কলকাতা, 13 নভেম্বর : সদ্যসমাপ্ত বিহার নির্বাচনে বহু কেন্দ্রে ভোট কেটে মহাজোটের যাত্রাভঙ্গ করেছে আসাউদ্দিন ওয়াসির মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) । বিহার নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন যে আসলে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করে BJP-র সুবিধা করার জন্যই আসরে নেমেছেন AIMIM। সামনের বছর বাংলার ভোট এবং অনেকেরই আশঙ্কা যে এখানেও বহু জেলায় সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করে BJP-র পথ মসৃণ করবে ওয়াইসি দল । এরকমই জটিল পরিস্থিতিতে " বাংলায় BJP-কে রুখতে" আসন্ন নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বধীন তৃণমূল কংগ্রেসকে খোলাখুলি জোটের আহ্বান জানাল AIMIM নেতৃত্ববৃন্দ ।
ETV ভারতকে একান্ত এলাপচারিতায় AIMIM-র জাতীয় মুখপাত্র এবং দলের পশ্চিমবঙ্গ পর্যবেক্ষক, আসিম ওয়াকার জানান, ‘‘শুধুমাত্র BJP-কে রোখার জন্য আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে জোটের আহ্বান জানাচ্ছে AIMIM। 2019 লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে এটা পরিষ্কার যে তৃণমূল কংগ্রেস একক শক্তিতে কিছুতেই ঠেকাতে পারবে না BJP-কে । তাই আমাদের নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসি চান যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে লড়াই করতে । এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঠিক করতে হবে তিনি কী চান । উনি জোটে রাজি হলে খুব ভালো । নয়ত আমরা নিজের মতো লড়বো । পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই প্রার্থী দেবার ইচ্ছা আছে আমাদের । ঠিক কোথায় কোথায় এবং কত প্রার্থী আমরা দেব সেটা ঠিক হবে খুবই তাড়াতাড়ি ৷ "
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই জোটের আহ্বান নিয়ে একেবারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন । রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক, তাপস রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু এই জোটের ব্যাপারটা খুবই স্পর্শকাতর ইশু ৷ তাই এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার বা কোনও কিছু বলবার অধিকার একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর ৷"
একই বক্তব্য রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের । "এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুতর ব্যাপার । তাই এই ব্যাপারে যা বলার মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ বলবেন না ৷" তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন যে বাংলাতে যত প্রকল্প হয়েছে তাতে সব ধর্মের মানুষই উপকৃত হয়েছে । শোভনদেববাবু আরও বলেন, "বাংলার রাজনীতি সচেতন মানুষ চিরকালই ভোট দেন কাজের নিরিখে । আগামী বছরও তাঁরা তাই দেবেন আশা করি । তাই আমি মনে করি না যে আসাউদ্দিন ওয়াসির দল কোনও বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারবে ৷"
নিখিল ভারত সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, মহম্মদ কামরুজ্জামানও মনে করেন BJP-কে হারাতে ছোটো বড় সব দলেরই উচিত একত্রিত হওয়া । তিনি বলেন, "সব রাজনৈতিক দলই মুখে বলে যে BJP প্রধান শত্রু । কিন্তু নির্বাচনের আগে জোটের কার্যকারিতা বজায় রাখতে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে যে সদর্থক পদক্ষেপ করা দরকার , তেমন কোনও পদক্ষেপ দেখতে পাই না ৷ AIMIM-ও রাজনীতি করতেই ময়দানে নেমেছে ৷ তাই BJP-কে ঠেকানোর জন্য সব ত্যাগ উনিই বা করতে যাবেন কেন ?"
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি শেষ পর্যন্ত ওয়াসির দল একাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে তাহলে অশেষ চিন্তার কারণ আছে কংগ্রেস- বাম জোট এবং তৃণমূল কংগ্রেস, উভয়পক্ষেরই । এই মুহূর্তে বিহার সংলগ্ন উত্তর দিনাজপুর জেলা ছাড়াও, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলাতেও AIMIM-র সংগঠন যথেষ্ট মজবুত । এছাড়াও কলকাতা এবং কলকাতা সংলগ্ন হাওড়া, উত্তর 24 পরগনা এবং দক্ষিণ 24 পরগনার উর্দুভাষী সংখ্যালঘু মানুষদের মধ্যেও AIMIM যথেষ্ট সক্রিয় । তাই হতেই পারে যে নিজে কোনও আসন না জিতলেও কিছু ক্ষেত্রে বাম -কংগ্রেস জোট এবং তৃণমূলের বাড়া ভাতে ছাই দিল AIMIM । ঠিক যেমনটা হয়েছে বিহারে । ঠাকুরগঞ্জের মতো কিছু আসনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু ভোট টেনে মহাজোটের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে AIMIM ।
AIMIM মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুর জেলাতে প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে । এই জেলাগুলিতে এখনও কংগ্রেসের সুনিশ্চিত ভোট ব্যাঙ্ক আছে । রাজ্যে AIMIM-র প্রভাব নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরি বলেন, "এটা অনস্বীকার্য যে বিহারে কিছু আসনে সংখ্যালঘু ভোট বিভাজন করে AIMIM, BJP-র সুবিধা করে দিয়েছে । তাই আমাদের সবাইকে, বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে সজাগ থাকতে হবে ৷ "
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কংগ্রেস নেতা বলেন যে পশ্চিমবঙ্গে মূলত AIMIM-র প্রভাব উর্দুভাষী সংখ্যালঘুদের মধ্যে যা বাংলার সমস্ত সংখ্যালঘু জনসংখ্যার মাত্র 6 শতাংশ । "আমার মনে হয় না যে বাংলাভাষী মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে AIMIM-র প্রভাব খুব বেশি আছে । তাই শুধু উর্দুভাষী মুসলমান সমাজের উপর নির্ভর করে বেশিদূর এগোনো সম্ভব হবে না বলেই আমার মনে হয় ৷"