দার্জিলিং, 31 অগস্ট : টি, টিম্বার ও ট্যুরিজম ৷ অর্থাৎ দার্জিলিং চা, ঘন সবুজ জঙ্গল এবং পর্যটন । এটাই তিনটিই হল উত্তরের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ । আর এই তিনটে স্তম্ভকে হাতিয়ার করেই বাজিমাত করতে চাইছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ । দার্জিলিংয়ের চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে ঘনসবুজ জঙ্গল থেকে পাহাড়ের গায়ে ঢাল বেয়ে বিস্তীর্ণ সবুজ চা বাগানের আমেজ এবার টয় ট্রেনে বসে উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা । এমনই সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ । সোমবার শিলিগুড়ি জংশন থেকে চালু হল জঙ্গল সাফারি টয় ট্রেন পরিষেবা । পরিষেবার শুভ সূচনা করেন ডিএইচআরের ডিরেক্টর একে মিশ্রা । সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার সদস্যরা ।
করোনা আবহের জেরে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বন্ধ ছিল পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্স । একপ্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছিল উত্তরের পর্যটন শিল্প । পিছিয়ে পড়েছিল ওই অঞ্চলের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা । কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের গ্রাফ কিছুটা নিচের দিকে নামতেই পর্যটন শিল্পকে ফের পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তরফ থেকে । পুজোর আগে পর্যটন শিল্পকে ছন্দে ফেরাতে ডুয়ার্সে ভিস্তাডোম কামরার মাধ্যমে টুরিস্ট স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে ৷ শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং থেকে টয়ট্রেন পরিষেবা চালু করা হয়েছে । পর্যটক টানতে ঠিক তেমনই চালু করা হল জঙ্গল টি সাফারি ট্রয় ট্রেন পরিষেবা ৷
পাহাড় এবং তরাইয়ের প্রকৃতির কোল ধরে আঁকাবাঁকা লাইন ধরে ছুটে চলবে ওই টয় ট্রেন । শিলিগুড়ি জংশন থেকে মহানন্দা অভয়ারণ্যর বুক চিরে, মনভরানো সবুজ চা বাগান এবং পাহাড়ি ঝরনার পাশ কাটিয়ে রংটং পর্যন্ত ছুটে চলবে টয় ট্রেনটি । খুব বেশি না হলেও তিন ঘন্টার ওই সফরেই প্রকৃতির আমেজ উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা । শুধু তাই নয়, টয় ট্রেনের ভেতরেও থাকছে শিল্প আর কারুকার্যর হাতছানি । যা ফুটে উঠেছে ট্রেনের ভেতরে থাকা টেবিল, চেয়ার, আসবাবপত্র থেকে গোটা কামরার মধ্যেই । এর আগে অবশ্য পর্যটকদের জন্য বিকেল বেলায় বিশেষ একটি ইভিনিং রাইড পরিষেবা চালু করা হয়েছিল ডিএইচআরের তরফ থেকে । যা শিলিগুড়ি জংশন থেকে তিনধারিয়া পর্যন্ত চলত । কিন্তু সেই পরিষেবায় পর্যটকদের মধ্যে খুব বেশি চাহিদা না থাকায় তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় রেল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু করোনার পর তলানিতে থেকে থাকা পর্যটন শিল্পকে ছন্দে ফেরাতে জঙ্গল টি সাফারিকে হাতিয়ার করেছে রেল কর্তৃপক্ষ ।
আরও পড়ুন : Raiganj Artisans : টানা বর্ষণে দুশ্চিন্তায় রায়গঞ্জের পটুয়াপাড়া
দুটি কামরায় দিয়ে শুরু করা হয়েছে ওই জঙ্গল টি সাফারি পরিষেবা । ভিস্তাডোম কামরায় 13 জন ও অপর কামরায় 11 জন পর্যটক বসতে পারবেন । রংটং পর্যন্ত গিয়ে ফের শিলিগুড়ি জংশনে ফিরে আসবে টয় ট্রেনটি । মাঝে সুকনায় নেচার ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার এবং মিউজিয়াম দেখার সুযোগ থাকবে পর্যটকদের জন্য । ভাড়া এখন মাথা পিছু 970 টাকা ধার্য করা হলেও ভরা মরসুমে তা 1 হাজার 200 টাকা করা হবে ।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের এডিআরএম চিলওয়াল বলেন, "পর্যটন শিল্পকে ছন্দে ফেরাতেই এই ধরনের নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । আপাতত ভাড়া বেশি হলেও আমরা রেল বোর্ডের কাছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছি । প্রয়োজনে পর্যটকদের সুবিধার্থে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে ।" মুম্বই থেকে ঘুরতে এসেছেন এহসান হোসেন ৷ বললেন, " দারুণ লাগছে । ছোটবেলা থেকেই দার্জিলিং টয় ট্রেনে চড়ার কৌতুহল ছিল । সেই সাধ আজ পূরণ হল ।"
হিমালায়ান হসপিটালিটি ট্র্যাভেল এন্ড ট্যুরস ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, "এই ধরনের পরিষেবা আমাদের উত্তরের পর্যটনকে ছন্দে ফেরাতে অনেকটাই সহযোগিতা করবে । আমরাও চেষ্টা করব যাতে পর্যটকরা এই ধরনের পরিষেবা উপভোগ করতে পারেন ।" ইস্টার্ন হিমালায়ান ট্র্যাভেল এন্ড ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের অমিত ভাওয়াল বলেন, "এই ধরনের পরিষেবা চালু করার জন্য আমরা খুব খুশি । এই টয় ট্রেন পরিষেবা পর্যটকদের কাছে আরও বেশি আকৃষ্ট করবে ।"
আরও পড়ুন : Singer Chaiwala : চা বিক্রেতার 'কিশোর' প্রেম !