কালিম্পং, 19 জুলাই: "আজ মম জন্মদিন । সদ্যই প্রাণের প্রান্তপথে
ডুব দিয়ে উঠেছে সে বিলুপ্তির অন্ধকার হতে
মরণের ছাড়পত্র নিয়ে । মনে হতেছে কী জানি
পুরাতন বৎসরের গ্রন্থিবাঁধা জীর্ণ মালাখানি ..."
মনে পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'জন্মদিন' কবিতাটি ? যেটা তিনি লিখেছিলেন কালিম্পংয়ের দূরবীনদাড়া এলাকার আপারকার্ট রোডে অবস্থিত গৌরীপুর হাউজে বসে । সালটা 1938 । ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জমিদার অর্থাৎ (যা কিনা এখন বাংলাদেশ নামে পরিচিত) ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কালিম্পংয়ের সেই গৌরীপুর হাউজটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উপহার দিয়েছিলেন । নিজের জীবনের একটা বড় অধ্যায় কবিগুরু কাটিয়েছিলেন এই গৌরীপুর হাউজে ।
1938 থেকে 1940 সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন । অসুস্থ হলেই তিনি পাহাড়ে চলে যেতেন ছুটি কাটাতে । সেই গৌরীপুর হাউজের এখন জরাজীর্ণ পরিস্থিতি । তবে 2018 সালে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত সেই গৌরীপুর হাউজকে হেরিটেজ হিসেবে তুলে ধরে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন । কবিগুরুর টানে দেশ বিদেশের পর্যটকরা সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেন । আর পর্যটকদের দাবিমতো এবার সেই গৌরীপুর হাউজকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ও রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ।
আরও পড়ুন : শতাধিক আর্ট পেপারজুড়ে রবি ঠাকুরের প্রতিকৃতি এঁকে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে বীরভূমের কৌশিক
সংস্কারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা । রাজ্যের এই পদক্ষেপে খুশি কবি সাহিত্যিক থেকে পর্যটনমহল । কবিগুরুর পুরনো স্মৃতিকে অপরিবর্তিত রেখেই করা হবে মেরামতি ও সংস্কারের কাজ । তৈরি করা হবে পৃথক একটি মিউজিয়াম । যেখানে কবিগুরুর লেখা কবিতা, তাঁর ব্যবহার করা সামগ্রী সাজিয়ে রাখা হবে । পাশাপাশি থাকবে গবেষণাগারও । দেশ বিদেশ থেকে আগত পর্যটক যাঁরা কবিগুরুকে নিয়ে গবেষণা করছেন তাঁরাও অনায়াসে সেখানে গবেষণার কাজ করার সুযোগ পাবেন ।
গৌরীপুর হাউজ- যে বাড়িতে বসেই রবীন্দ্রনাথ জন্মদিন কবিতাটি রচনা করেছিলেন । পরবর্তীতে 1345 বঙ্গাব্দের 25 শে বৈশাখ (1938 সাল) টেলিফোনের মাধ্যমে এই বাড়িতে বসেই সেই কবিতা পনেরো মিনিট নিজের জন্মদিনে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে পাঠ করেছিলেন বিশ্বকবি ।
তাঁর বাড়ি সংস্কারের বিষয়ে কালিম্পংয়ের জেলাশাসক আর বিমলা বলেন, "গৌরীপুর হাউজটি জরাজীর্ণ পরিস্থিতিতে ছিল । তবে সেটিকে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ও তথ্য সংস্কৃতি দফতর সংস্কার ও মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে । ভিতরে একটি মিউজিয়ামও থাকবে । পর্যটকদের জন্য কিছু স্থানীয় গাইডদের আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব । পুরনো ইমারতকে অপরিবর্তিত রেখেই সংস্কার করা হবে ।"
কালিম্পংয়ের মিলনী ক্লাবের সম্পাদক সুব্রত মান্নার কথায়, "আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই স্মৃতিকে যেন সংরক্ষণ করা হয় । দীর্ঘদিন ধরে রোদ ঝড় বৃষ্টিতে এই হেরিটেজ সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে । তবে রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ সংস্কার ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য । এতে কালিম্পংয়ের পর্যটনেও জোয়ার আসবে ।"
বাংলাদেশ থেকে আগত এক পর্যটক সালিমা সিদ্দিকি বলেন, "গৌরীপুর হাউজটি দেখে খুব হতাশ হয়েছিলাম । কবিগুরুর এমন একটা স্মৃতিকে নষ্ট করা হচ্ছিল । পরে জানতে পারি রাজ্য সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে । তা শুনে খুব ভালো লাগছে ।"
আরও পড়ুন : বিখ্যাত মতিচুর সন্দেশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রবি ঠাকুরের নাম, স্মৃতি রোমন্থনে চন্দননগরবাসী