জলপাইগুড়ি, 25 জানুয়ারি: একটা সময় যারা পাখি মেরে খেত, আজ তাঁরাই নিজেদের জীবন-জীবিকার তাগিদে পাখি বাঁচাচ্ছেন। বিদেশি পাখি (Foreign Birds at Teesta Barrage in Gajoldoba) এলেই বাড়তি রোজগারের মুখ দেখেন গাজোলডোবা ব্যারেজের নৌকাচালক বা মাঝিরা। শীতকালের তিনটি মাসের ওপর সারা বছরের একটা বড় রোজগার এই সময়টাতেই হয়ে থাকে তাঁদের। গাজলডোবায় আগত পর্যটকদের পাখি দেখিয়ে রোজগার করেন ওনারা। মাঝিরা এখন নিজেদের তাগিদে পাখি শিকার বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিস্তা নদীর গাজোলডোবা ব্যারেজের কাছাকাছি প্রতিবছর শীতকালে প্রচুর বিদেশি পাখি আসে। বিশেষ করে নভেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করে তিস্তা নদীর এই ব্যারেজে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পর্যটক ও পাখিপ্রেমীদের ছবি তোলার জন্য তিস্তায় নিয়ে যান স্থানীয় মাঝিরাই। কোথায়, কবে, কোন স্পটে পাখি আসে সবই জানা এই তাদের। তার বিনিময়ে তাঁরা অর্থ নিয়ে থাকেন। মাঝি, পাখি প্রেমীদের কাছ থেকেই বিদেশি পাখিদের নামও শিখে নিয়েছেন। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত টানা তিনমাস গাজোলডোবায় অতিথি হয়ে থাকে পরিযায়ী পাখিরা।
বিশেষ করে সাইবেরিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেই আসে ওরা। যার মধ্যে অন্যতম রেড ওয়াটল্ড ল্যাপউয়িং (Red-Wattled Lapwing), রিভার ল্যাপউয়িং (River Lapwing), নর্দান ল্যাপউয়িং (Northern Lapwing), রুডি শেলডাক (Ruddy Shelduck), গ্রেট ক্রেস্টেড গ্রিব (Great Crested Grebe), ব্ল্যাক হেডেড গাল (Black-Headed Gull), মাল্লার্ড (Mallard), কমন শেলডাক (Common Shelduck), ফালকেটেড ডাক (Falcated Duck), কমন টিল (Common Teal), রেড ক্রেসেড পোচার্ড (Red Crested Poachard), কচন পিগমি গুজ (Cotton Pygmy Goose), বার হেডেড গুজ (Bar Headed Goose) ৷
আরও পড়ুন: পাখি দেখতে গ্রামে আসুন পর্যটকরা, চাইছে সিতনটোলা
গাজোলডোবার মাঝি তথা মৎস্যজীবী রবি মালো দাস বলেন, "একটা সময় আমরা তিস্তা নদীতে মাছ ধরেই সংসার চালাতাম। তিস্তা নদীতে পাখিও মেরে খেতাম। কিন্তু এখানে অনেকেই পাখির ছবি তুলতে আসতেন, যারা আমাদের সচেতন করেন। এখন আর পাখি মারি না। পাখি মারা তো দূর, কেউ পাখির ক্ষতি করার চেষ্টাও এখানে করে না ৷ এখানে যে পাখিপ্রেমীরা আসতেন বা আসেন তাঁরাই আমাদের পাখি চিনিয়েছেন। আগে তো অত পাখি চিনতাম না। পাখিদের নামও জানতাম না, এখন জানি ৷ তারপর আস্তে আস্তে গাজোলডোবায় আসা বিদেশি পাখি দেখিয়ে রোজগার করতে শুরু করলাম।" এখন সারাদিন পাখিপ্রেমীদের সঙ্গে থাকি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক পর্যটক পাখির ছবি তুলতে আসেন। তাঁরা ফোন করে আমাদের নৌকা বুকিং করেন।
মৎস্যজীবীরা বলছেন প্রচুর পাখি এসেছে এবার। এই সময়টা পাখি এলেই আমাদের বাড়তি রোজগার হয়। তাঁরাও পাখির প্রেমে পড়ে গিয়েছেন ৷ প্রাক্তন অনানারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন তথা জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ডঃ রাজা রাউত বলেন, "গাজোলডোবায় প্রচুর পাখি আসে। পাখি দেখিয়ে প্রচুর মানুষের রোজগার হয়। যারা একটা সময় পাখি মারতেন তাঁরাই এখন পাখি রক্ষা করছেন, নিজেদের জীবন-জীবিকার তাগিদে।"