জলপাইগুড়ি, 12 এপ্রিল: ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বুধবার ফের বৈঠক হতে চলেছে ৷ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতির পর এখন এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকরা । ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও দ্রুত তা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছে চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চ 'জয়েন্ট ফোরাম' । শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলনের ফলেই ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য এই কমিটি তৈরি হয় । ইতিমধ্যেই 17 বার বৈঠক হয়ে গেলেও ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি বাস্তবায়িত হয়নি । তাই এদিনের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আরও একবার আশায় বুক বাঁধছে উত্তরের শ্রমিক মহল ।
গত 8 তারিখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আলিপুরদুয়ার জেলা সফরে এসেছিলেন ৷ তখন তিনি দলীয় শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ৷ বলেছিলেন, নেতারা যেন নুন্যতম মজুরির বৈঠকে মালিকদের পক্ষ না-নিয়ে চা শ্রমিকদের হয়ে কথা বলেন ৷ যতটা পারা যায় চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে হবে বলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সেদিন জানিয়েছিলেন । সেই প্রতিশ্রুতি মতো কাজ হয় কি না এখন সেই দিকেই তাকিয়ে শ্রমিকরা ।
প্রসঙ্গত, 2021 সালে জানুয়ারি মাসে বৈঠকে নূন্যতম 350 টাকা মজুরির দাবি করা হয় ৷ তবে মাত্র 26 টাকা বেড়ে মজুরি হয় 202 টাকা। বিধানসভা ভোটের আগে শ্রমিকদের 26 টাকা মজুরি বাড়ানো হয় ৷ তবে তাতে খুশি ছিল না শাসক-বিরোধী চা শ্রমিক সংগঠন । দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে 26 টাকা মজুরি বৃদ্ধিতে কিছুই লাভ হবে না বলে তাদের অভিযোগ ছিল । গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসিমারার সুভাষিনি চা বাগানের মাঠে প্রশাসনিক সভা থেকে চা শ্রমিকদের 15 শতাংশ করে অন্ত:বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন । ফলে 202 টাকা মজুরি বেড়ে দাঁড়ায় 232 টাকা ।
নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে কড়া আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শাসক-বিরোধী বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন । উত্তরবঙ্গের মুলত দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর 300টি চা বাগানে প্রায় চার লক্ষ স্থায়ী, অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন । উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ শিল্প এই চা । কয়েক লক্ষ শ্রমিক চা বাগানের সঙ্গে যুক্ত । চা শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরির দাবি দীর্ঘদিনের । চা শ্রমিকদের দাবি-দাবা নিয়ে শাসক ও বিরোধী 26টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ আন্দোলন করে চলেছে । পাশাপাশি বিজেপির শ্রমিক সংগঠনও আন্দোলন করছে ।
ন্যূনতম মজুরি নিয়ে নির্দিষ্ট সমাধান না-হলে চা-শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই কোন পর্যায়ে পৌঁছবে তা ঠিক করবেন শ্রমিকরাই ৷ এমনটাই জানিয়েছেন জয়েন্ট ফোরামের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম । তিনি বলেন, "রাজ্য সরকারের গড়িমসিতেই চা শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি কার্যকর হচ্ছে না ।" এদিকে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের আরেক নেতা দেবব্রত নাগ বলেন, "2017 সাল থেকে নূন্যতম মজুরির দাবি থাকলেও এখনও কার্যকর হয়নি । দেখা যাক এই বৈঠকে কী হয় ।"
আলিপুরদুয়ারের সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলা জানান, 2017 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত শ্রমিকরা নুন্যতম মজুরি পাচ্ছেন না । ফলে সব দিক থেকেই চা শ্রমিক থেকে শুরু করে কর্মীদের ক্ষতি হচ্ছে । তারা নূন্যতম মজুরি 350 টাকা দাবি করেছিলেন । তিনি বলেন, "দেখা যাক এবারের বৈঠকে কী হয় । শ্রমিকদের এই বেতনে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোর ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে । আমরা চাই বেতন বাড়ুক । ভিক্ষা চাইছি না । চাইছি নূন্যতম মজুরি ।"
আরও পড়ুন: '2 মাসের মধ্যে চা শ্রমিকদের সমস্যা মেটান !' পিএফ নিয়ে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি অভিষেকের