জলপাইগুড়ি, 6 অক্টোবর: বিজয়া দশমীর পর একাদশী তিথিতে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) বার্নিশ গ্রামে মা দুর্গা (Goddess Durga) পুজিতা হন মা ভান্ডানী রূপে (Bandhani Puja) ৷ উমার নিরঞ্জনের পর যখন বাংলাজুড়ে থাকে শুধুই বিষাদের সুর, ঠিক তখনই উত্তরবঙ্গের এই গ্রামে ফেরে বোধনের আচার ৷ মহিষাসুরমর্দিনী দশভূজা হলেও মা ভান্ডানী কিন্তু দ্বিভূজা ৷ তাঁর বাহন সিংহ নয়, বাঘ ৷
দেবী ভান্ডানী মূলত রাজবংশী সম্প্রদায়ের আরাধ্যা হলেও বর্তমানে এই পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠেন সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ ৷ ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী ভান্ডানী আদ্যা শক্তিরই আরও একটি রূপ ৷ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের বনবস্তিবাসী এই দেবীকেই আবার বনদুর্গা রূপে পুজো করেন ৷
আরও পড়ুন: মাটির নীচে থেকে উদ্ধার জোড়া মূর্তি, পুজো দিতে ছুটছেন স্থানীয়রা !
কথিত আছে, মর্ত্যে মহামায়ার নিরঞ্জনের পর চার সন্তানকে নিয়ে দেবী ফিরে যাচ্ছিলেন কৈলাসে ৷ সেই পথেই ছিল বার্নিশ গ্রাম ৷ সেই সময় স্থানীয় কৃষকরা মাকে এক রাতের জন্য এই গ্রামে থেকে যেতে বলেন ৷ চারিদিকে তখন শুধুই অনটন আর দারিদ্র্যের ছবি ৷ সেই অভাবী গ্রামেই এক রাত কাটিয়ে কৈলাসের পথে ফের রওনা হন জগৎজননী ৷ আর তারপর থেকেই গ্রামের দুর্দশা ঘোচে ৷ মায়ের আশীর্বাদে ভরে ওঠে গৃহস্থের ধানের গোলা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ৷ আর এই কারণেই ভান্ডানী পুজো শুরু হয় বার্নিশ গ্রামে ৷
স্থানীয় ঐতিহাসিকদের একাংশের দাবি, প্রায় 500 বছর ধরে বার্নিশ গ্রামে মা ভান্ডানীর পুজো হয়ে আসছে ৷ মায়ের পুজো দিতে রাজ্যের বাইরে এমনকী, পড়শি দেশ নেপাল, ভুটান থেকেও অসংখ্য পুণ্যার্থী আসেন ৷ একাদশীর ভোর রাত থেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন তাঁরা ৷ প্রতি বছর লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয় এই পুজোকে কেন্দ্র করে ৷ ভক্তদের বিশ্বাস, মা ভান্ডানী কাউকে ফিরিয়ে দেন না ৷ তাই এই পুজোয় মানত করার হিড়িক পড়ে যায় ৷ মাত্র একদিনের পুজো ঘিরে বসে বিরাট মেলা ৷ এবারও এর কোনও ব্যতিক্রম হয়নি ৷ বৃহস্পতিবার এই উপলক্ষে বার্নিশ গ্রামে উপচে পড়ে ভিড় ৷ মানত রক্ষা করতে দর্শনার্থীদের অনেকেই পায়রা ও পাঁঠা বলি দেন ৷