কলকাতা, 18 মে : শরীর ভালো নেই। দীর্ঘদিন ধরেই ঘরবন্দী। শেষ বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন দলের ব্রিগেড সমাবেশের দিন। এবার ফের বাইরে বেরোনোর ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন তিনি। সব ঠিক থাকলে অশক্ত শরীরেই ভোট দিতে যেতে দেখা যেতে পারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে।
স্ত্রী ও মেয়ে সুচেতনাকে নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ভোট দিতে যাওয়ার সেই ছবি সকলেরই পরিচিত। তবে আগামীকাল তা আবার দেখা যাবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এবার শরীর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচারে বেরোনো তো দূর শেষ কবে আলিমুদ্দিনে গিয়েছেন তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। তবে সব ঠিক থাকলে আগামীকাল যেতে পারেন পাঠভবন স্কুলে। দিতে পারেন ভোট ।
এদিকে অশক্ত বুদ্ধদেবের সঙ্গে দেখা করতে দলের অনেকেই তাঁর বাড়িতে এসেছেন। নিয়েছেন পরামর্শ। যেমন কয়েকদিন আগেই প্রচারে বেরিয়ে তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের CPI(M) প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায় ।
বাইরে বেরোতে গেলে পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে রাখতে হয়। ফুসফুস এবং দৃষ্টিশক্তির সমস্যা থাকায় যখন তখন বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেন না । ঘরের মধ্যেও চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় । চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এলেও খবরের কাগজের বড় হরফের লেখা এখনও নিজেই পড়েন। শিরোনাম পড়ার পর সবিস্তারে খবর পড়ে দেন স্ত্রী মীরা অথবা সর্বক্ষণের কোনও কর্মী। দূরদর্শনেও এখন নজর নেই তাঁর। একসময় আকাশবাণী এবং দূরদর্শনের খবর শুনতেন । অন্য খবরের চ্যানেল তিনি একদম দেখেন না। ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, তাঁর টেলিভিশন দেখতে ভালো লাগে না । প্রচারে বেরোতে না পারলেও কয়েকদিন আগে দলীয় মুখপত্রে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে তিনি লিখেছিলেন "ধান্দাবাজদের চৌকিদারকে হটাতেই হবে। তৃণমূল নামক বিপদকে পরাস্ত করুন, নাহলে রাজ্য বাঁচবে না। দেশে বামপন্থা, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীন অর্থনীতির বিকাশই বিকল্প পথ। ২০০৪ সালে সাম্প্রদায়িক শক্তি যেমন কোণঠাসা হয়েছিল, তেমনই ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়াও সম্ভব হয়েছিল। সংসদে বামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছিল, দেশে বামপন্থীদের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছিল। সেই বাস্তবতা এখনও দেশের সামনে রয়েছে। BJP-কে জায়গা করে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার এক বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল। আমাদের দরকার এই রাজনীতিকে মূল থেকে উৎপাটিত করা।"
দীর্ঘসময় ঘরবন্দী থাকলেও সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ণে এখনও মরচে ধরেনি । মুখপত্রে লিখেছেন, "বিশেষ করে তরুণ সমাজকে আমি বলব, সংশয়ের গভীরে যান । নিজেরাই এই দুই সরকারের পার্থক্যের মূল্যায়ন করুন। আমি বিশ্বাস করি আপনাদের মূল্যায়ন সঠিক হবে ।"
ব্রিগেড সমাবেশে অনেকেই তাঁর বক্তৃতা শুনতে চেয়েছিলেন। দলের অনেকেই চেয়েছিলেন, তিনি মঞ্চে উঠুন। তা না পারলেও ঘরে বসে থাকতে পারেননি । গিয়েছিলেন ব্রিগেডে । বেশ কিছুক্ষণ সেখানে ছিলেন। তবে গাড়ির মধ্যে। আর তাতেই উজ্জীবিত হয়েছিলেন দলীয় কর্মীরা। এবারও তিনি ভোট দেওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন । কারণ শরীর সঙ্গ না দিলেও মন যে মানে না।