কলকাতা, 22 মে: পৌরনিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় তদন্তে আপাতত কোনও স্থগিতাদেশ নেই । তবে যদি কারও বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হয়, তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন । সোমবার এ কথা জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ পাশাপাশি কীসের ভিত্তিতে তদন্ত করতে চাইছে ইডি, তাও জানতে চাইল বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের গ্রীষ্ম অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ । ইডিকে আগামী 6 জুন রেগুলার বেঞ্চের শুনানিতে পৌরনিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত নথিপত্র/সিডি আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ ।
রাজ্যের হয়ে আইনজীবী জয়দীপ কর বলেন, পৌরনিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে সিবিআই নতুন করে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করছে । এইখানেই তাদের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । সিঙ্গল বেঞ্চ এই এক্তিয়ারের বিষয়টি খতিয়ে দেখেনি । এরপর ইডির আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদীকে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় প্রশ্ন করেন, "আপনারা সিঙ্গল বেঞ্চে তদন্তের আবেদন করার আগে কি প্রমাণপত্র দাখিল করেছিলেন ? কোনও নথি বা সিডি দাখিল করা হয়েছিল ? সিবিআই পুরো শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করছিল ৷ আপনারা (ইডি) কীসের ভিত্তিতে তদন্তের আবেদন জানালেন ?"
মামলাকারী সৌমেন নন্দীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, 13 এপ্রিল ইডি একটি রিপোর্ট দিয়েছিল ৷ সেই রিপোর্টে পরিষ্কার অয়ন শীল নামে ব্যক্তির গ্রেফতারর পর পৌরনিয়োগ দুর্নীতির বিষয় সামনে আসছে । যদিও পালটা সওয়াল করে জয়দীপ কর বলেন, সত্যিই যদি কিছু পাওয়া যায়, সিবিআইয়ের দায়িত্ব তা রাজ্যকে জানানো যে তারা পৌরনিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু পেয়েছে । কিন্তু তা না করে হঠাৎ করে ইডি, যারা এই মামলার মূল পার্টি পর্যন্ত নয়, তারা আবেদন জানিয়ে দিল ৷ সিঙ্গল বেঞ্চ তাতে সম্মতি দিতে পারে ? আইন অনুযায়ী হঠাৎ করে রাজ্যের তদন্ত খতিয়ে দেখার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া যায় না বলে দাবি করেন রাজ্যের তরফে আইনজীবী । তাঁর মতে, 21 এপ্রিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ এক্তিয়ার বর্হিভুত নির্দেশ দিয়েছিল ।
দু পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বলেন, "আপনারা যতক্ষণ না আদালতকে দেখাতে পারছেন কোনও প্রমাণপত্র, যে সত্যিই এখানে তদন্ত করা প্রয়োজন, ততক্ষণ আদালত তাতে সম্মতি দিতে পারে না ৷" বিচারপতি বসু সিবিআইয়ের আইনজীবী অমাজিৎ দের কাছে জানতে চান, তাদের তদন্তের কী পরিস্থিতি ? সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, অয়ন শীল গ্রেফতার হয়েছে । তাঁর কাছ থেকে কিছু ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে । তদন্ত চলছে ।
এরপর বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় বলেন, "আমরা আগে তদন্তের সিডি চাই ।" বিচারপতি বসুর প্রশ্ন, সৌমেন নন্দী কী করে জানলেন যে দুর্নীতি হয়েছে ? তিনি কি এই নিয়োগ দুর্নীতির সরাসরি শিকার ? মামলাকারীর আইনজীবী গোপা বিশ্বাস বলেন, তিনি দুর্নীতির শিকার । বিচারপতি তখন প্রমাণ দেখাতে বলেন ৷ বিচারপতি বসু মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যকে বলেন, "পুরো শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করছিল সিবিআই । সেখানে ইডি হঠাৎ করে আবেদন জানাল পৌরনিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের । সম্পূর্ণ অন্য একটা বিষয়ে । এটা সিঙ্গল বেঞ্চ কি খতিয়ে দেখেছে ?"
বিকাশরঞ্জন উত্তরে জানান, "এই দুর্নীতির পারস্পরিক যোগ রয়েছে । সেই জন্যই আদালত তাতে সম্মতি দিয়েছে ।"
আরও পড়ুন: পৌরনিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত আবেদন শোনার এক্তিয়ার নেই, মামলা ছাড়ল ডিভিশন বেঞ্চ