কলকাতা, 13 এপ্রিল : দীপ্সিতা ধর ও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় । 2021-এ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই (এম) -র দুই তরুণী প্রার্থী । প্রচারে ঢেউ তুলেছেন দু‘জনেই । একদিকে যেমন সিপিআই (এম)-র প্রার্থী তালিকায় তারুণ্যের প্রাধান্য, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি দুই শিবিরেই গ্ল্যামার দুনিয়ার চাঁদের হাট ।
হঠাৎ করে দীপ্সিতা ধর ও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় দু’জনেই চলে এলেন শিরোনামে, কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কারণে । কারণটি একটি মিম । রবিবার সন্ধ্যাবেলা আচমকাই একটি মিম ভাইরাল হয় সিপিআই(এম)র এই দুই তরুণী এবং উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীকে নিয়ে । 'মিমতন্ত্র' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে জনৈকা শ্রীপর্ণা রয় মিমটি পোস্ট করেন ৷ যেখানে বিজেপির দুই তারকা প্রার্থী পায়েল সরকার ও শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের দুই তারকা সাংসদ মিমি চক্রবর্তী ও নুসরতের জাহানের সঙ্গে তুলনা টেনে দীপ্সিতা এবং মীনাক্ষীকে ‘কাজের মাসি’ বলে বর্ণনা করা হয় ।
"বাঙালি বাড়িতে যে সব মহিলাদের দেখা যায় । সেক্সি ননদ-বৌদি (পায়েল সরকার ও শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়), স্টাইলিশ দিদি-বোন (মিমি চক্রবর্তী ও নুসরতের জাহান) এবং কাজের মাসি (দীপ্সিতা ধর ও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়)" ৷ এই ছিল মিমটির মূল কথা । স্বভাবতই এইরকম একটি কুরুচিকর মিম নিয়ে নেট দুনিয়াতে সমালোচনার ঝড় বইছে গত রবিবার থেকেই । দীপ্সিতা এবং মীনাক্ষীর পাশে দাঁড়িয়েছে সুশীল সমাজ । অভিনেত্রী শ্রীলেখা মুখোপাধ্যায় তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছেন এই কুরুচিকর মিমের । শ্রীলেখা বলেন, “ওই তথাকথিত সেক্সি ননদ, বৌদি, দিদি, বোনদের এক লাখ দিয়ে গুণ করে একটা মীনাক্ষী বা দীপ্সিতা তৈরি করুক দেখি তবে কত মুরোদ । এর মাধ্যমে আবারও এদের কদর্য রুচির পরিচয় পাওয়া গেল । খেলা হবে আর রগড়ে দেব যাঁদের ভাষা, তাঁদের থেকে এ ছাড়া আর কি আশা করা যায় ৷” মার্জিত অথচ স্পষ্ট ভাষায় এর জবাব দিয়েছেন দীপ্সিতা এবং মীনাক্ষীও । সিপিআই(এম) নেতৃত্বও স্বাভাবিক ভাবে এই মিমের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে । এককালে ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিআই (এম)-এর একশ্রেণীর নেতাও কী এরকম কুরুচিকর মন্তব্য করেননি তৎকালীন বিরোধী নেত্রী এবং আজকের বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ? 2011 সালের বিধানসভার নির্বাচনের আগে এককালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিআই (এম) নেতা এবং আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্র থেকে রেকর্ড ভোটে জয়ী সাংসদ, প্রয়াত অনিল বসু মমতা বন্দোপাধ্যায়কে সোনাগাছির যৌনকর্মীর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন । এই নিয়ে পার্টির মধ্যেই অনিল বসু সমালোচিলত হন এবং তৎকালীন বাম মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্বয়ং অনিলবাবুকে কঠোর ভাষায় ভৎর্সনা করেন। এর আগে আর এক প্রয়াত সিপিআই(এম) নেতা, বিনয় কোঙার নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময় বেনজির আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে । নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেলে ওখানকার মহিলারা ওঁকে পশ্চাৎদেশ দেখাবে । কোঙারের এহেন উক্তিতে তাঁর তীব্র নিন্দা করে সুশীল সমাজ ।
আরও পড়ুন : 48 ঘণ্টার জন্য রাহুল সিনহার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা, নোটিশ দিলীপকে
অনিল বসুর ‘সোনাগাছি’ থেকে বিনয় কোঙারের ‘পশ্চাৎদেশ’ থেকে আজকের ‘কাজের মাসি’। সেই কুকথার স্রোত এবং রাজনীতিতে কুরুচির অনুপ্রেবেশের ধারা আজও একইভাবে চলছে ৷ যার জেরে নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলছেন আমজনতা ৷