কলকাতা, 9 অগাস্ট : 3 জুলাই SSKM হাসপাতালে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন হয় তাঁর ৷ ব্রেন ডেথ ঘোষিত এক রোগীর হৃদযন্ত্র বসে শরীরে ৷ গতকাল ছুটি পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে৷ তবে বিরাম নেই অধ্যাবসায়ে ৷ প্রতিস্থাপনের কথা শোনার পর থেকেই ইন্টারনেটে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পড়ে ফেলেছেন ৷ ভয় পান যদি সংক্রামিত হয় ৷ আর, এসবের মধ্যেই WBCS-এ সফল হওয়ার জন্য আবার পড়া শুরু করতে চান মৃন্ময় বিশ্বাস ৷ আপাতত সুস্থ রয়েছেন তিনি ৷
নদিয়ার তেহট্ট থানার অন্তর্গত বেতাই গ্রামের বাসিন্দা মৃন্ময় । WBCS-এ সফল হওয়ার লক্ষ্যে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় এসে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি । তাঁর এই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক অসুস্থতা । চাকরির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পড়াশোনাতেও ঘটে ব্যাঘাত । ধরা পড়ে হৃদযন্ত্রের সমস্যা । ৭-৮ মাস আগে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, মৃন্ময়ের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা ছাড়া আর অন্য কোনও উপায় নেই । পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছিল । সঙ্গে বাড়তে থাকে আশঙ্কা । কীভাবে, কী হবে! প্রতিস্থাপনের জন্য একদিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকে । এর সঙ্গে চলতে থাকে হৃদযন্ত্র পাওয়ার অপেক্ষা । অন্যদিকে, হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের বিষয়ে ইন্টারনেটে তথ্যের পর তথ্য ঘেঁটে চলেন মৃন্ময় । হৃদযন্ত্র প্রথম কবে কোথায় কীভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল ? কোন চিকিৎসক প্রতিস্থাপন করেছিলেন? কবে প্রতিস্থাপন সফল হল? এসব বিষয়ে বহু তথ্য এখন মৃন্ময়ের নখদর্পণে ।
SSKM হাসপাতাল থেকে গতকাল পলতায় মাসির বাড়িতে ফিরেছেন মৃন্ময় । দিন কয়েক পরে আবার তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যেতে হবে SSKM হাসপাতালে । সংক্রমণ এড়িয়ে চলার জন্য বাড়িতে কীভাবে থাকতে হবে, সেসব বিষয়ে বলে দিয়েছেন চিকিৎসকরা । বাড়ি ফেরার পথে মৃন্ময় বলেন, "হাসপাতালের বদ্ধ ঘরে এতদিন থাকার পর, এখন বাড়ির পরিবেশে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে । সংশয়ও রয়েছে । এখনও মাস তিনেক ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করেছেন চিকিৎসকরা । জানি না, এরপর কী বলবেন !" কেন সংশয়ে রয়েছেন? তিনি বলেন, "সংক্রমণের সংশয় । সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা । কিন্তু, ভবিষ্যতে কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি । হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের বিষয়ে চিকিৎসকদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নেই ।" একথার পাশাপাশি অনর্গল তিনি বলতে শুরু করেন হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য ।
মৃন্ময় আরও বলেন, "অসুস্থতার জন্য দেড় বছর পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না । চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আবার শুরু করব ।" WBCS-এ সফল হওয়ার লক্ষ্যেও আপনার প্রস্তুতি চলছিল । বলেন, "WBCS-এ সফল হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে । এর জন্য আবার প্রস্তুতি নেব । আবার চেষ্টা করব । কিন্তু চাকরির বাজারের যা অবস্থা, তাতে যে কোনও সরকারি চাকরি হলেই জয়েন করব ।" মৃন্ময় বলেন, "গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের কথা বলেছিলেন চিকিৎসকরা । প্রতিস্থাপনের পরে এখন নতুন জীবন । সবাই খুশি ।" WBCS-এ সফল হওয়ার স্বপ্নের পথে যেখানে থেমে গেছিলেন, সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চান তিনি । আপাতত, তাঁর পিছু ছাড়ছে না সংক্রমণের আশঙ্কা ।
3 জুলাই SSKM হাসপাতালে এই প্রথম কোনও রোগীর শরীরে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়েছে । ব্রেন ডেথ ঘোষিত হাওড়ার বাসিন্দা অঞ্জনা ভৌমিক (49)-এর হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়েছে মৃন্ময়ের শরীরে ।