কলকাতা, 23 জুন : অমিত আগ্নেয়াস্ত্র পেল কোথা থেকে? এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের । এখনও পর্যন্ত যা হাতে তথ্য ঠেকেছে, সেই অনুযায়ী কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পর সেই চত্বরেই প্রায় এক ঘণ্টা ছিল অমিত । তাহলে কি সেইসময় কোনও ব্যক্তি তাকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে যান ? কিন্তু কে সে? ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বিমানবন্দরে এক আত্মীয়কে ডেকে পাঠিয়েছিল অমিত । সেই আত্মীয়কেই বলেছিল, ছেলেকে ভাইয়ের বাড়িতে রেখে আসার জন্য । ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, " অমিত আমাকে বলেছিল, ছেলেকে ভাইয়ের বাড়িতে পৌঁছে দাও । আমার একটা কাজ আছে সেটা মিটিয়ে আসছি ।" লালবাজারের গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই সেই ব্যক্তিকে ডেকে পাঠিয়েছেন । তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । অমিতের কললিস্ট জোগাড় করেছে পুলিশ । কলকাতায় নামার পর থেকে সে কার কার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে । দেখা হচ্ছে বিমান বন্দর চত্বরের সব CCTV ফুটেজ ।
পরিকল্পনা একদিনের নয় । লকডাউনের মাঝে রীতিমতো ঠান্ডা মাথায় পুরো চিত্রনাট্য তৈরি করেছিল পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট অমিত আগরওয়াল । তারপর একটু একটু করে টাইপ করেছিল 67 পাতার স্বীকারোক্তি । সেই স্বীকারোক্তি প্রিন্ট আউট নিয়েই পাড়ি দিয়েছিল বেঙ্গালুরুতে । সেখানে স্ত্রী শিল্পীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে সে । তারপর ছেলেকে নিয়ে কলকাতা ফিরে আসে । এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা যতটা পড়তে পেরেছেন, তার পরতে পরতে রয়েছে সম্পর্কের জটিলতার কথা । ভিতর থেকে ভেঙে পড়ার কথা । বেঙ্গালুরু গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ব্যাপক ঝামেলা হয়েছিল । তারপরই খুনের ঘটনা ।
বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুরমের ব্রিগেড মেট্রোপলিস অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন শিল্পী । সঙ্গে থাকত ছেলে । একটা সময় এই অ্যাপার্টমেন্টটে থাকত অমিতও । স্ত্রী'র সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর সে উত্তরপাড়ায় চলে আসে । তবে মাঝেমধ্যে ওই অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাটে যেত । বেঙ্গালুরুতেই স্ত্রী'র সঙ্গে ডিভোর্সের মামলা চলছিল তার । সেই মামলার সূত্রে হোক কিংবা ছেলেকে দেখার জন্য, মাঝেমধ্যেই বেঙ্গালুরু চলে যেত অমিত । শিল্পীর কাছে শুধু ছেলের অধিকার চেয়েছিল । বিষয়টি নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেও অনেকবার কথাও বলেছিল । কিন্তু, কেউ হয়তো মানতে চায়নি । তদন্তকারীদের ধারণা, তা থেকেই তৈরি হয়েছিল জিঘাংসা ।
গতকাল সন্ধ্যায় ফুলবাগান থানা এলাকার RK সমাধি রোডের রামেশ্বরম বিল্ডিংয়ের B-ব্লকে শ্বশুর বাড়ির ফ্লাটে আসে অমিত । স্ত্রী শিল্পীর সঙ্গে তার ডিভোর্সের বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয় শ্বশুর সুভাষ ধানধানিয়া এবং শাশুড়ি ললিতা ধানধানিয়ার সঙ্গে । চলে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় । অন্তত পুলিশকে তেমনই জানিয়েছেন 70 বছরের সুভাষ । এই সময় হঠাৎই অমিত পিস্তল বের করে খুব কাছ থেকে ললিতাকে গুলি করে । খুবই ভয় পেয়ে যান সুভাষ । কোনওরকমে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে বাইরের দিক থেকে দরজা বন্ধ করে দেন তিনি । ছুটে চলে যান প্রতিবেশীদের ফ্ল্যাটে । এরপরই ফুলবাগান থানায় খবর দেন । পুলিশ এসে শাশুড়ি এবং জামাইয়ের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে । মেঝেতেই পড়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র । অমিতের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয়েছে 67 পাতার স্বীকারোক্তি ।