ঝাড়গ্রাম, 12 জুলাই: জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে 2018 সালের তুলনায় খারাপ ফল করল বিজেপি ৷ সেই সুযোগে মাথা তুলে দাঁড়াল কুড়মিরা । 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ঝাড়গ্রাম থেকে জিতেছিল ৷ পরের বছর লোকসভা নির্বাচন, তার আগে পঞ্চায়েতের এই ফল স্বাভাবিকভাবেই চিন্তায় ফেলেছে গেরুয়া শিবিরকে ৷ তবে এই ফলাফলে খুশি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৷
ঝাড়গ্রামে 79টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে 63টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল ৷ 2টি গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছে কুড়মিরা এবং 12টি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু ও 2টি গ্রাম পঞ্চায়েত টাই হয়েছে । ঝাড়গ্রামে 1007টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন রয়েছে । তার মধ্যে তৃণমূল 712টি আসন পেয়েছে । বিজেপি 131টি আসন পেয়েছে । সিপিএম 26টি আসন পেয়েছে । নির্দল 138টি আসন পেয়েছে । নির্দলের মধ্যে সিংহভাগই কুড়মিরা পেয়েছেন ।
জেলার 8টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে নিয়েছে তৃণমূল । 8টি পঞ্চায়েত সমিতির মোট 210টি আসনের মধ্যে তৃণমূল 191টি আসন পেয়েছে । বিজেপি 8টি, সিপিএম 1টি ও নির্দল 10টি আসন পেয়েছে । ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের 19টি আসনের মধ্যে 19টি আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা ।
প্রসঙ্গত, 2018 পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলের মানুষের মন জয় করে বিজেপি ব্যাপক ভোট পেয়েছিল । 79টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে 24টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে নিয়েছিল বিজেপি । কিন্তু এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ঝুলিতে একটিও গ্রাম পঞ্চায়েত থাকল না । কুড়মিরা ঝাড়গ্রাম ব্লকের লোধাশুলি ও দুধকুন্ডি পঞ্চায়েত দখল করে নিয়েছে । ঝাড়গ্রামের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কুড়মিরা ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে মামলার চূড়ান্ত নির্দেশের উপর: হাইকোর্ট
ঝাড়গ্রামের 8টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতি ও গোপীবল্লভপুর এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপির দখলে ছিল । এই দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির গোপীবল্লভপুরের নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে 20টি আসনের মধ্যে একটিও আসন পায়নি বিজেপি ৷ সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির 25টি আসনের মধ্যে মাত্র 2টি আসন পেয়েছে বিজেপি ৷ জেলার 8টা পঞ্চায়েত সমিতিতে মাত্র 8টি আসন পেয়েছে বিজেপি । গতবার ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের 16টি আসনের মধ্যে বিজেপি 3টি আসন পেয়েছিল ৷ এবার একটিও আসন বিজেপির ঝুলিতে জুটল না ।
সামনেই 2024-এর লোকসভা নির্বাচন ৷ তার আগে জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে বিজেপির এই ফলাফলে নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ৷ ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির জেলা সভাপতি তুফান মাহাতোকে ফোনে পাওয়া যায়নি । অপরদিকে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর ফোন বন্ধ রয়েছে ।
অন্যদিকে তৃণমূলের এই ফলাফলে খুশি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব থেকে শুরু করে কর্মী সমর্থকরা । ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো বলেন, "বিজেপির নাটক জঙ্গলমহলের মানুষ বুঝতে পেরেছে । মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুল বুঝিয়ে 2018 পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং 2019-এর লোকসভা নির্বাচনে ভোট নিয়েছিল । কিন্তু তাদের এই নাটক ধরে ফেলেছে তাই বিজেপিকে মানুষ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে এই এলাকা থেকে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সঙ্গেই জঙ্গলমহলের মানুষ রয়েছে৷ কারণ তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দেয় না, কাজ করে দেখায় । 2024-এর লোকসভা নির্বাচনে বিশাল ভোটে এই এলাকায় জয়লাভ করবে তৃণমূল৷"
আরও পড়ুন: জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ ও সমিতি এককভাবে তৃণমূলের, গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রভাব বিজেপির
অন্যদিকে কুড়মি সমাজের নেতা অশোক মাহাতো বলেন ,"আমরা আমাদের স্বাভিমান ও আত্মপরিচিতি আন্দোলনের পক্ষে ভোট কে সংগঠিত করতে পেরেছি ৷ মানুষের সমর্থনে যেখানে জয়লাভ ও বোর্ড গঠন করেছি, সেখানে মানুষের মতামতকে মর্যাদা দিয়ে মানুষের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে তুলব ৷"