লাটাগুড়ি, 12 জুলাই : চারিদিকে নিকষ কালো অন্ধকার ৷ লাটাগুড়ির (Lataguri) কংক্রিটের রাস্তার বুক চিরে ছুটে চলেছে গাড়ি ৷ পাশেই গরুমারা জাতীয় উদ্যান ৷ আচমকা গাড়ির চালকের চোখ গিয়ে আটকাল জঙ্গলের দিকে ৷ সাদা থান পরা ওটা কে ? অন্ধকারেও চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে ৷ কঙ্কালসার চেহারা ৷ চুল আলুথালু ৷ বুক কেঁপে উঠল গাড়িতে থাকা পর্যটকদের ৷
সাদা থান পরা মহিলারূপী সেই অবয়ব এ বার চিৎকার করতে শুরু করল ৷ পাগলের মতো হাত-পা নাড়ছে ৷ কী ভয়ংকর সেই চেহারা ৷ যেন ফাঁকা রাস্তায় মানুষ দেখতে পেয়ে কিছু বলতে চাইছে কোনও অশরীরী ৷ শিউরে উঠলেন পর্যটকরা ৷ তাঁদের গলা শুকিয়ে কাঠ ৷ সারা শরীর অবশ ৷ সবাই জঙ্গলের মাঝে সেই ভয়ংকর তাণ্ডবলীলা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ৷ কোনও কিছু না-ভেবে অ্যাক্সিলেটরে চাপ দিলেন চালক ৷ মুহূর্তে গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় বেশ কয়েক কিলোমিটার বেড়ে গেল ৷ ওই এলাকা থেকে প্রাণ হাতে করে পালাল পর্যটক দল ৷
শুধু তাঁরাই নন, এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও অনেকের ৷ লাটাগুড়ি থেকে মালবাজারগামী 31 নং জাতীয় সড়ক দিয়ে যেতে গেলেই নাকি ভূতের (Ghost) খপ্পরে পড়তে হয় ৷ রাতে সেই পথ এড়িয়ে চলা শুরু করেন পর্যটকরা ৷
আরও পড়ুন: প্রথা মেনে পুজো হলেও মহিষাদলে এবারও গড়াবে না রথের চাকা
এ ভাবে বেশ কিছুদিন চললেও সেই ভূতের ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখকর হল না ৷ না, কোনও তান্ত্রিক বা ওঝা আনতে হয়নি ৷ মন্ত্র-তন্ত্র বা ঝাঁটা দিয়ে পিটিয়ে ভূত তাড়াতেও হয়নি ৷ সাহসী এক পর্যটক সেই 'ভৌতিক' কারবার দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে না-গিয়ে গাড়ি থামালেন ৷ সটান এগিয়ে গেলেন সেই সাদা থান পরা কঙ্কালসার 'ভূত'এর দিকে ৷ এরপর সেই 'ভূত'কে ভূতের নাচন দেখিয়ে ছাড়লেন তিনি ৷
মালবাজার থেকে লাটাগুড়ির দিকে ফেরা সময় তাঁর গাড়ির সামনে জঙ্গলের দিক থেকে এসে লাফালাফি শুরু করে দেয় সাদা থান পরা মহিলা । সেই পর্যটক ওই রাস্তায় ভূতের উৎপাতের কথা আগে শুনেছিলেন ৷ কিন্তু তা চাক্ষুষ করার পর তাঁর সন্দেহ হয় ৷ গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন তিনি ৷ তাই দেখে 'ভূত' তখন পালাবার পথ খুঁজছে ৷ তবে সে সুযোগ সে পায়নি ৷ তাকে ধরে ফেলেন পর্যটক ৷ জাতীয় সড়কে ভূত ধরা পড়েছে শুনে তাকে দেখতে একের পর এক গাড়ি থামে ৷ ভূত সেজে ভয় দেখানো মহিলাকে দেখতে লাইন পড়ে যায় ।
আরও পড়ুন: আজও ভিজবে তিলোত্তমা, বৃষ্টি বাড়বে উত্তরেও
পর্যটকদের অভিযোগ, ওই মহিলার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল । ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই তারা এই কাজ করত ৷ এরপর খবর দেওয়া হয় পুলিশে ৷ মেটেলি থানার পুলিশ ওই মহিলাকে নিয়ে যান । পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন । তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে । ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে দিয়ে কেউ এই কাজ করাতো কি না, তার খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷