ঝাড়গ্রাম, 9 মে: দুয়ারে আধিকারিক ! বৈশাখের তপ্ত দুপুরে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছেন এক ব্যক্তি ৷ নিজেকে সরকারি আধিকারিক পরিচয় দিয়ে তাঁর প্রশ্ন, যুবশ্রীর জন্য আবেদন করেছিলেন ? আধিকারিকের প্রশ্ন শুনে ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন চাঁপা পাল নামে এক মহিলা ৷ তবে, ‘যুবশ্রী’-র জন্য তিনি কোনও আবেদন করেছিলেন কিনা, তা মনে করতে পারছিলেন না জামবনি ব্লকের বেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা চাঁপা ৷ এমনকি তাঁর বাবা এবং স্বামী কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছেন ৷ পরে ওই আধিকারিকের থেকেই তিনি জানতে পারেন, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে তিনি নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ৷ সেখান থেকেই ‘যুবশ্রী’ সম্ভাব্য তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাঁর ৷ আর ওই আধিকারিক হলেন, ঝাড়গ্রাম এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের ডেপুটি ডিরেক্টর অরুণাভ দত্ত ৷
ঝাড়গ্রাম এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের ডেপুটি ডিরেক্টর এভাবেই প্রতিদিন মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছেন ৷ যুবশ্রীর সম্ভাব্য তালিকায় থাকা মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ৷ তাঁদেরকে পরবর্তী ক্ষেত্রে কী করতে হবে ? সেই উপায়ও বাতলে দিচ্ছেন অরুণাভ দত্ত ৷ যা দেখে সবার একটাই প্রতিক্রিয়া, বাড়ি চৌকাঠে এসে এভাবে কোনও আধিকারিক সরকারি ভাতার তালিকায় নাম উঠেছে বলে জানাননি ৷
কেন মানুষের দুয়ারে ঘুরছেন ? জানা গিয়েছে, যুবশ্রী সম্ভাব্য তালিকায় 529 জনের নাম চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছে ৷ এই 529 জনকে মে মাসেই অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে হবে ৷ তাঁদের সরকারি ভাবে মেসেজ পাঠানো হয়েছে ৷ ঝাড়গ্রাম জেলা এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে সবাইকে ফোন করে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে বলা হচ্ছে ৷ কিন্তু, তাতে দেখা যাচ্ছে একশো জনের উপর আগ্রহকের সঙ্গে ফোনে যোগযোগ করা যাচ্ছে না ৷ তাই তাঁদের নামের তালিকা ধরে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ওই আধিকারিক ৷
আরও পড়ুন: ভাতা নয় চাকরি চাই, বিক্ষোভ যুবশ্রী প্রাপকদের
অরুনাভ দত্ত বলছেন, ‘‘বিগত দিনে দেখা গিয়েছে সম্ভাব্য নামের তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর 40 শতাংশ মানুষ জানতে পারেননি ৷ যার ফলে অনেকেই এই ভাতা থেকে বঞ্চিত হন ৷ অনেকদিন পরে জানতে পেরে অফিসে আসেন ৷ তখন সময় পেরিয়ে গিয়েছিল ৷ তাই সবাই যাতে যুবশ্রীর ভাতা পান সেজন্য দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছি ৷’’
ঝাড়গ্রাম জেলায় 2 হাজার 204 জন যুবশ্রীর ভাতা পাচ্ছেন ৷ প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা পান তাঁরা ৷ বেকার যুবক-যুবতীরা 45 বছর পর্যন্ত এই ভাতা পেতে পারেন ৷ যুবশ্রী ভাতার জন্য প্রথমে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নাম নথিভুক্ত করতে হয় ৷ তারপর নামের তালিকা অনুযায়ী সম্ভাব্য তালিকা তৈরি হয় ৷ সম্ভাব্য তালিকা অনুযায়ী অনলাইনে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করার পরেই এই ভাতা চালু হয় ৷ জানা গিয়েছে, 2013 সালে যাঁরা এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, তাঁদের নাম এখন সম্ভাব্য তালিকায় আসছে ৷ এই 9 বছরে অনেকের ফোন নম্বর পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে ৷ যার ফলে তাঁদের অনেকেই সরকারি মেসেজ পাচ্ছেন না এবং ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৷ অনেকের মতো চাঁপা পালের ফোন নম্বরও বদল হয়ে গিয়েছে ৷