কলকাতা, 12 জুন: রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ পরিবর্তন থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি-সহ একাধিক বিষয়ে হাইকোর্ট কী নির্দেশ দেয় কার্যত সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্য। কিন্তু সোমবার দিনভর সওয়াল-জবাব শেষে ফয়সালা হল না কিছুই। মামলার শুনানি শেষে রায়দান এদিনের মতো স্থগিত রাখল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
সোমবার সকালেই আদালতের নির্দেশ মতো রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র জানান, কমিশন মনোনয়ন জমা করার দিনক্ষণ 15 জুনের পরিবর্তে 16 জুন করতেই পারে। প্রতিদিন দু'ঘণ্টা করে সময় বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে শুনানিতে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নের সময়সীমা ছয়দিনের পরিবর্তে সাতদিন হবে। সবদিক খতিয়ে দেখে এটা করা যেতে পারে বলে আদালতে জানান নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী।
যদিও পালটা প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম প্রশ্ন করেন, "কেন সাতদিনের বেশি বাড়ানো যাবে না? এমন কোনও আইন আছে, যে সাতদিনেই মনোনয়নের কাজ শেষ করতে হবে ?" রাজ্য নির্বাচন কমিশন অবশ্য এর উত্তরে জানায়, এক্ষেত্রে সাতদিনই যথেষ্ট বলে মনে করছে কমিশন। আগের নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে কমিশনের আইনজীবী জানান, আগেও এই রকম সময়ই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কমিশনের উত্তরে অসন্তুষ্ট প্রধান বিচারপতি বলেন, "আমরা সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি পর্যাপ্ত মনোনয়ন পত্র পাওয়া যাচ্ছে না, কোথাও নিরাপত্তার অভাবও দেখা যাচ্ছে ৷ এই বিষয়গুলি যেন না-হয় সেটা কমিশন সুনিশ্চিত করুক।" পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, সাতদিনের মধ্যে শনিবার ও রবিবার ছুটির জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি। তবে সাতদিন হচ্ছে কোথায়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি ৷
বিজেপির আইনজীবী গুরু কৃষ্ণ কুমার এদিন ফের বলেন, "মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। 73 হাজার আসন। গত নির্বাচনে 20 হাজারের বেশি আসনে কোনও নির্বাচন ছাড়াই শাসক দলের প্রতিনিধিরা জয়ী হয়েছিলেন। 9 জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেদিনই বেলা 11টা থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা বলা হল। প্রতিদিন চার ঘন্টা করে সময় দেওয়া হয়েছে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য। মোট আসনে চল্লিশ সেকেন্ডেরও কম সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মনোনয়ন জমা দেওয়া সম্ভব?" এরপরই প্রধান বিচারপতি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চেয়ে বলেন, "এখন পর্যন্ত কতজন মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছে?" কমিশন জানায় 10 হাজার প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছে। এবং মনোনয়নের প্রক্রিয়াও চলছে।
আরও পড়ুন: জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার রুখতে নয়া নির্দেশিকা কমিশনের, জানাতে হবে কারণ
প্রধান বিচারপতি বলেন, "2018 সালের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেটা কমিশন ভালোভাবে খতিয়ে দেখুক।" একইসঙ্গে, 8 জুলাই নির্বাচনের দিনক্ষণ পিছতে চাইছে বলেও জানান প্রধান বিচারপতি। কিন্তু কমিশনের বক্তব্য, তা সম্ভব নয়। রাজ্যের অনুমতি ছাড়া নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা সম্ভব নয় ৷ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, "মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সমস্ত পক্ষ নির্বাচনে আত্মবিশ্বাস পায়। কিন্তু আপনারা সেটাকে কীভাবে সুনিশ্চিত করবেন?" কমিশনের আইনজীবীকে প্রশ্ন করে প্রধান বিচারপতি বলেন, "আপনারা একটা নিরপেক্ষ সংস্থা তো!" রাজ্যের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানান, এক্ষেত্রে একদিন মনোনয়নের দিন বাড়ানোই যথেষ্ট। সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই নমিনেশন জমা করতে পারছেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতে লড়াই হবে চোখে চোখ রেখে, তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
অন্যদিকে, নিরাপত্তা বিষয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, "পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক। রাজ্য পুলিশ এবং কমিশন সমস্ত কিছুর উপর নজর রাখছে।" প্রধান বিচারপতি এদিন রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তীর সময় রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যাবহারের প্রসঙ্গ উত্থাপনও করেন। বিজেপির তরফে উল্লেখ করা হয় 2021-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট পরবর্তী হিংসার জন্য হাইকোর্ট পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেছিল। এর পাশাপাশি, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে সরকারি কর্মচারী যারা ভোট করাবেন, তাদের নিরাপত্তার দিক খতিয়ে দেখার আবেদনও এদিন জানানো হয় ৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা না দেওয়া হলে এবং তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হলে, তাদের পক্ষে ভোট করানো কী করে সম্ভব সেই প্রশ্নও রেখেছেন তাঁরা প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের সামনে ৷ এই সমস্ত বক্তব্যের উত্তর দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, "আমরা আইন-শৃঙখলা রক্ষার কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করছি না। কোনও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ব্যাবহার করা আমাদের এক্তিয়ার বহির্ভূত। কমিশন দায়িত্ব নিয়েই নির্বাচন করাবে। যদি আদালতের মনে হয় কোথাও কমিশন তার দায়িত্ব পালন করছে না সঙ্গে সঙ্গে তার জবাবদিহি করা হবে।" চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জানালেন, " তাদের পোলিং এর কাজে লাগানো হচ্ছে না । পাশাপাশি আইনে বলা আছে যদি কর্মচারীর অভাব হয় তাহলে একেবারে শেষ উপায় হিসাবে তাদের নিয়োগ করা যেতে পারে।"