দুর্গাপুর, 18 মে: বিচারপতি অমৃত সিনহার রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, পালানোর পক্ষপাতী নন তিনি । প্রয়োজনে জনসংযোগ কর্মসূচি থামিয়ে তদন্তে সহযোগিতা করবেন ।
বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশই বহাল রেখে বিচারপতি অমৃতা সিনহা এদিন জানিয়ে দিয়েছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তল ঘোষকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোনও বাধা নেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির । উলটে আদালতের সময় নষ্টের জন্য উভয়কে 25 লক্ষ টাকা করে জরিমানা দেওয়ার কথা বলেছেন বিচারপতি । এদিন তারই প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অভিষেক জানিয়ে দিলেন, দরকার হলে জনসংযোগ কর্মসূচি একদিনের জন্য থামিয়ে তদন্তের মুখোমুখি হতে তিনি প্রস্তুত ।
এদিন অভিষেক বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বলেছে আমাকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, দিল্লিতে না ডেকে আমাকে কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে । এরপরেও ইডি আমাকে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছে আমি গিয়েছি । আমাকে যদি কোনও মামলায় কোনও তদন্তকারী সংস্থা ডাকে, আমি অবশ্যই যাব । আপনারা দেখছেন ঝড় জল বৃষ্টির মধ্যেও আমাদের জনসংযোগ যাত্রা চলছে । একদিনের জন্যও আমরা এই কর্মসূচিকে থামাইনি । যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা বেরিয়েছি তাতে আগামিদিন মানুষের মতামত নিয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গঠন করা হবে । সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে আমরা কাজ করছি । কিন্তু তদন্তের কারণে কোনও সংস্থা যদি আমাকে সমন পাঠিয়ে ডাকে । প্রয়োজন হলে যাত্রা একদিনের জন্য থামিয়ে তদন্তকারী সংস্থার অফিসে যাব । এবং তাদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করা আমার কর্তব্য ।’’
এখানেই শেষ নয় এই রায় নিয়ে তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অভিষেক আরও বলেন, ‘‘যেকোনও বিচারপতি রায় দিতে পারেন ৷ এটা তাঁর এক্তিয়ার । ভারতবর্ষের একজন নাগরিক হিসাবে আমার কাছে সুপ্রিম কোর্ট এবং ডিভিশন বেঞ্চের রাস্তাও খোলা রয়েছে । আমি অর্ডারের কপি এখনও হাতে পাইনি । অর্ডারের কপি হাতে পেলে আগামিদিন আমি ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করতে পারি এবং আমি সুপ্রিম কোর্টেও আপিল করতে পারি । একজন দেশের নাগরিক হিসেবে আমার কাছে এই অপশনগুলি খোলা রয়েছে ।’’
এদিন সাংবাদিকদের সামনে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন অভিষেক । তিনি বলেন, ‘‘আমরা আবারও বলছি বিচারব্যবস্থার উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে । কিন্তু সিবিআই নেমড আকিউসড যে রয়েছে, যাকে টিভির পর্দায় টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাকে সিবিআই যখন ডাকে না । তখন কোর্টের তৎপরতা দেখা যায় না । কিন্তু আমার নাম কুন্তল ঘোষ বলেছে কি, ইডি জোর জবরদস্তি করে বলছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নাও । আপনারা জিজ্ঞাসা করুন না মদন মিত্রকে করেছিল কি না !’’
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই যে অভিযোগ আমি করেছি, একই দিনে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটা সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কনক্লেভ ছিল, সেখানে বলেছেন সিবিআই তাঁকেও প্রেসারাইজ করা হয়েছিল নরেন্দ্র মোদির নাম নিতে । অতএব ইডি-সিবিআই যে রাজনৈতিক নেতাদের কথায় চলে, তাকে মান্যতা দিয়েছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । সুতরাং আমি ঠিক বলছি না ভুল বলছি, সেটা মানুষ বিচার করবে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি প্রথম দিন থেকে যা বলেছি আজও বলছি আমার বিরুদ্ধে অনেকে অনেক চেষ্টা করেছে । ইডি, সিবিআই, এসএফআইও-সবই তো আপনাদের হাতে রয়েছে আমার বিরুদ্ধে লাগান । আমি তো বলেছি আমার বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত করতে হবে না । আপনি এক হাতে প্রমাণ দিন আর এক হাতে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করুন । হাসতে হাসতে মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত ।’’
আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই-ইডি, অভিষেক-কুন্তলকে 50 লাখ টাকা জরিমানা