কলকাতা, 21 সেপ্টেম্বর: লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির অফিসে গিয়ে ফাইল ডাউনলোড করার নিয়ে ইডি বা সিবিআইয়ের কোনও আধিকারিকের বিরুদ্ধে পুলিশ যদি কড়া পদক্ষেপ করে, তাহলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে ৷ বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।
এ দিন শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্য়ায় বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ সিবিআই-ইডির নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাচ্ছে না । কিছু ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে । সাইবার ক্রাইমে এই নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয় । পুলিশ সেটা খতিয়ে দেখতে চায় । 16টা ফাইল ডাউনলোড করা হয় । বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ আগেই নির্দেশ দিয়েছেন কারও বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার দরকার নেই । কিন্তু পুলিশ চাইলে ভায়া ইমেল সিবিআই-ইডির কাছে এই ফাইলের বিষয়ে জানতে চাইতে পারে । পুরো সেপ্টেম্বর মাসে ইডির আইনজীবী একবারও আদালতে বলেনি তো যে কলকাতা পুলিশ সিবিআই-ইডিকে হেনস্তা করছে । এখন তারা কেন নিম্ন আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করছে ?’’
বিচারপতি বলেন, "কিন্তু পুলিশ হঠাৎ করে খুব সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ ।" রাজ্যের আইনজীবী ফের বলেন, "পুলিশ কিছু করলেই বাড়াবাড়ি, আবার কিছু না করলে পুলিশ নিস্ক্রিয় বলে অপবাদ দেওয়া পুরনো কথা ।"
আরও পড়ুন: লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে ডাউনলোড হওয়া 16টি ফাইল দেখতে চাইল হাইকোর্ট
ইডির তরফে আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ইসিআইআর খারিজ করার আর্জি জানান । কখনোই তিনি এই বিষয়ে আদালতে কিছু বলেননি । হঠাৎ করে বিষয়টি তিনি আদালতে উত্থাপন করেছেন । ইডি আন্ডার টেকিং দিয়ে জানিয়েছে, যে ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে, সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল সংক্রান্ত । আমাদের তদন্তে কেন অকারণ বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে ? আমাদের তদন্ত সম্পূর্ণ করতে দেওয়া হোক ।"
রাজ্যের আইনজীবী পালটা ফের বলেন, "কলকাতা পুলিশ কোনোভাবেই তাদের (ইডি) তদন্তে হস্তক্ষেপ করছে না । তারা কেন 16টা ফাইল ডাউনলোড করল, সেটা দেখতে চায় পুলিশ । বিচারপতি ঘোষের বেঞ্চে পুরো বিষয়টা বিচারাধীন । তিনি সবপক্ষকে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দিয়েছেন যেখানে, সেখানে একই বিষয় নিয়ে কেন অন্য আর একটি বেঞ্চে আবেদন করল সিবিআই-ইডি ? সেখানে চুপ থেকে এই বেঞ্চে কেন আবেদন ?"
অন্যদিকে ইডি এদিন আদালতে জানিয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার টাকা সিনেমা জগতে কতটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তারা পরবর্তী শুনানিতে আরও তথ্য দিতে পারবে । এই বিষয়ে তারা তদন্ত করছে । ইডির তরফে জানানো হয়, সিনেমা জগতে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের টাকা ব্যবহার হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে একজনের নাম তারা আদালতকে আপাতত জানাতে পারছে । অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত 44 লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন । আরও আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে জানাতে আরও সময় চান আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী ।
আরও পড়ুন: সক্রিয় লালবাজার, ইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা লিপস অ্যান্ড বাউন্সের কর্মীকে তলব
পাশাপাশি এ দিন এই কোম্পানির সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য কর্মচারীদের সম্পত্তির হিসাব আদালতে জমা দিয়েছে ইডি । মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী 10 অক্টোবর 2023 ।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সচিব পার্থ কর্মকার এ দিন একটি রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছেন ৷ সেখানে জানানো হয়, সিবিআই-ইডি যে 96 জন প্রার্থী বেআইনি ভাবে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছে বলে জানিয়েছিল, পর্ষদ তাদের নথি জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । একটা অংশ নথি জমা দিয়েছে৷ তার ভিত্তিতে 4 জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে । 29 সেপ্টেম্বর আরও প্রার্থীর তথ্য যাচাই করার বাকি রয়েছে ।
অন্যদিকে 46 জনের ডিএলএড ট্রেনিং নেই বলে যে অভিযোগ এসেছিল । তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসে তাদের ট্রেনিং বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে । এদের আসল নথি পর্ষদের কাছে নেই । কিন্ত ডিজিটাইজড যে নথি রয়েছে, সেগুলো গ্রহণযোগ্য হবে কি না, সেই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন । এছাড়া 2020 সালে প্রাথমিক নিয়োগের যে মেধা তালিকা প্রকাশ করেছিল বোর্ড, তাতে কম্পিউটার হ্যাক করা হয় বলে এ দিন জানায় বোর্ড । সেই বিষয়ে সিবিআই-ইডিকে তদন্ত করে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত ।
আরও পড়ুন: মেয়ের জন্য কেন বয়েজ হস্টেল খুঁজলেন ইডির আধিকারিক, প্রশ্ন লালবাজারের
বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীর তরফে আইনজীবী সুদীপ্ত দাসগুপ্ত বলেন, "প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ 269 জন প্রার্থী যাদের 1 নম্বর দিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছিল, তাদের বিষয়ে আদালতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেছে । আদালতকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে ।"