ETV Bharat / state

উত্তরবঙ্গে পাচার ও চোরাশিকার রুখতে তৎপর বনদপ্তর - উত্তরবঙ্গে পাচার ও পোচিং

বন্যপ্রাণী পাচার রুখতে উত্তরবঙ্গে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে । বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশের মধ্যে এত সংখ্যায় পাচারকারীদের ধরা বা বন্যপ্রাণীর দেহাংশ উদ্ধার কোনও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা কোনও বিভাগ করতে পারেনি ।

Wild life poaching
উত্তরবঙ্গে পাচার ও পোচিং রুখতে উদ্যোগী বনবিভাগ
author img

By

Published : Jan 17, 2021, 5:13 PM IST

Updated : Jan 17, 2021, 9:52 PM IST

জলপাইগুড়ি, 17 জানুয়ারি : উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে প্রায়ই বন্যপ্রাণী পাচারের ঘটনা ঘটে ৷ জলদাপাড়া ও গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে গন্ডারকে হত্যা করে তার খড়্গ কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার । তা ছাড়া চিতাবাঘের চামড়া, হাতির দাঁত, তক্ষক পাচার তো হচ্ছেই ৷ এমনকী পাচারকারীদের কাছ থেকে একে 47-এর মতো আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে ৷

বন্যপ্রাণী ও বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারের প্রধান ক্ষেত্র উত্তর-পূর্ব ভারত । এখান থেকেই বণ্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচার করা হয় দেশ ও বিদেশে ৷ বিশেষ করে 31 নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে শিলিগুড়িকে পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করে পাচারকারীরা ৷ অসম কিংবা ভুটান থেকে পাচারকারীরা 31 নম্বর জাতীয় সড়ককে করিডোর করে শিলিগুড়ি দিয়ে পানিট্যাঙ্কি হয়ে নেপালে চলে যায় । আর নেপাল থেকেই বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচার হয় চিন, ইন্দোনেশিয়া সহ অন্য দেশে ৷ অভিযোগ এমনটাই । আবার এখন নতুন রুট ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা । অধিক মুনাফার লোভে ভুটান থেকে বন্যপ্রাণী পাচারকারীরা ফুন্টসিলিং, জঁয়গা হয়ে ভারতে ঢুকছে । ডুয়ার্স থেকে শিলিগুড়ি দিয়ে নেপাল হয়ে চিন,থাইল্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় পাচার করা হচ্ছে ৷ এর একাধিক প্রমাণ পেয়েছে বন্যপ্রাণী বিভাগ । সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বালুরঘাট দিয়ে "রেড ড্রাগন কোবরা" বিষের জারও উদ্ধার হয়েছে । তবে শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িকেই মাধ্যম করা হচ্ছে বারবার ৷ কিন্তু কেন ? উল্লেখ্য, ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার জন্য পাচারকারীরা শিলিগুড়িকেই বরাবর ব্যবহার করে আসছে ।

আন্তর্জাতিক পাচারচক্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের লিঙ্কম্যান, ক্যারিয়ার বা চোরাকারবারিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এটা নিশ্চিত । এর আগে গোরুমারার গ্রাতি বিটে দু'টি গন্ডার হত্যার পিছনে মায়ানমারের জঙ্গি যোগও পাওয়া গেছে । প্রায়ই বন্যপ্রাণীর বা বন্যপ্রাণীর দেহাংশ সহ ধরা পড়ছে । গত কয়েক বছরে বনবিভাগই ভুটানের নাগরিক ও ভারতের অনেক নাগরিককে হাতির দাঁত, গন্ডারের খড়্গ,তক্ষক, ক্লাউডেড লেপার্ড, চিতাবাঘের চামড়া, সাপের বিষ সহ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে । জলদাপাড়া, গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে পাচার অনেকটাই কমে গেছে বলে মনে করছে বনবিভাগ ।

রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা বলেন, "আমরা বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি । ভুটান থেকে 31 নম্বর জাতীয় সড়ক হয়েই এগুলি মূলত নেপালে পাচার হচ্ছে । বিশেষ করে এই বন্যপ্রাণীদের দেহাংশের যে কোনও মূল্য নেই, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি ৷ মুনাফার লোভে এদের মেরে দেহাংশ পাচার করা হচ্ছে । ইন্দো-ভুটান বর্ডার থেকে নেপাল বর্ডার পর্যন্ত সমস্ত বনকর্মীদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে ।"

আরও পড়ুন, বিরল প্রজাতির তক্ষক সহ বন্যপ্রাণী পাচার, গ্রেপ্তার দুই


গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বিভাগীয় বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, "পাচার রুখতে আমরা সবরকমভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি । আমাদের পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে । বনবিভাগের স্নিফার ডগের সাহায্যে নাকা চেকিংও করছি । ফলে আমরা শিকারিদের ধরতেও সক্ষম হয়েছি । সবমিলিয়ে যে জায়গায়গুলি স্পর্শকাতর সেই এলাকাগুলিতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে ।"

বন্যপ্রাণী পাচার রুখতে উত্তরবঙ্গে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে । বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশের মধ্যে এত সংখ্যায় পাচারকারীদের ধরা বা বন্যপ্রাণীর দেহাংশ উদ্ধার কোনও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা কোনও বিভাগ করতে পারেনি । কয়েক বছরে 100টির উপর পাচারকারীর গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে বনবিভাগ ৷ 775 জন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, 2টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া উদ্ধার হয়েছে । এছাড়াও 3টি গন্ডারের খড়্গ, 4টি বন্দুক, 15টি ক্লাউডেড লেপার্ডের চামড়া, 362টি লেপার্ডের হাড়, রাইফেল উদ্ধার হয়েছে । চিতাবাঘের চামড়া উদ্ধার হয়েছে 26টি ৷ 20টি প্যাঙ্গোলিন, কয়েক কোটি টাকার সাপের বিষ উদ্ধার করা হয়েছে ৷ এমনকী, মানস জাতীয় উদ্যানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার খুন করে পালিয়ে যাওয়া পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করেছে বনবিভাগ । ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের বন ও পরিবেশমন্ত্রকের ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল বিউরোর পক্ষ থেকেও পাচার বন্ধে বনবিভাগের ভালো কাজ করার প্রশংসাও করা হয়েছে । এছাড়াও উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী বিভাগ, গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প সহ অন্য বনবিভাগের কর্মীরাও পাচার রুখতে কাজ করছে ।

জলপাইগুড়ি, 17 জানুয়ারি : উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে প্রায়ই বন্যপ্রাণী পাচারের ঘটনা ঘটে ৷ জলদাপাড়া ও গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে গন্ডারকে হত্যা করে তার খড়্গ কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার । তা ছাড়া চিতাবাঘের চামড়া, হাতির দাঁত, তক্ষক পাচার তো হচ্ছেই ৷ এমনকী পাচারকারীদের কাছ থেকে একে 47-এর মতো আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে ৷

বন্যপ্রাণী ও বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারের প্রধান ক্ষেত্র উত্তর-পূর্ব ভারত । এখান থেকেই বণ্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচার করা হয় দেশ ও বিদেশে ৷ বিশেষ করে 31 নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে শিলিগুড়িকে পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করে পাচারকারীরা ৷ অসম কিংবা ভুটান থেকে পাচারকারীরা 31 নম্বর জাতীয় সড়ককে করিডোর করে শিলিগুড়ি দিয়ে পানিট্যাঙ্কি হয়ে নেপালে চলে যায় । আর নেপাল থেকেই বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচার হয় চিন, ইন্দোনেশিয়া সহ অন্য দেশে ৷ অভিযোগ এমনটাই । আবার এখন নতুন রুট ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা । অধিক মুনাফার লোভে ভুটান থেকে বন্যপ্রাণী পাচারকারীরা ফুন্টসিলিং, জঁয়গা হয়ে ভারতে ঢুকছে । ডুয়ার্স থেকে শিলিগুড়ি দিয়ে নেপাল হয়ে চিন,থাইল্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় পাচার করা হচ্ছে ৷ এর একাধিক প্রমাণ পেয়েছে বন্যপ্রাণী বিভাগ । সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বালুরঘাট দিয়ে "রেড ড্রাগন কোবরা" বিষের জারও উদ্ধার হয়েছে । তবে শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িকেই মাধ্যম করা হচ্ছে বারবার ৷ কিন্তু কেন ? উল্লেখ্য, ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার জন্য পাচারকারীরা শিলিগুড়িকেই বরাবর ব্যবহার করে আসছে ।

আন্তর্জাতিক পাচারচক্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের লিঙ্কম্যান, ক্যারিয়ার বা চোরাকারবারিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এটা নিশ্চিত । এর আগে গোরুমারার গ্রাতি বিটে দু'টি গন্ডার হত্যার পিছনে মায়ানমারের জঙ্গি যোগও পাওয়া গেছে । প্রায়ই বন্যপ্রাণীর বা বন্যপ্রাণীর দেহাংশ সহ ধরা পড়ছে । গত কয়েক বছরে বনবিভাগই ভুটানের নাগরিক ও ভারতের অনেক নাগরিককে হাতির দাঁত, গন্ডারের খড়্গ,তক্ষক, ক্লাউডেড লেপার্ড, চিতাবাঘের চামড়া, সাপের বিষ সহ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে । জলদাপাড়া, গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে পাচার অনেকটাই কমে গেছে বলে মনে করছে বনবিভাগ ।

রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা বলেন, "আমরা বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি । ভুটান থেকে 31 নম্বর জাতীয় সড়ক হয়েই এগুলি মূলত নেপালে পাচার হচ্ছে । বিশেষ করে এই বন্যপ্রাণীদের দেহাংশের যে কোনও মূল্য নেই, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি ৷ মুনাফার লোভে এদের মেরে দেহাংশ পাচার করা হচ্ছে । ইন্দো-ভুটান বর্ডার থেকে নেপাল বর্ডার পর্যন্ত সমস্ত বনকর্মীদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে ।"

আরও পড়ুন, বিরল প্রজাতির তক্ষক সহ বন্যপ্রাণী পাচার, গ্রেপ্তার দুই


গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বিভাগীয় বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, "পাচার রুখতে আমরা সবরকমভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি । আমাদের পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে । বনবিভাগের স্নিফার ডগের সাহায্যে নাকা চেকিংও করছি । ফলে আমরা শিকারিদের ধরতেও সক্ষম হয়েছি । সবমিলিয়ে যে জায়গায়গুলি স্পর্শকাতর সেই এলাকাগুলিতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে ।"

বন্যপ্রাণী পাচার রুখতে উত্তরবঙ্গে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে । বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশের মধ্যে এত সংখ্যায় পাচারকারীদের ধরা বা বন্যপ্রাণীর দেহাংশ উদ্ধার কোনও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা কোনও বিভাগ করতে পারেনি । কয়েক বছরে 100টির উপর পাচারকারীর গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে বনবিভাগ ৷ 775 জন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, 2টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া উদ্ধার হয়েছে । এছাড়াও 3টি গন্ডারের খড়্গ, 4টি বন্দুক, 15টি ক্লাউডেড লেপার্ডের চামড়া, 362টি লেপার্ডের হাড়, রাইফেল উদ্ধার হয়েছে । চিতাবাঘের চামড়া উদ্ধার হয়েছে 26টি ৷ 20টি প্যাঙ্গোলিন, কয়েক কোটি টাকার সাপের বিষ উদ্ধার করা হয়েছে ৷ এমনকী, মানস জাতীয় উদ্যানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার খুন করে পালিয়ে যাওয়া পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করেছে বনবিভাগ । ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের বন ও পরিবেশমন্ত্রকের ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল বিউরোর পক্ষ থেকেও পাচার বন্ধে বনবিভাগের ভালো কাজ করার প্রশংসাও করা হয়েছে । এছাড়াও উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী বিভাগ, গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প সহ অন্য বনবিভাগের কর্মীরাও পাচার রুখতে কাজ করছে ।

Last Updated : Jan 17, 2021, 9:52 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.