কলকাতা, 18 অক্টোবর: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিম ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য গ্রেফতারি মামলায় পুলিশি তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পুজোর ছুটির পর এই মামলার নথি দেখে এফআইআর খারিজও করে দিতে পারে আদালত ৷ এই মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার যে অভিযোগ উঠেছে সেই প্রেক্ষিতে এদিন হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানান, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে না তা নিয়ে বরানগর থানার আইসি, তদন্তকারী অফিসার ও অভিযোগ নথিবদ্ধকারী অফিসারকে হলফনামা জমা দিতে হবে। 18 ডিসেম্বরের কেস ডায়েরি আদালতে জমা দিতে হবে। তা খতিয়ে দেখে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে, ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হবে নাকি আর্থিক জরিমানা করা হবে। বুধবার এই নির্দেশ দেন বিচারপতি ৷
এদিন আদালতের পর্যবেক্ষণ, যে অভিযোগের ভিত্তিতে মুর্শিদাবাদের শুভাঞ্জন বড়াল নামে ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার কোনও যৌক্তিকতা নেই । মামলা দাঁড়ায় না ওই অভিযোগের ভিত্তিতে । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মিম করায় পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে মঙ্গলবারের শুনানিতেও বেজায় চটেছিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত । বরানগর থানার ওসি, অভিযোগ নথিবদ্ধকারী অফিসার ও তদন্তকারী অফিসারকে এই মামলায় যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। পাশাপাশি কী করে আইপিসির 41 এ ধারায় জিজ্ঞাসাবাদের নোটিশ না দিয়ে গ্রেফতার করে পুলিশ ? অপরাধটা কী ? কোন উৎসাহে এত তৎপরতা পুলিশের ? এই প্রশ্নগুলিও তুলেছেন বিচারপতি ।
মামলার শুনানিতে এদিন বিচারপতি বলেন, "ধরে নিতাম, তাৎক্ষণিক ভাবে কোনও ঘটনা ঘটেছে , আর অভিযুক্তকে হাতের কাছে পেয়ে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তবু একটা যুক্তি থাকে। কিন্তু বরানগর থেকে পুলিশ ছুটে গিয়ে লালগোলা গিয়ে তুলে আনছে ! এটা কী ৷"
আরও পড়ুন: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিম! পুলিশের অতিসক্রিয়তায় বেজায় চটলেন বিচারপতি
শুভাঞ্জন বড়াল মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাসিন্দা ৷ সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের 'শ্রী কৃষ্ণের শেষ কটাদিন' (সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত ) বইয়ের প্রথম পাতার কৃষ্ণের ছবির জায়গায় অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের মুখের ছবি দিয়ে ফেসবুক পোস্ট করেন এই ছাত্র । ঘটনার 12 দিন পর বরানগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক তৃণমূল সমর্থক । ওই তৃণমূল সমর্থকের বক্তব্য, 'আমার ব্যাপারটা খারাপ লেগেছে ।" সঙ্গে সঙ্গে বরানগর থেকে পুলিশ লালগোলায় গিয়ে ওই ছাত্রকে তুলে আনে । যদিও পরে ব্যারাকপুর আদালত থেকে সে জামিন পায় । কিন্তু তাকে কেন হেনস্তা করা হল সেই উত্তর পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি। মঙ্গলবার সরকারি আইনজীবী আমিতেষ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে এই ঘটনায় রীতিমতো ভুল স্বীকার করে বলেন, "যা ঘটেছে সেটা খুব বাজে ঘটনা । এক ঘণ্টার মধ্যে ছেলেটির ল্যাপটপ ফিরিয়ে দেওয়া হবে । পুজোর ছুটির পরে শুনানি হোক মামলার ।" কিন্তু ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, "ফেরত দেওয়া পরের কথা, আগে তো গ্রেফতার কেন করা হল, ল্যাপটপ কেন নেওয়া হয়েছে সেটা জানাক পুলিশ ।"