কলকাতা, 11 ডিসেম্বর : ভারতে ATM স্কিমিং করে প্রতারণার ঘটনায় পূর্ব ইউরোপের রোমানিয়ার নাম একাধিক বার উঠে এসেছে । ঠিক যে ভাবে ভারতে ইতিপূর্বে সাইবার ক্রাইমের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের জামতারা এলাকার যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ । কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মার মতে ATM স্কিমিংয়ের ঘটনায় ঝাড়খণ্ডের জামতারা এলাকা যেন রোমানিয়ার সমগোত্রীয় ।
কলকাতায় সম্প্রতি ATM প্রতারণার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে রোমানিয়ার বাসিন্দা সিলভিউ ফ্লোরিন স্পিরিডনকে । তাকে জেরা করা হচ্ছে। তবে সিলভিউয়ের কাছ থেকে তথ্য বের করতে বেগ পেতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের । অবশ্য তার গ্যাজেট পরীক্ষা করে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে । যার ভিত্তিতে গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধরের বক্তব্য, "এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে সিলভিউ এই চক্রের কিংপিন । কারণ তার কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চক্রের অন্যান্যরা রিপোর্ট পাঠিয়েছে ।"
তদন্তকারীদের মতে, ফোন করে ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের প্রতারণার ঘটনা জামতারায় এখন রীতিমতো কুটির শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে । সেখানে রীতিমতো কর্পোরেট কায়দায় খোলা হয়েছে প্রতারণার অফিস । সেখান থেকে চালানো হচ্ছে সংগঠিত অপরাধ । অন্যদিকে গোটা পৃথিবীর কাছে পূর্ব ইউরোপের রোমানিয়া হয়ে উঠেছে স্কিমিং ও হ্যাকিংয়ের কেন্দ্র । গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জেরায় সিলভিউ জানিয়েছে, রোমানিয়ায় তার পরিচিত ও বন্ধুদের অনেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত । সেখানে কার্যত ঘরে ঘরে লোকজন জানে ATM স্কিমিংয়ের কায়দা । চলতি বছরের মার্চে প্রথম ভারতে আসে সিলভিউ । তারপর মোট তিনবার এদেশে এসেছে সে । এরই মাঝে এপ্রিল মাসে কলকাতার ATM-এ বসানো হয় স্কিমার । অভিযোগ, সেই স্কিমার থেকেই তথ্য নিয়ে সে ফিরেছিল দেশে । পরে ভারতে ফিরে এসে সেই তথ্যের সাহায্যে সিলভিউ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের অ্য়াকাউন্ট থেকে গোপনে টাকা তুলেছিল । সেই টাকায় সে দিল্লিতে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছিল । তদন্তকারীদের একজনের কথায়, "সরাব-শাবাব-কাবাব সবই চলছিল প্রতারণার টাকায় । দিল্লিতে যে হোটেলে সে ছিল তার ঘর ভাড়া ছিল প্রতিদিন 4 হাজার টাকা ।"
গোয়েন্দারা সিলভিউয়ের ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন খতিয়ে কিছু তথ্য পেয়েছে । জানা গেছে, সে নিয়মিত ডার্কওয়েব সার্ফ করত । সেখান থেকে বিটকয়েন কিনেছিল । তথ্য বলছে, এক বিটকয়েনের সাম্প্রতিক দাম প্রায় 5 লাখ টাকা । সে 1 বিট কয়েন টাকা পাঠিয়েছিল বাড়িতে । অভিযোগ, 10 দিনের মধ্যে প্রায় 20 লাখ টাকা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়েছে সিলভিউ । তার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে পাওয়া গেছে প্রায় 350 টি সন্দেহজনক মেসেজ । যেখানে এই চক্রের অন্যান্যরা তাকে কার্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন রিপোর্ট পাঠিয়েছে । পাশাপাশি তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ATM স্কিমিংয়ের যন্ত্র সহ অন্যান্য ডিভাইস । এছাড়া পাওয়া গেছে 55টি প্লাস্টিক কার্ড । যেগুলিতে বিভিন্ন ATM-এর তথ্যের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ লাগিয়ে প্রতারণা চালাচ্ছিল সে । আর সে সব দেখেই গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই ব্যক্তি ATM প্রতারণার মাস্টারমাইন্ড ।