কলকাতা, 12 ডিসেম্বর : দুপুরের পর হাসপাতালে ব্ল্যাক টি খেতে চাইলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । আর রাতে তিনি খেতে চাইলেন সুপ । এদিন তাঁর চেস্টে ফিজ়িওথেরাপি শুরু হয়েছে । তবে, তাঁর অনুরোধে কাল ইউরিনারি ক্যাথিটার খোলা হবে । সুস্থ বোধ করলে তিনি যদি বাড়ি ফিরতে অনুরোধ করেন তাহলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হবে । প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে আজ সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে এমনই জানানো হয়েছে ।
তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়ায় গত বুধবার, 9 ডিসেম্বর দুপুরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভরতি করা হয় । প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে আজ সন্ধ্যায় বেসরকারি এই হাসপাতালের CEO রূপালি বসু বলেন, " বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখনও নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রয়েছেন । সবার সঙ্গে কথা বলছেন । তাঁর ব্লাড প্রেসার, পালস সহ বিভিন্ন প্যারামিটার স্থিতিশীল রয়েছে । অ্যান্টিবায়োটিক স্টেরয়েড সহ সাপোর্টিভ মেডিসিন দেওয়া হচ্ছে । রাইলস টিউবের মাধ্যমে তিনি খাবার খাচ্ছেন । তাঁর ইউরিন আউটপুট সন্তোষজনক । স্টুল পাস করেছেন । আগামী সপ্তাহের শুরুতেই হয়ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে আমরা বাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারব ।"
আজ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ইউরিনারি ক্যাথিটার খোলা হবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল । তবে এদিন শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। কেন হয়নি ? হাসপাতালের CEO বলেন, "ইউরিনারি ক্যাথিটার কাল খোলা হবে । এটা আজকে খোলার পরিকল্পনা ছিল । বুদ্ধদেববাবু নিজেই আর একটা দিন অপেক্ষার জন্য অনুরোধ করেছেন ।"
রাইলস টিউব কবে খোলা হবে ? চিকিৎসক সৌতিক পান্ডা বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ দিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করেছেন । আজ থেকে তাঁর ফিজ়িওথেরাপি শুরু হয়ে গিয়েছে । চেস্ট ফিজ়িওথেরাপি হয়েছে । বেডের ধারে ওনাকে বসানো হয়েছিল পা ঝুলিয়ে, উনি কিছু সময় বসে ছিলেন । নিউট্রিশনের বিষয়টা মূলত আমরা রাইলস টিউবের মাধ্যমে দিচ্ছি ।"
চিকিৎসক সৌতিক পান্ডা বলেন, "আজ দুপুরের পর বুদ্ধদেববাবু নিজেই একটু চা খেতে চেয়েছিলেন । ব্ল্যাক টি চেয়েছিলেন । ওনাকে ব্ল্যাক টি দেওয়া হয়েছে । চা উনি পুরোটাই মুখে দিয়ে খেয়েছেন। আজ রাতে সুপ খেতে চেয়েছেন । সুপের ব্যবস্থা আমরা করছি । মোস্টলি দেখা যাচ্ছে, উনি লিকুইড খাবার বেশি প্রেফার করছেন । রাতে ওনার জন্য লিকুইড ডায়েটের ব্যবস্থা করা হবে । ওনার রাইলস টিউব এখনও আমরা খুলিনি । কারণ, ওনার নিউট্রিশন এখন খুব জরুরি । এই সময় যাতে রেস্পিরেটরি মাসলস স্ট্রেইন ঠিক থাকে, প্রোটিনের পরিমাণ যাতে ঠিক থাকে, তার জন্য মুখ দিয়ে যতক্ষণ না পর্যন্ত যথাযথভাবে উনি খেতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত রাইলস টিউব রাখা হবে।" তিনি বলেন, "বুদ্ধদেববাবুর শরীরের বাকি প্যারামিটারগুলি স্থিতিশীল রয়েছে । এখনও নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন চলছে । তবে মাঝে মধ্যে আমরা ভেন্টিলেশন খুলছি । ভেন্টিলেশন খোলা অবস্থায় উনি স্থিতিশীল থাকছেন । কোনও অসুবিধা এখনও পর্যন্ত আমাদের ফেস করতে হয়নি ।"
হাসপাতাল থেকে বুদ্ধদেববাবুকে কবে ছুটি দেওয়া হতে পারে ? চিকিৎসক সৌতিক পান্ডা বলেন, "এখনও পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টা, প্রতি দিন হিসাবে আমরা ওনার অ্যাসেস করছি । কারণ গত বছর আমরা দেখেছি একটু সুস্থ বোধ করলেই উনি অনুরোধ করেন যে বাড়ি চলে যাবেন । কারণ বাড়িতে ওনার একটা সেট আপ রেডি করা আছে । বাড়িতে বাইপ্যাপ আছে, নেবুলাইজ়ার আছে । বাড়িতে যাঁরা সর্বক্ষণের সঙ্গী তাঁরা ওনার পুরো বিষয়টা জানেন যে কীভাবে, কী করতে হয় । একটু সুস্থ বোধ করলে উনি বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন । এই অবস্থায় সব সময় আমরা এটার দিকে বার বার খেয়াল রাখি যে উনি কতটা কমফর্টেবল থাকবেন । উনি যদি হোম এনভায়রনমেন্টে বেশি কমফর্টেবল বোধ করেন, তাহলে আমরা সেই দিকেও খেয়াল রাখব ।"
চিকিৎসক আরও বলেন, "সেকেন্ডারি ইনফেকশন যাতে না হয় তার জন্য সব সময় আমাদের প্রচেষ্টা থাকে । সুতরাং তাড়াতাড়ি হসপাতালের এনভায়রনমেন্ট থেকে বুদ্ধদেববাবুকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে পারলে আমাদেরও ভালো লাগবে। আমরা প্রতিদিন অ্যাসেস করে দেখব । এর সঙ্গে ওনার কথাটার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আমাদের চলতে হবে । ওনার ইচ্ছেটার প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে । বুদ্ধদেববাবু যদি সুস্থ বোধ করে দ্রুত বাড়ি যেতে চান, আমরা এই অপশনটা মাথায় রেখেছি বাকি চিকিৎসা বাড়িতেও করা যেতে পারে । কারণ বাড়িতে ওনার সেটআপ আছে ।"