জলপাইগুড়ি, 6 মে: ময়নাগুড়ি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান-সহ পাঁচজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার নির্দেশ দিলেন জলপাইগুড়ির চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট । পুলিশকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জমি দখল, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগে মামলা রুজু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে । এই মামলায় আগেই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ৷
অভিযোগকারী সঙ্গীতা সেন অধিকারী সিজেএমের কাছে অভিযোগ করেন, ময়নাগুড়ি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায় ও বাকি কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ময়নাগুড়ি থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ মামলা রুজু করেনি । এরপর পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেও লাভ হয়নি । তাই সিজেএমের দ্বারস্থ হন তিনি । এদিন সিজেএম সমস্ত নথি, মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখে ময়নাগুড়ি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায়, কাউন্সিলর গোবিন্দ পাল, রিম্পা রায়, বর্ণালী বাড়ুই, রিনা বিশ্বাস, মৌসুমী সেন-সহ মাধবী অধিকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে বলেন ৷
গত 2 মে ময়নাগুড়ি পৌরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলরদের এক অংশের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে অন্যের জমিতে প্রবেশ করে জমি দখলে মদত দেওয়া, এক মহিলা-সহ দেড় বছরের এক শিশুকে মারধরের অভিযোগ ওঠে । ঘটনায় ময়নাগুড়ি পৌরসভার এক মহিলা কাউন্সিলরের নাক ফাটিয়ে দেবার পালটা অভিযোগ ওঠে ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ির 7 নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দপল্লি এলাকার বাসিন্দা কানু অধিকারী ও তাঁর মৃত দাদা বংশীবদন অধিকারীর স্ত্রী মাধবী রায় অধিকারীর সঙ্গে বেশ কয়েকমাস থেকে পৈত্রিক জমি সংক্রান্ত বিবাদ চলছে । জমি বিবাদের বিষয়টি বর্তমানে আদালতের বিচারাধীন । এর মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে মাধবী রায় অধিকারী ময়নাগুড়ি পৌরসভার বেশ কয়েকজন মহিলা কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের জমিতে গিয়ে চড়াও হন বলে অভিযোগ কানু অধিকারীর । এরপরেই দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয় ৷ ধাক্কাধাক্কি ও মারামারিও হয় বলে অভিযোগ । সেই সময় ময়নাগুড়ি পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রিনা বিশ্বাসের নাকে আঘাত লেগে রক্ত পড়তে শুরু করে । অন্যদিকে, কানু অধিকারীর স্ত্রী সঙ্গীতা সেন অধিকারী ও দেড় বছরের সন্তান-সহ দুই দিদি ভৈরবী অধিকারী, পূরবী অধিকারীর আঘাত লাগে বলে অভিযোগ ।
সেই ঘটনাতেই এদিন সিজেএমের তরফে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ ময়নাগুড়ি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ হতেই পারে ৷ পুলিশ তদন্ত করুক । আসল ঘটনা সামনে আসুক । আমাদের একটা মিটিং ছিল । সেখানে কাউন্সিলররা মানিবিকতার খাতিরে গিয়েছিল । এর বেশি কিছু না ৷’’
সঙ্গীতা সেন অধিকারীর আইনজীবী পার্থ চৌধুরী বলেন, "পারিবারিক জমি বিবাদে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা ময়নাগুড়ি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায়, গোবিন্দ পাল-সহ অন্যান্য কাউন্সিলররা সঙ্গীতা দেবীর জমিতে চড়াও হয়ে মারধর করেন । তাঁর শিশুসন্তানকে কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেন । এরপর ময়নাগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মামলা রুজু করে না । এমনকি পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেও লাভ হয়নি । এরপরেই সঙ্গীতা সেন অধিকারী জলপাইগুড়ি আদালতে সিজেএমের দ্বারস্থ হন । অভিযুক্ত কাউন্সিলররা কেউই ওই ওয়ার্ডের না হওয়া সত্ত্বেও ওই এলাকায় গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করেছেন । ময়নাগুড়ি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান-সহ 5 কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম ।’’
আরও পড়ুন: হাত বাঁধা অবস্থায় ময়নাগুড়িতে বাড়ি থেকে উদ্ধার মহিলার পচাগলা দেহ