জলপাইগুড়ি, 17 অক্টোবর: বন্ধ হয়ে গেল 7টি চা-বাগান ৷ পুজোর আগে কর্মহীন কয়েক হাজার চা-শ্রমিক। প্রতিবছর বোনাসের সময় এলেই চা-বাগানের শ্রমিকদের মনে একটা সংশয় কাজ করে এই বুঝি বাগান ছেড়ে মালিকপক্ষ চলে যাবে। আর এবারও একই ঘটনা ঘটে। পুজোর পর তিনমাস শুখা মরশুমে বাগানে চা-পাতা তোলা হয় না। বাগান খোলা থাকলে এই সময়ে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে ফলে, ছলে বলে বাগান সাসপেনসন অফ ওয়ার্কের নোটিশ দিয়ে চলে যায় বাগান কর্তৃপক্ষ।
- আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকের দলমোড় চা-বাগান, জয় বীরপাড়া চা-বাগান, কালচিনি ব্লকের দলসিংপাড়া চা-বাগান, রায়মাটাং চা-বাগান বন্ধ করে চলে গিয়েছে মালিকপক্ষ।
- জলপাইগুড়ি জেলার সামসিং চা-বাগান বন্ধ ৷
- অন্যদিকে, দার্জিলিংয়ের পুলবাজার ব্লকের চংটং চা বাগান ও সুখিয়াপোখরি ব্লকের নাগরি চা-বাগান শনিবার থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
কয়েকদিন আগে মালবাজার ব্লকের সাইলি, নাগরাকাটা নয়া সাইলি চা-বাগান বন্ধ হয়ে গেলেও বৈঠকের পর ফের সোমবার থেকে খুলে যায় এই দু'টি চা-বাগান।
জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট বীরপাড়ার দলমোড় চা-বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের 9 শতাংশ বোনাস দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকরা তা মেনে নেননি। অন্যদিকে, জয় বীরপাড়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষ 11 শতাংশ বোনাস দিতে চেয়েছিল শ্রমিকরা তাও মেনে নেননি। কালচিনি ব্লকের দলসিংপাড়া চা-বাগানে সাসপেনসন অফ ওয়ার্ক। মাদারিহাটের দুই চা-বাগান রবিবার রাতে চলে গিয়েছে। দলসিংপাড়া বাগানে হারে 08.33 হারে বোনাস দিতে চেয়েছিল। সেটাও শ্রমিকরা মানেননি।
বিষয়টি নজরে আসা মাত্রই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জিটিএ'র (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) চিফ এগজিকিউটিভ অনিত থাপা। ইতিমধ্যে ওই বিষয়ে সুরাহার আবেদন করে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন অনিত থাপা। চা-বাগানের এক শ্রমিক সুরেশ লামা বলেন, "মরশুমের সময় আমাদের 8 ঘণ্টা করে কাজ করানো হয়েছে। সামনে পুজোর মরশুম, এখন আমাদের বোনাসের সময়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বাগান বন্ধ করে কাউকে কিছু না-জানিয়ে চলে গেল। আমরা এখন কী করব জানি না।"
তৃণমুল কংগ্রেসের চা বাগান শ্রমিক সংগঠনের চেয়ারম্যান বীরেন্দ্র বারা বলেন, "খুব দুঃখজনক ঘটনা। আমরা চাই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে চা বাগান খুলে যাক ৷ প্রতিবছর বোনাসের টাকা দেওয়ার আগেই সাসপেনসন অফ ওয়ার্কের নোটিশ দিয়ে পালিয়ে যায় বেশকিছু চা-বাগান মালিকপক্ষ। এবছরও ব্যতিক্রম নয়। আমরা বিষয়টি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।" তবে আলোচনা না-করে বাগান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াটা ঠিক নয় বলে জানান বীরেন্দ্র বারা। "জিটিএ চিফ অনিত থাপা বলেন, "আমি এই বিষয়ে আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে চিঠি দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলাম। মুখ্যসচিবকে জানিয়েছি। কলকাতা গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করব।"
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সদস্যা স্নোমিতা কালান্দি বলেন, "এটা নতুন কিছু নয়। পুজোয় আগে চা বাগান আগেও বন্ধ করেছে বাগান কর্তৃপক্ষ।পুজোর মুখে বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরাও চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটে যাক শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য বোনাস পাক।"
আরও পড়ুন: এই পুজোয় ডেস্টিনেশন হোক ইতিহাস বিজরিত বড়দিঘি চা বাগানের হেরিটেজ বড় বাংলো