ETV Bharat / state

ক্ষুধা মিটিয়ে শিল্পীসত্তা বাঁচিয়ে রাখাই দায় ভাওয়াইয়া শিল্পীদের - bhawaiya folk singers trouble

দেড়বছর ধরে দাপট চলছে করোনার ৷ অর্ধেক সময়ই লকডাউন, বিধিনিষেধ ৷ ফলে বিপাকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের লোকশিল্পীরা । সারিঞ্জা ছেড়ে অনেক ভাওয়াইয়া শিল্পী এখন রুটিরুজির তাগিদে টোটো চালাচ্ছেন । কেউ মাঠের সবজি বাজারে নিয়ে গিয়ে বেচছেন ৷

bhawaiya
bhawaiya
author img

By

Published : Jul 3, 2021, 9:42 PM IST

জলপাইগুড়ি, 3 জুলাই : উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত লোকগীতি ভাওয়াইয়া গান ৷ উত্তরবঙ্গের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে রয়েছে ভাওয়াইয়া গানের সুর ৷ দার্জিলিং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ভাওয়াইয়া শিল্পীদের আনাগোনা ৷ আব্বাসউদ্দিন আহমেদ, মহেশচন্দ্র রায়, রথীন্দ্রনাথ রায়, নাদিরা বেগমদের হাত ধরে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেয়েছে ভাওয়াইয়া গান ৷ কিন্তু সময় বদলেছে ৷ আর পাঁচটা শিল্পের মতোই ভাওয়াইয়া শিল্পীদেরও জীবনেও থাবা বসিয়েছে করোনা ৷

ভাওয়াইয়া কথাটির উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক মতবাদ রয়েছে । ভাব অর্থাৎ মনের অনুভূতি প্রকাশ করা ৷ অর্থাৎ, যে সমস্ত গানের মধ্য দিয়ে মনের অনুভূতি প্রকাশ করা হয় সেটাই হল ভাওয়াইয়া । গানের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতি, জনপদের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক ঘটনাবলী ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয় । হালফিলে যুগে লোকগান, পল্লীগীতি বাঁচিয়ে রাখাটাই দায় ৷ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বাদ্যযন্ত্র আজকাল আর মেলে না ৷ কষ্টেসৃষ্টে হলেও ভাওয়াইয়া গানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন শিল্পীরা ৷ কিন্তু তাতেও বাদ সাধল করোনা ৷

গান ছেড়ে টোটো চালাচ্ছেন ভাওয়াইয়া শিল্পীরা
গান ছেড়ে টোটো চালাচ্ছেন ভাওয়াইয়া শিল্পীরা

উত্তরবঙ্গের লোকশিল্পীরা এমনিতেই আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় ৷ তার উপর দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ মেলা, উৎসব ৷ প্রতিবছর উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া শিল্পীদের জন্য অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে । ভাওয়াইয়া উৎসব বা জল্পেশ মেলা এবং সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতে শিল্পীদের অনুষ্ঠানের জন্য ডেকে আনা হয় ৷ এতে শিল্পীদের পকেটে কিছু হলেও টাকা ঢোকে । কিন্তু করোনা সংক্রমণের জেরে সেসব বন্ধ । ফলে শিল্পীদের রোজগার বলতে শূন্য । এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সংসার চালাবেন নাকি তার শিল্পীসত্তা বাঁচিয়ে রাখবেন, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ লোকশিল্পীদের ।

দেড়বছর ধরে দাপট চলছে করোনার ৷ অর্ধেক সময়ই লকডাউন, বিধিনিষেধ ৷ ফলে বিপাকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের লোকশিল্পীরা । সারিঞ্জা ছেড়ে অনেক ভাওয়াইয়া শিল্পী এখন রুটিরুজির তাগিদে টোটো চালাচ্ছেন । কেউ মাঠের সবজি বাজারে নিয়ে গিয়ে বেচছেন ৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি নথিভুক্ত লোকশিল্পীদের মাসে এক হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয় ঠিকই । কিন্তু ওই কটা টাকায় সংসার চালানো কি আদৌ সম্ভব ? রাজ্য সরকারের কাছে প্রশ্ন শিল্পীদের ৷ ভাওয়াইয়ার সুরে দর্শকদের মোহিত করে রাখা শিল্পীরা বলছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের দিকে মুখ তুলে দেখুন ৷

করোনা দাপটে মেলা, সরকারি অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে শিল্পীরা
করোনা দাপটে মেলা, সরকারি অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে শিল্পীরা

আরও পড়ুন : বিদ্রুপ শুনেও নাচ ছাড়েননি, আজও ধ্রুপদীর পথেই সুবীর

জলপাইগুড়ি জেলা তথা উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট ভাওয়াইয়া শিল্পী চৈতন্য রায় ৷ উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া শিল্পীরা যে ভাল নেই তা শোনা গেল চৈতন্যবাবুর মুখে । তিনি বলছেন, "আমরা ভাতে মারা যাচ্ছি । উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া শিল্পীদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল না । কোনওরকমে সংসার চলছে । কিন্তু এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ । ফলে রোজগারও বন্ধ ।" শিল্পীরা শিল্পকর্মকে বাঁচিয়ে রাখবেন নাকি বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করবেন, এই চিন্তায় দিনরাত এক হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি ৷

ক্ষুধা মিটিয়ে শিল্পীসত্তা বাঁচিয়ে রাখাই দায় ভাওয়াইয়া শিল্পীদের

চৈতন্য রায় বলছেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের আগে লোকশিল্পীদের 3 হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৷ ভোট পার হয়ে গিয়েছে অনেকদিন ৷ আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি পূরণ করুক ৷ ঘোষণামতো মাসে 3 হাজার টাকা শিল্পীদের দেওয়া হোক ৷ শিল্পীদের তাহলে খুব সুবিধা হয় ৷"

প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বাদ্যযন্ত্র সারিঞ্জা । সেই বাদ্যযন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে কাজ করে চলেছেন শিল্পী ধনেশ রায় । আক্ষেপের সুরে বলছেন, "আমি ট্রেনে হকারি করি । তার সঙ্গে সারিঞ্জা বাজাই । করোনার জন্য অনুষ্ঠান সব বন্ধ হয়ে আছে ৷ এখন আমার রুজি রোজগার বন্ধ । টোটো চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি ৷ তাতেও সেভাবে রোজগার হচ্ছে না । কীভাবে সংসার চালাব বুঝে উঠতে পারছি না ।"

ময়নাগুড়ির খ্যতনামা বংশীবাদক দীপঙ্কর রায় ডাকুয়া বলেছেন, "আমার এই বাঁশির উপরেই রোজগার । সেই বাঁশি বাজিয়ে যা রোজগার করি তা দিয়েই সংসার চালাই । আমার এই বাঁশি বাজানোর উপরেই পরিবার চলে । এখন ভয়াবহ অবস্থা । সরকার যদি আমাদের সাহায্য করে তবেই বাঁচতে পারব । আমার মত সব শিল্পীদের একই অবস্থা । সরকার যদি সাহায্য না করে হয়তে অনেক শিল্পী এই পথ ছেড়ে দেবেন ।"

আরও পড়ুন : করোনার জেরে অনুষ্ঠান বন্ধ, খিদের জ্বালায় সুর ভুলেছেন বাউল শিল্পীরা

জলপাইগুড়ি, 3 জুলাই : উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত লোকগীতি ভাওয়াইয়া গান ৷ উত্তরবঙ্গের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে রয়েছে ভাওয়াইয়া গানের সুর ৷ দার্জিলিং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ভাওয়াইয়া শিল্পীদের আনাগোনা ৷ আব্বাসউদ্দিন আহমেদ, মহেশচন্দ্র রায়, রথীন্দ্রনাথ রায়, নাদিরা বেগমদের হাত ধরে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেয়েছে ভাওয়াইয়া গান ৷ কিন্তু সময় বদলেছে ৷ আর পাঁচটা শিল্পের মতোই ভাওয়াইয়া শিল্পীদেরও জীবনেও থাবা বসিয়েছে করোনা ৷

ভাওয়াইয়া কথাটির উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক মতবাদ রয়েছে । ভাব অর্থাৎ মনের অনুভূতি প্রকাশ করা ৷ অর্থাৎ, যে সমস্ত গানের মধ্য দিয়ে মনের অনুভূতি প্রকাশ করা হয় সেটাই হল ভাওয়াইয়া । গানের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতি, জনপদের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক ঘটনাবলী ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয় । হালফিলে যুগে লোকগান, পল্লীগীতি বাঁচিয়ে রাখাটাই দায় ৷ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বাদ্যযন্ত্র আজকাল আর মেলে না ৷ কষ্টেসৃষ্টে হলেও ভাওয়াইয়া গানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন শিল্পীরা ৷ কিন্তু তাতেও বাদ সাধল করোনা ৷

গান ছেড়ে টোটো চালাচ্ছেন ভাওয়াইয়া শিল্পীরা
গান ছেড়ে টোটো চালাচ্ছেন ভাওয়াইয়া শিল্পীরা

উত্তরবঙ্গের লোকশিল্পীরা এমনিতেই আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় ৷ তার উপর দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ মেলা, উৎসব ৷ প্রতিবছর উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া শিল্পীদের জন্য অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে । ভাওয়াইয়া উৎসব বা জল্পেশ মেলা এবং সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতে শিল্পীদের অনুষ্ঠানের জন্য ডেকে আনা হয় ৷ এতে শিল্পীদের পকেটে কিছু হলেও টাকা ঢোকে । কিন্তু করোনা সংক্রমণের জেরে সেসব বন্ধ । ফলে শিল্পীদের রোজগার বলতে শূন্য । এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সংসার চালাবেন নাকি তার শিল্পীসত্তা বাঁচিয়ে রাখবেন, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ লোকশিল্পীদের ।

দেড়বছর ধরে দাপট চলছে করোনার ৷ অর্ধেক সময়ই লকডাউন, বিধিনিষেধ ৷ ফলে বিপাকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের লোকশিল্পীরা । সারিঞ্জা ছেড়ে অনেক ভাওয়াইয়া শিল্পী এখন রুটিরুজির তাগিদে টোটো চালাচ্ছেন । কেউ মাঠের সবজি বাজারে নিয়ে গিয়ে বেচছেন ৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি নথিভুক্ত লোকশিল্পীদের মাসে এক হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয় ঠিকই । কিন্তু ওই কটা টাকায় সংসার চালানো কি আদৌ সম্ভব ? রাজ্য সরকারের কাছে প্রশ্ন শিল্পীদের ৷ ভাওয়াইয়ার সুরে দর্শকদের মোহিত করে রাখা শিল্পীরা বলছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের দিকে মুখ তুলে দেখুন ৷

করোনা দাপটে মেলা, সরকারি অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে শিল্পীরা
করোনা দাপটে মেলা, সরকারি অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে শিল্পীরা

আরও পড়ুন : বিদ্রুপ শুনেও নাচ ছাড়েননি, আজও ধ্রুপদীর পথেই সুবীর

জলপাইগুড়ি জেলা তথা উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট ভাওয়াইয়া শিল্পী চৈতন্য রায় ৷ উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া শিল্পীরা যে ভাল নেই তা শোনা গেল চৈতন্যবাবুর মুখে । তিনি বলছেন, "আমরা ভাতে মারা যাচ্ছি । উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া শিল্পীদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল না । কোনওরকমে সংসার চলছে । কিন্তু এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ । ফলে রোজগারও বন্ধ ।" শিল্পীরা শিল্পকর্মকে বাঁচিয়ে রাখবেন নাকি বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করবেন, এই চিন্তায় দিনরাত এক হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি ৷

ক্ষুধা মিটিয়ে শিল্পীসত্তা বাঁচিয়ে রাখাই দায় ভাওয়াইয়া শিল্পীদের

চৈতন্য রায় বলছেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের আগে লোকশিল্পীদের 3 হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৷ ভোট পার হয়ে গিয়েছে অনেকদিন ৷ আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি পূরণ করুক ৷ ঘোষণামতো মাসে 3 হাজার টাকা শিল্পীদের দেওয়া হোক ৷ শিল্পীদের তাহলে খুব সুবিধা হয় ৷"

প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বাদ্যযন্ত্র সারিঞ্জা । সেই বাদ্যযন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে কাজ করে চলেছেন শিল্পী ধনেশ রায় । আক্ষেপের সুরে বলছেন, "আমি ট্রেনে হকারি করি । তার সঙ্গে সারিঞ্জা বাজাই । করোনার জন্য অনুষ্ঠান সব বন্ধ হয়ে আছে ৷ এখন আমার রুজি রোজগার বন্ধ । টোটো চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি ৷ তাতেও সেভাবে রোজগার হচ্ছে না । কীভাবে সংসার চালাব বুঝে উঠতে পারছি না ।"

ময়নাগুড়ির খ্যতনামা বংশীবাদক দীপঙ্কর রায় ডাকুয়া বলেছেন, "আমার এই বাঁশির উপরেই রোজগার । সেই বাঁশি বাজিয়ে যা রোজগার করি তা দিয়েই সংসার চালাই । আমার এই বাঁশি বাজানোর উপরেই পরিবার চলে । এখন ভয়াবহ অবস্থা । সরকার যদি আমাদের সাহায্য করে তবেই বাঁচতে পারব । আমার মত সব শিল্পীদের একই অবস্থা । সরকার যদি সাহায্য না করে হয়তে অনেক শিল্পী এই পথ ছেড়ে দেবেন ।"

আরও পড়ুন : করোনার জেরে অনুষ্ঠান বন্ধ, খিদের জ্বালায় সুর ভুলেছেন বাউল শিল্পীরা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.