জলপাইগুড়ি, 8 অগস্ট: দীর্ঘদিন থেকে বাগানটি বন্ধ রয়েছে । ফলে আর্থিক সংস্থান নেই চা শ্রমিকদের । অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল রায়পুর চা বাগানে দু'জন শ্রমিকের (Tea Garden Labour Death) । এমনটাই অভিযোগ তাঁর পরিবারের । মৃত চা শ্রমিকদের নাম বাশমাইত ওরা এবং নান্দিয়া ভুমিচ ।
চিকিৎসার জন্য চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিকের কাজ 40 হাজার টাকায় বিক্রিও করার চেষ্টা হচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে । স্থায়ী শ্রমিকের কাজ অন্য কাউকে বিক্রি করা যায় ৷ যার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যায় ৷
অবিলম্বে চা বাগান খোলা না-হলে মৃত্যুর মিছিল শুরু হবে বলে দাবি শ্রমিক তথা পাতকাটা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান প্রধান হেমব্রমের । মৃত এক শ্রমিক ভগত লাইন আর অপরজন গুদাম লাইনের বাসিন্দা ৷ জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির রায়পুর চা বাগান দীর্ঘদিন থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে রয়েছে । মালিকপক্ষ বাগান চালাচ্ছেন না । ফলে চা শ্রমিকদের কর্ম সংস্থান নেই । একদিকে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা অন্যদিকে অসুখ নিত্য সঙ্গী । সেক্ষেত্রে খাবে, পড়াশোনো করাবে নাকি চিকিৎসা করাবে সেই চিন্তাতেই দিন কাটছে শ্রমিকদের ।
রায়পুর চা বাগানের ভগত লাইনের বাসিন্দা বাশমাইত ওরাওঁ । চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক তিনি । বাগান বন্ধ থাকার কারনে তিনি ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোনরকমে সংসার চালাচ্ছিলেন । গত জানুয়ারি মাস থেকে তাঁর পেটে ব্যথা শুরু হয় । প্রথমে তাঁকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল ও পরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু তাতেও কোন সমস্যার সমাধান হয়নি । ডাক্তার বলে গলব্লাডার আছে । অপারেশন করা যাবে না, ক্যান্সারও হয়েছে । কেমো দিতে হবে, কিন্তু টাকার অভাবে তাও সম্ভব হয়নি । কেমো এক দু'বার দেওয়ার পর বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তাঁকে । মায়ের চিকিৎসার টাকা জোগার করার জন্য মেয়ে সঙ্গীতা শিলিগুড়িতে কাজে যায় গত জুন মাসে । কিন্তু মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তিনি বাড়ি চলে আসেন(Two workers died of Raipur Tea Garden) ।
সঙ্গীতা ওরাওঁ বলেন, "টাকার ওভাবে মাকে বাঁচাতে পারলাম না । মায়ের চিকিৎসার জন্য শিলিগুড়িতে নিয়ে যাব বলে 40 হাজার টাকার বিনিময়ে মায়ের স্থায়ী কাজ বিক্রি করে দেওয়ার জন্য কথাও হয়েছিল । কিন্তু শেষ রক্ষা হল না । আজ ভোরে মারা গেল মা । আজ বাগান খোলা থাকলে মাকে বাঁচাতে পারতাম । আমি মায়ের চিকিৎসার জন্য পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছিলাম । গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারিনি এবার আবার ভর্তি হয়েছি ।" চা শ্রমিক বিপতি ওরাওঁ এবং গুরু মুণ্ডা বলেন, "চা বাগান বন্ধের ফলে আমরা আমাদের বাচ্চাদের পড়াতে পারছি না । টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না । আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ । আমরা চাই বাগান খুলে যাক ।"
আরও পড়ুন: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় উত্তরে বিপন্ন চা-শিল্প, পোকার আক্রমণে নাজেহাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষ
এদিন পাতকাটা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান প্রধান হেমব্রম বলেন, "চা বাগানের অবস্থা খুব খারাপ । বাগান বন্ধ তাই রোজগার নেই । চা শ্রমিকরা খুবই কষ্টের মধ্যে আছে । টাকার অভাবে দুইজন মারা গেল । আমরা চাই খুব তাড়াতাড়ি চা বাগানটি খুলুক । নাহলে মৃত্যু মিছিল শুরু হবে রায়পুর চা বাগানে ।"