ETV Bharat / state

খাগড়াগড়ের মূল চক্রী হাতকাটা নাসিরুল্লার ফাঁসির সাজা - হোলি আর্টিজ়ান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা

শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা । খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মাস্টার মাইন্ড ছিল সে । আজ বাংলাদেশের হোলি আর্টিজ়ান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় তার মৃত্যুদণ্ড দিল বাংলাদেশ আদালত ।

Hat kata Nasirulla
নাসিরুল্লা
author img

By

Published : Nov 27, 2019, 6:42 PM IST

Updated : Nov 27, 2019, 9:40 PM IST

কলকাতা, ২৭ নভেম্বর : মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হল খাগড়াগড় কাণ্ডের মূল চক্রীর ৷ নাসিরুল্লা ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা ৷ কুখ্যাত জঙ্গি হাবিবুরের মত অনেকেই তদন্তকারীদের জানিয়েছে, নাসিরুল্লাহ রীতিমতো কসাই । মায়া মমতার ছিটেফোঁটাও নেই । সেই হাতকাটা নাসিরুল্লাকে ফাঁসির সাজা দিল বাংলাদেশ আদালত । শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড ছিল সে । পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গি ঘাঁটি তৈরিতে সেই ছিল প্রথম মাস্টারমাইন্ড ।

নব্বইয়ের দশকে জঙ্গিবাদে হাতেখড়ি বাংলাদেশের নাসিরুল্লার । জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ সেই সময় সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতে তৈরি করবে সংগঠনের জাল । জামাত-উল-মুজাহিদিন এ কাজের ভার দেয় সবচেয়ে ধূর্ত "নেকড়েকে" । সূত্র জানাচ্ছে, জঙ্গিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ "লোন উলফ" নিয়েছে সে । NIA সূত্রে খবর, 1999-2000 সালে সে প্রথম ভারতে ঢোকে । মুর্শিদাবাদের লালগোলা সীমান্ত দিয়েই প্রথমবার ভারতে প্রবেশ । সীমান্তলাগোয়া মোকিম নগরে তৈরি করে ঘাঁটি । একটু একটু করে দখল করে নেয় মোকিমনগর মাদ্রাসা । মগজ ধোলাই করে দলে নেয় স্থানীয় হাবিবুর রহমানকে । তাকে মকিমনগর মাদ্রাসার রাঁধুনির দায়িত্ব দেয় । জঙ্গি প্রশিক্ষণের নানা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল তার । তারপর নাসিরুল্লা মোকিম নগর থেকেই সংগঠন গড়ে করিমপুরে ।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর । বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে । বিস্ফোরণের ঠিক আগে শাকিল আহমেদ ও সুবহান শেখের সঙ্গে হাত মিলিয়েই হাকিম খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরির বাড়ির দোতলায় বসে IED তৈরি করছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল । শাকিল এবং সুবহান ঘটনাস্থানেই মারা যায় । গুরুতর জখম হয় হাকিম । ঘটনার সময় ওই বাড়িতে ছিল দু'জন মহিলা, ছিল দুই শিশু । ঘটনার সময়ে বাড়ির মালিক আশরাফ আলি চৌধুরি পাশের নিজের বাড়িতেই স্নান করছিলেন । পাশাপাশি বাড়ি দু'টো তাদেরই । বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তিনি দোতলায় উঠে দেখেন, দরজায় ভিতর থেকে তালা দেওয়া । দুই মহিলা জানিয়ে দেন, কিছুই হয়নি । ঘরে কোনও পুরুষ নেই । তাই দরজা খোলা যাবে না । সেই দুই মহিলা হল আলিমা বিবি ও রাজিয়া বিবি । 2 অক্টোবরের সেই বিস্ফোরণে অন্যতম দোষী হাকিমের হাঁটুতে মারাত্মক ক্ষতি হয় । তাঁকে কলকাতার SSKM হাসপাতালে আনা হয় । সেখানে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । সেই মতো ১৭ অক্টোবর তাঁর প্রথম বার অস্ত্রোপচার হয় । কিন্তু তা সফল হয়নি । তাই পরে দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচারের হয় । সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোনাল্ড রস ভবনে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের পাঁচতলায় ঘণ্টাখানেক ধরে অস্ত্রোপচার হয় । তারপর একটু একটু করে সুস্থ হয়ে ওঠে সে । খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েছিল নাসিরুল্লাহ ।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহতদের অন্যতম, শাকিল গাজ়ির ঘনিষ্ঠ সহযোগী মতিউর রহমান ওরফে নুর আলম । মতিউরের বাড়ি নদিয়া জেলার কালীগঞ্জের মির্জাপুরে । মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় "বোরখা ঘর" নামে পোশাকের দোকানের আড়ালে শাকিল গাজ়ি বোমা সরবরাহের যে ডেরা তৈরি করেছিল, সেখানে মতিউর সর্বক্ষণের কর্মী ছিল । মতিউর নিজে বোরখা তৈরি করতে পারত । NIA-র হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে সে জানিয়েছে এমন তথ্য । NIA সূত্রে খবর, জঙ্গিদের হাতে তৈরি হওয়া গ্রেনেড, রকেট, সকেট বোমা বোরখা ঘরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল মতিউরের উপর । খাগড়াগড় বিস্ফোরণের দিন এই বোরখা ঘরেই ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা ।

তাকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ পুলিশ যে তথ্য দিয়েছিল তা বলছে, 2006 সালে সে ভারতে আসে । 2009 থেকে 2014 পর্যন্ত সে JMB-র ভারতীয় শাখার প্রধান ছিল । ভারতে JMB তৈরির মূল কারিগর সে । NIA বলছে 2006 সালের আগেও ভারতে নাসিরুল্লাহ অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে । বোমারু মিজ়ান ভারতে আসার অনেক আগে নাসিরুল্লাকে পাঠানো হয়েছিল এদেশে । সেই একটু একটু করে তৈরি করে সংগঠন । দেয় বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ । বেলডাঙ্গায় অস্ত্র কারখানা তৈরির বিষয়টিও নাসিরুল্লার মস্তিষ্কপ্রসূত ।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের উমরপুরে জামাত-উল-মুজাহিদিনের সাইবার সেল তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিল নাসিরুল্লা । কম্পিউটারে দক্ষ কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারকে সে জোগাড়ও করেছিল । অসমে মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজ়াল্ট করা ছাত্রদের দেওয়া হয়েছিল ল্যাপটপ । সেই ল্যাপটপেরই কয়েকটি জোগাড় করে নাসিরুল্লা । সেগুলি চলে আসে সাইবার সেলের সদস্যদের হাতে । কিন্তু এরই মাঝে ঘটে যায় খাগড়াগড় বিস্ফোরণ । নাসিরুল্লাহ বেলডাঙ্গা থেকে দ্রুত সীমান্ত পার করে চলে যায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে হোলি আর্টিজ়ান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার পরে উঠে আসে নাসিরুল্লাহের নাম । জানা যায় ওই জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র গিয়েছিল ভারত থেকে । ব্যবহার করেছিল মুঙ্গেরি অস্ত্র । মালদা সীমান্ত দিয়ে সেগুলি ঢোকানো হয়েছিল বাংলাদেশে । তত্ত্বাবধানে ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা । ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে । আজ শোনানো হল ফাঁসির সাজা ।

কলকাতা, ২৭ নভেম্বর : মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হল খাগড়াগড় কাণ্ডের মূল চক্রীর ৷ নাসিরুল্লা ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা ৷ কুখ্যাত জঙ্গি হাবিবুরের মত অনেকেই তদন্তকারীদের জানিয়েছে, নাসিরুল্লাহ রীতিমতো কসাই । মায়া মমতার ছিটেফোঁটাও নেই । সেই হাতকাটা নাসিরুল্লাকে ফাঁসির সাজা দিল বাংলাদেশ আদালত । শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড ছিল সে । পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গি ঘাঁটি তৈরিতে সেই ছিল প্রথম মাস্টারমাইন্ড ।

নব্বইয়ের দশকে জঙ্গিবাদে হাতেখড়ি বাংলাদেশের নাসিরুল্লার । জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ সেই সময় সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতে তৈরি করবে সংগঠনের জাল । জামাত-উল-মুজাহিদিন এ কাজের ভার দেয় সবচেয়ে ধূর্ত "নেকড়েকে" । সূত্র জানাচ্ছে, জঙ্গিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ "লোন উলফ" নিয়েছে সে । NIA সূত্রে খবর, 1999-2000 সালে সে প্রথম ভারতে ঢোকে । মুর্শিদাবাদের লালগোলা সীমান্ত দিয়েই প্রথমবার ভারতে প্রবেশ । সীমান্তলাগোয়া মোকিম নগরে তৈরি করে ঘাঁটি । একটু একটু করে দখল করে নেয় মোকিমনগর মাদ্রাসা । মগজ ধোলাই করে দলে নেয় স্থানীয় হাবিবুর রহমানকে । তাকে মকিমনগর মাদ্রাসার রাঁধুনির দায়িত্ব দেয় । জঙ্গি প্রশিক্ষণের নানা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল তার । তারপর নাসিরুল্লা মোকিম নগর থেকেই সংগঠন গড়ে করিমপুরে ।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর । বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে । বিস্ফোরণের ঠিক আগে শাকিল আহমেদ ও সুবহান শেখের সঙ্গে হাত মিলিয়েই হাকিম খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরির বাড়ির দোতলায় বসে IED তৈরি করছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল । শাকিল এবং সুবহান ঘটনাস্থানেই মারা যায় । গুরুতর জখম হয় হাকিম । ঘটনার সময় ওই বাড়িতে ছিল দু'জন মহিলা, ছিল দুই শিশু । ঘটনার সময়ে বাড়ির মালিক আশরাফ আলি চৌধুরি পাশের নিজের বাড়িতেই স্নান করছিলেন । পাশাপাশি বাড়ি দু'টো তাদেরই । বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তিনি দোতলায় উঠে দেখেন, দরজায় ভিতর থেকে তালা দেওয়া । দুই মহিলা জানিয়ে দেন, কিছুই হয়নি । ঘরে কোনও পুরুষ নেই । তাই দরজা খোলা যাবে না । সেই দুই মহিলা হল আলিমা বিবি ও রাজিয়া বিবি । 2 অক্টোবরের সেই বিস্ফোরণে অন্যতম দোষী হাকিমের হাঁটুতে মারাত্মক ক্ষতি হয় । তাঁকে কলকাতার SSKM হাসপাতালে আনা হয় । সেখানে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । সেই মতো ১৭ অক্টোবর তাঁর প্রথম বার অস্ত্রোপচার হয় । কিন্তু তা সফল হয়নি । তাই পরে দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচারের হয় । সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোনাল্ড রস ভবনে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের পাঁচতলায় ঘণ্টাখানেক ধরে অস্ত্রোপচার হয় । তারপর একটু একটু করে সুস্থ হয়ে ওঠে সে । খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েছিল নাসিরুল্লাহ ।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহতদের অন্যতম, শাকিল গাজ়ির ঘনিষ্ঠ সহযোগী মতিউর রহমান ওরফে নুর আলম । মতিউরের বাড়ি নদিয়া জেলার কালীগঞ্জের মির্জাপুরে । মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় "বোরখা ঘর" নামে পোশাকের দোকানের আড়ালে শাকিল গাজ়ি বোমা সরবরাহের যে ডেরা তৈরি করেছিল, সেখানে মতিউর সর্বক্ষণের কর্মী ছিল । মতিউর নিজে বোরখা তৈরি করতে পারত । NIA-র হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে সে জানিয়েছে এমন তথ্য । NIA সূত্রে খবর, জঙ্গিদের হাতে তৈরি হওয়া গ্রেনেড, রকেট, সকেট বোমা বোরখা ঘরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল মতিউরের উপর । খাগড়াগড় বিস্ফোরণের দিন এই বোরখা ঘরেই ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা ।

তাকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ পুলিশ যে তথ্য দিয়েছিল তা বলছে, 2006 সালে সে ভারতে আসে । 2009 থেকে 2014 পর্যন্ত সে JMB-র ভারতীয় শাখার প্রধান ছিল । ভারতে JMB তৈরির মূল কারিগর সে । NIA বলছে 2006 সালের আগেও ভারতে নাসিরুল্লাহ অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে । বোমারু মিজ়ান ভারতে আসার অনেক আগে নাসিরুল্লাকে পাঠানো হয়েছিল এদেশে । সেই একটু একটু করে তৈরি করে সংগঠন । দেয় বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ । বেলডাঙ্গায় অস্ত্র কারখানা তৈরির বিষয়টিও নাসিরুল্লার মস্তিষ্কপ্রসূত ।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের উমরপুরে জামাত-উল-মুজাহিদিনের সাইবার সেল তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিল নাসিরুল্লা । কম্পিউটারে দক্ষ কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারকে সে জোগাড়ও করেছিল । অসমে মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজ়াল্ট করা ছাত্রদের দেওয়া হয়েছিল ল্যাপটপ । সেই ল্যাপটপেরই কয়েকটি জোগাড় করে নাসিরুল্লা । সেগুলি চলে আসে সাইবার সেলের সদস্যদের হাতে । কিন্তু এরই মাঝে ঘটে যায় খাগড়াগড় বিস্ফোরণ । নাসিরুল্লাহ বেলডাঙ্গা থেকে দ্রুত সীমান্ত পার করে চলে যায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে হোলি আর্টিজ়ান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার পরে উঠে আসে নাসিরুল্লাহের নাম । জানা যায় ওই জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র গিয়েছিল ভারত থেকে । ব্যবহার করেছিল মুঙ্গেরি অস্ত্র । মালদা সীমান্ত দিয়ে সেগুলি ঢোকানো হয়েছিল বাংলাদেশে । তত্ত্বাবধানে ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা । ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে । আজ শোনানো হল ফাঁসির সাজা ।

Intro:কলকাতা, ২৭ নভেম্বর: কুখ্যাত জঙ্গি হাবিবুরের মত অনেকেই তদন্তকারীদের জানিয়েছে, নাসিরুল্লাহ রীতিমতো কসাই। মায়া মমতার ছিটেফোঁটাও নেই। বিশ্বাস শুধু একটা শব্দবন্ধেই। জেহাদ। আর তার জন্য রক্তের হোলি খেলতে একটুও হৃদয় কাঁপে না তার। এহেন হাত কাটা নাসিরুল্লাহকে ফাঁসির সাজা দিল বাংলাদেশ আদালত। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড ছিল সে। পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গি ঘাঁটি তৈরিতে সেই ছিল প্রথম হেডমাস্টার।Body:নব্বইয়ের দশকে জঙ্গিবাদে হাতে খড়ি বাংলাদেশের নাসিরুল্লাহের। জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ সেই সময় সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ভারতে তৈরি করবে সংগঠনের জাল। জামাতুল মুজাহিদীনের আমের এ কাজের ভার দেয় সবচেয়ে “ধূর্ত নেকড়েকে"। সূত্র জানাচ্ছে, জঙ্গিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ “ লোনলি উলফ" নিয়েছে সে। NIA সূত্রে খবর, 1999-2000 সালে সে প্রথম ভারতের ঢোকে। মুর্শিদাবাদের লালগোলা সিমান্ত দিয়েই প্রথমবার ভারতে প্রবেশ। তারপর সীমান্ত লাগোয়া মোকিম নগরে তৈরি করে ঘাঁটি। একটু একটু করে দখল করে নেয় মকিমনগর মাদ্রাসা। মগজ ধোলাই করে দলে নেয় স্থানীয় হাবিবুর রহমানকে। তাকে মকিমনগর মাদ্রাসার রাঁধুনীর দায়িত্ব দেয়। জঙ্গি প্রশিক্ষণের নানা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল তার। তারপর নাসিরুল্লাহ মোকিম নগর থেকেই সংগঠন গড়ে করিমপুরে।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের ঠিক আগে শাকিল আহমেদ ও সুবহান শেখের সঙ্গে হাত মিলিয়েই হাকিম খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরীর বাড়ির দোতলায় বসে আইইডি তৈরি করছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। শাকিল এবং সুবহান ঘটনাস্থলেই মারা যায়। গুরুতর আহত হয় হাকিম। ঘটনার সময় ওই বাড়িতে ছিল দুজন মহিলা, ছিল দুই শিশু। ঘটনার সময়ে বাড়ির মালিক আশরাফ আলি চৌধুরী পাশের নিজের বাড়িতেই স্নান করছিলেন। পাশাপাশি বাড়ি দুটো তাদেরই। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তিনি দোতলায় উঠে দেখেন, দরজায় ভিতর থেকে তালা দেওয়া। দুই মহিলা জানিয়ে দেন, কিছুই হয়নি। ঘরে কোনও পুরুষ নেই। তাই দরজা খোলা যাবে না। সেই দুই মহিলা হল আলিমা বিবি ও রাজিয়া বিবি। 2 অক্টোবরের সেই বিস্ফোরণে অন্যতম দোষী হাকিমের হাঁটুতে মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সেই মতো ১৭ অক্টোবর তাঁর প্রথম বার অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তা সফল হয়নি। তাই পরে দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচারের হয়। সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রোনাল্ড রস ভবনে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের পাঁচতলায় ঘণ্টাখানেক ধরে অস্ত্রোপচার হয়। তারপর একটু একটু করে সুস্থ হয়ে ওঠে সে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ওতপ্রত ভাবে জড়িয়েছিল নাসিরুল্লাহ।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহতদের অন্যতম, শাকিল গাজির ঘনিষ্ঠ সহযোগী মতিউর রহমান ওরফে নুর আলম। মতিউরের বাড়ি নদিয়া জেলার কালীগঞ্জের মির্জাপুরে। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ‘বোরখা ঘর’ নামে পোশাকের দোকানের আড়ালে শাকিল গাজি বোমা সরবরাহের যে ডেরা তৈরি করেছিল, সেখানে মতিউর সর্বক্ষণের কর্মী ছিল। মতিউর নিজে বোরখা তৈরি করতে পারত। এনআইএর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে সে জানিয়েছে এমন তথ্য। এনআইএ সূত্রে খবর, জঙ্গিদের হাতে তৈরি হওয়া গ্রেনেড, রকেট, সকেট বোমা বোরখা ঘরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল মতিউরের ওপর। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের দিন এই বোরখা ঘরেই ছিল হাত কাটা নাসিরুল্লাহ।

তাকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ পুলিশ যে তথ্য দিয়েছিল তা বলছে, ২০০৬ সালে সে ভারতে আসে । ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সে JMB-র ভারতীয় শাখার প্রধান ছিল। ভারতে JMB তৈরীর মূল কারিগর দিচ্ছিল সে। এনআইএ বলছে 2006 সালের আগেও ভারতে নাসিরুল্লাহ অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বোমারু মিজান ভারতে আসার অনেক আগে নাসিরুল্লাকে পাঠানো হয়েছিল এদেশে। সেই একটু একটু করে তৈরি করে সংগঠন। দেয় বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ। বেলডাঙ্গায় অস্ত্র কারখানা তৈরির বিষয়টিও নাসিরুল্লাহের মস্তিষ্কপ্রসূত।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের উমরপুরে জামাতুল মুজাহিদিনের সাইবের সেল তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিল নাসিরুল্লাহ। কম্পিউটারে দক্ষ কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারকে সে জোগাড়ও করেছিল। অসমে মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা ছাত্রদের দেওয়া হয়েছিল ল্যাপটপ। সেই ল্যাপটপেরই কয়েকটি জোগাড় করে নাসিরুল্লাহ। সেগুলি চলে আসে সাইবার সেলের সদস্যদের হাতে। কিন্তু এরই মাঝে ঘটে যায় খাগড়াগড় বিস্ফোরণ। নাসিরুল্লাহ বেলডাঙ্গা থেকে দ্রুত সীমান্ত পার করে চলে যায় বাংলাদেশ।
Conclusion:বাংলাদেশি হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরে উঠে আসে নাসিরুল্লাহের নাম। জানা যায় ওই জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র গিয়েছিল ভারত থেকে। ব্যবহার করেছিল মুঙ্গেরি অস্ত্র। মালদা সীমান্ত দিয়ে সেগুলি ঢোকানো হয়েছিল বাংলাদেশ। তার তত্ত্বাবধানে ছিল হাত কাটা নাসিরুল্লাহ। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। তারপর আজ শোনানো হল ফাঁসির সাজা।
Last Updated : Nov 27, 2019, 9:40 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.