কলকাতা, 31 মার্চ: রামনবমীর মিছিল ঘিরে হাওড়ায় অশান্তির ঘটনায় সরাসরি বঙ্গ বিজেপির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দাবি করলেন, বঙ্গ বিজেপির নেতাদের উস্কানিতেই হাওড়ায় অশান্তি ছড়িয়েছে ৷ এমনকী, তিনি এই ঘটনায় কৌশলে তুলে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নামও ৷ দিন কয়েক আগে বঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির অন্য সাংসদদের সঙ্গে অমিত শাহের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন ৷ কার্যত প্রশ্ন তুললেন যে ওই বৈঠকেই কি উস্কানির ছক কষা হয়েছিল !
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি, গত 27 মার্চ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পরের দিন সুকান্ত মজুমদার-সহ রাজ্য বিজেপির অন্যান্য নেতারা দেখা করেন অমিত শাহের সঙ্গে । এর পরই তিনি চলে আসেন বুধবার শ্যামবাজারে বিজেপির ধরনা প্রসঙ্গে ৷ তিনি দাবি করেন, বৃহস্পতিবার টিভির পর্দায় চোখ রাখার জন্য সেদিন বিজেপি নেতারা বলেছিলেন ৷ অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘তাহলে কি এই অশান্তি দেখার কথাই বলেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব ?’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাওড়ার শিবপুরে রামনবমীর শোভাযাত্রা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ ভাঙচুর, ইট-পাথর ছোড়াছুড়িতে এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ৷ পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ শুক্রবারও সেখানকার অবস্থা ছিল থমথমে ৷ পুলিশের সঙ্গে ব়্যাফও নামানো হয় শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে ৷ 36 জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে ৷ কিন্তু বিজেপি এই ঘটনায় কাঠগড়ায় তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসকেই ৷ শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে দিনভর তোপ দেগেছেন ৷
এই পরিস্থিতি শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ সেখানেই তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে অমিত শাহের বৈঠক প্রসঙ্গে সরব হন ৷ বিজেপি নেতাদের মন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ৷ পাশাপাশি বিজেপির উপস্থিতি এই রাজ্য়ে বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় এই ধরনের হিংসার ঘটনা বেড়েছে বলেও তিনি দাবি করেন ৷ অভিষেকের কথায়, ‘‘এর আগে বাংলায় রামনবমীতে কোনও অশান্তি হতো না । বিজেপির তরফেই রীতিমতো চক্রান্ত করে রামনবমীর দিনে এইসব অশান্তির ঘটনা ঘটানো হচ্ছে ।’’
তাঁর অভিযোগ, হাওড়ার ঘটনার ক্ষেত্রে এক মাস আগে থেকেই চক্রান্ত করা হয়েছিল । তাঁর আরও দাবি, হাওড়ার দু’টি মিছিলের পুলিশি অনুমতি ছিল না ৷ এদিন প্রমাণ হিসাবে পুলিশের চিঠিও তুলে ধরেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক । তিনি বলেন ‘‘বিজেপির তরফে আবেদন করা হয়েছিল । কিন্তু অনুমতি দেয়নি পুলিশ । গুন্ডামি করে রুট বদল করেছে বিজেপি । অশান্তি করতে ছোট-ছোট ফল বিক্রেতাদের গাড়িতেও আগুন ধরানো হয়েছে । রামনবমীর নামে শোভাযাত্রা থেকে গুন্ডামি করা হয়েছে । এই মিছিলের মূল উদ্দেশ্য ছিল এলাকার সম্প্রীতি নষ্ট করা । আর সেই কারণেই ফলওয়ালার ঠেলায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে । উগ্রভাবে ডিজে বাজানো হয়েছে ।’’
অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘2011 সালে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেছেন । কই সে সময় তো এমন হতো না । 2014 আর 2016 সালেও তো রামনবমীর এমন শোভাযাত্রা হয়নি । রাজ্যটাকে এরা পৈতৃক সম্পত্তি ভেবে ফেলেছে । রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য রাজ্যের সৌহার্দ্য ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ভগবান রামচন্দ্র তো সংযমের প্রতীক । তাঁর পুজোয় ডিজে বাজিয়ে কোমরে বন্দুক নিয়ে গুন্ডামির কি প্রয়োজন ! তাঁর আরও বার্তা, ধর্মের নামে গুন্ডামি-মস্তানি করলে তাকে কখনও ধর্মপ্রাণ বলা যায় না । এরা বাংলাটাকে জল্লাদের উল্লাস মঞ্চে পরিণত করেছে ।’’ তাই বাংলার জনগণের কাছে অভিষেকের অনুরোধ, ‘‘কোনওরকম প্ররোচনায় পা দেবেন না ।’’
আরও পড়ুন: শিবপুরের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস, শান্তি বজায় রাখার আবেদন মমতার