডি ডাফরিন রোড ক্রসিংয়ে ব্যারিকেড, প্রিজন ভ্যান রাস্তার মাঝে রেখে মিছিলকে আটকাতে সফল হয় পুলিশ । ততক্ষণে ঘটনাস্থানে চলে আসে পুলিশ বাহিনীও ।
পুলিশ আটকাতেই ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা । পুলিশ বারেবারে চেষ্টা করেন আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের অবস্থান থেকে তুলতে । আটকও করা হয় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে । বেশ কিছুক্ষণ ধরে লেডি ডাফরিন রোডে অবস্থান চলে । ঘন্টাখানেক পর পুলিশ আটক করা আন্দোলনকারীদের ছেড়ে দিলে ফের অবস্থান মঞ্চে ফিরে যান আন্দোলনকারী শিক্ষকরা ।এই নিয়ে শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের রাজ্য সভানেত্রী ছবি চাকি বলেন, "আমরা চারমাস ধরে আমাদের পরিকল্পনা সরকারকে জানাচ্ছি । কিন্তু সরকার শেষ মুহূর্তে আমাদের যে ধোঁকা দিল । আমাদের কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছে । আমরা সমকাজে সমবেতন, পেনশনের দাবিতে আমরা মহাজোট করে লড়াইয়ে নেমেছি । আজ 10 বছর ধরে আমরা বঞ্চনার শিকার । বঞ্চিত শিক্ষকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী একদিনও আলোচনায় বসেন না । অথচ 2011 সালে আমাদের ভোট নিয়েই মসনদে বসেছেন । প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । তা পূরণের নমুনা আজ আমরা দেখতেই পাচ্ছি ।" তিনি আরও বলেন, "আজ সরকার আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে । আমাদের কর্মসূচি নবান্ন অভিযান ছিল, আজ থেকে আমরা এখানে অনশনের ঘোষণা করেছি । দিদি আমাদের কথা দিক, দাবি মেটাক । আমরাও অনশন তুলে দেব ।"
আন্দোলনের আগামী পদক্ষেপ অনশন । আজ বিকেল পাঁচটা থেকে প্রতিটি স্তরের শিক্ষকদের কয়েকজন করে অনশন শুরু করছেন । এই অনশন সম্পূর্ণ নির্জলা হবে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের নেতৃত্বরা । তবে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মাত্র তিনদিন বসার অনুমতি থাকলেও দাবি না মেটা পর্যন্ত এই অনশন-অবস্থান চলবে ।