কলকাতা, 23 ডিসেম্বর: কলকাতা, 23 ডিসেম্বর: সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যুর মামলায় সিআইডি তদন্তেই আস্থা রাখল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta HC Trusts on CID in Lalan Sheikh Death Investigation) ৷ বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর বেঞ্চ এদিন এই নির্দেশ দিয়েছেন ৷ তবে, সিআইডি তদন্তের বিরোধিতা করে সিবিআই-এর আইনজীবী আদালতে জানান, এইধরনের মৃত্যুতে রাজ্য সরকার মামলা করতে পারে না ৷ তবে, সেই যুক্তি মানতে চাননি বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ৷ তিনি জানান, কে অভিযোগ দায়ের করছেন সেটাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ৷
বগটুইকাণ্ডে মৃত ভাদু শেখের হত্যায় অভিযুক্ত লালন শেখের রহস্যমৃত্যুর তদন্তভার সিআইডি না সিবিআই, কার হাতে থাকবে তদন্ত ? সেই নিয়ে এদিন মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে ৷ লালন শেখের মৃত্যুর তদন্ত সিআইডি-কে দেওয়া নিয়ে বিরোধিতা করেন সিবিআই-এর আইনজীবী ডিপি সিং ৷ তিনি আদালতে বলেন, ‘‘এই ধরনের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য কোনও ভাবেই এফআইআর করতে পারে না ৷’’ তবে, সিবিআই আইনজীবীর যুক্তি খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘‘সেটা খতিয়ে দেখা দরকার যে, এফআইআর-কে করেছেন ৷ তদন্ত সাপেক্ষ ৷’’
পাশাপাশি, অভিযোগকারী লালন শেখের স্ত্রীকে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কিনা, এদিন তা রাজ্যের কাছে জানতে চান বিচারপতি ৷ যার জবাবে রাজ্যে আইনজীবী অর্থাৎ, সরকারি কৌশলি অনির্বাণ রায় বলেন, ‘‘ওনার মানসিক অবস্থা ভালো নেই ৷ তিনি নিজেই বলেছেন ৷’’ তবে, অনির্বাণ রায়ের এই জবাবে রীতিমত ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ৷ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তিনি আদালতে আসতে পারছেন ৷ আর তাঁকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছে না ? এখনও 164 ধারায় তাঁর বয়ান গ্রহণ করা হয়নি ?’’
তবে, সিআইডি-কে দিয়ে যে এই তদন্ত সঠিকভাবে হবে না, তা প্রমাণের চেষ্টা ছাড়েননি সিবিআই আইনজীবী ডিপি সিং ৷ আর তাই রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সিআইডি-র তদন্ত প্রক্রিয়া এবং তাঁর কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি ৷ ডিপি সিং যুক্তি দেন, ‘‘শুধু সিআইডি নয় ৷ তাঁর সঙ্গে সিবিআই অফিসারদেরও রাখা হোক তদন্তে ৷ প্রয়োজনে একটা সিট গঠন করা হোক ৷ যেখানে দু’তরফের অফিসাররা থাকবেন ৷ তাহলে তদন্ত নিরপেক্ষ হবে ৷ সাক্ষীর বক্তব্য গ্রহণ বা আনুসঙ্গিক সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে রাজ্য ৷ সিবিআই অনেক বড় এজেন্সি ৷ বরং সিবিআই-কে তদন্তভার দেওয়া উচিত ৷’’
আরও পড়ুন: লালন শেখ মৃত্যুর তদন্তে সিআইডি, নির্দেশ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের
সিবিআই আইনজীবীর এই যুক্তি শুনে কিছুটা ক্ষিপ্তই হয়ে ওঠেন রাজ্যের আইনজীবী অনির্বাণ রায় ৷ তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘সিআইডি ভালো এজেন্সি নয় ! কীসের ভিত্তিতে এই যুক্তি দিচ্ছে সিবিআই ? এই ধরনের বক্তব্যের পিছনে যুক্তি কী ? হলফনামা দিয়ে সেটা জানানো হোক ৷’’
তবে, দু’পক্ষকে থামিয়ে দিয়ে বিচারপতি লালন শেখের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আদালতে উপস্তিত লালন শেখের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন, কে এফআইআর লিখেছিল ?‘‘ আদালতকে সেই সময় লালন শেখের স্ত্রী জানান, তিনি লিখতে পারেন না ৷ তাই একজন তাঁকে সেই অভিযোগপত্র লিখে দিয়েছিল ৷ আর এই বক্তব্য শোনার পরেই, বিচারপতি সিআইডি-কে নির্দেশ দেন, এই অভিযোগপত্রে জোর করে মিথ্যে লেখানো হয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখতে ৷ তবে, সিবিআই আইনজীবী দাবি করেন, ‘‘মহিলা নিজেই বলছেন তিনি জানেন না ৷ আমরা নিশ্চিত এই এফআইআর-এর বয়ান লিখেছেন কোনও পুলিশ অফিসার ৷ এবং সেটা লালন শেখের স্ত্রী জানেনও না ৷’’
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি নির্দেশ দেন, রাজ্যই আপাতত তদন্ত করবে ৷ আর তদন্ত যাতে ভালোভাবে হয় তাই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিআইজি সিআইডি-কে ৷ সিবিআই-কে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কপি দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ 5 জানুয়ারি পরবর্তী শুনানি হবে ৷