জলপাইগুড়ি, 31 মার্চ: স্কুলের গণ্ডি পেরোননি কবিগুরু ৷ তবে তাঁর যে অফুরান সৃষ্টি, তা-ই পড়ে শেষ করা কঠিন ৷ তাঁকে ঘিরেই পাঠ্যক্রমে আলাদা আলাদা অধ্যায় ৷ এ তো গেল বিশ্বকবির কথা ৷ অপরদিকে, টমাস আলভা এডিসনের সৃষ্টি কোটি কোটি মানুষের জীবন বদলে দিয়েছিল ৷ তাঁকে সবচেয়ে সফল উদ্ভাবকদের মধ্যে একজন হিসেবে মনে করা হয় ৷ অথচ তাঁকেই একদিন শিক্ষকদের কাছে শুনতে হয়েছে, তিনি এতই বোকা যে তাঁকে কিছু শেখানোই যায় না ৷
এঁরা কিংবদন্তি ৷ তবে আজ যাঁর গল্প বলব, তিনি কিংবদন্তি না হলেও তাঁর সঙ্গে পরিচয় করাতে গিয়ে এসেই গেল এই দুটি উদাহরণ ৷ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খাণ্ডালবাহালে উমেশ গণপত । যিনি দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন ৷ ইংরেজিতে নম্বর ছিল 21 ৷ হতাশায় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে শুরু করেছিলেন চাষাবাদ । দুধ ব্যবসায়ীর সেই ছেলে স্নাতকোত্তর পাশ করেন ৷ সেই ইংরেজিতেই ৷ এরপর ইউপিএসসি-তেও দুর্দান্ত রেজাল্ট ৷ আজ তিনি আইপিএস অফিসার ৷
মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা উমেশ ৷ তাঁর বাবা গণপত খাণ্ডবাহালে মহিরাভানি গ্রামে কৃষিকাজ করেন । উমেশের ছেলেবেলা কেটেছে নাসিকেই ৷ পড়াশোনায় হাতেখড়ি এসজি পাবলিক স্কুল দিয়ে ৷ এরপর নাসিকের মডার্ন হাইস্কুল ৷ নাসিকেরই কেটিএইচএম জুনিয়র কলেজ (একাদশ, দ্বাদশ) থেকে দেন দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ৷ বরাবরই মেধাবী ছাত্র হলেও সেই পরীক্ষায় তিনি ধাক্কা খান ৷ ইংরেজিতে মাত্র 21 নম্বর পেয়েছিলেন ৷ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ে তিনি ঠিক করেন, আর পড়াশোনা করবেন না ৷ বাবার সঙ্গে চাষবাসে মন দেন উমেশ ৷
বছর দুই এ ভাবেই কাটে ৷ এরপর বন্ধুদের পরামর্শে সিদ্ধান্ত বদলান ৷ উমেশ বলেন, "মহারাষ্ট্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিসট্যান্সে পড়াশোনা শুরু করি । সায়েন্সের ছাত্র ছিলাম । পরে আমি কলাবিভাগে চলে আসি । দ্বাদশ শ্রেণিতে ফেল করা সেই ইংরাজি নিয়েই গ্র্যাজুয়েশন করি বাড়িতে বসে । এমএ-ও পাশ করি ইংরাজি নিয়ে । এরপর বিএড করি ।"
আরও পড়ুন: শিবপুরের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস, শান্তি বজায় রাখার আবেদন মমতার
যেহেতু দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন, তাই পরে হর্টিকালচার নিয়ে বিএসসি-টাও সেরে ফেলেন উমেশ ৷ এমএ, বিএসসি সবই নাসিকের কেটিএইচএম জুনিয়র কলেজ থেকে ৷ এরই মাঝে পুলিশের পিএসআই পরীক্ষায় বসেন তিনি । সেটাই ছিল তাঁর রাজ্য স্তরে প্রথম চাকরির পরীক্ষা । প্রথম বারেই পাশ । এতেই আত্মবিশ্বাস বাড়ে ৷ উমেশ প্রস্তুতি শুরু করে দেন আইপিএস পরীক্ষার । লক্ষ্যভেদ সেখানেও হয়েছে ৷ ইউপিএসসি পড়ার জন্য 2012 সালে উমেশ দিল্লিযাত্রা করেন ৷ এই পরীক্ষায় ক্র্যাক করেন 2015 সালে ৷ ব়্যাংক ছিল 704 ৷ উমেশই তাঁর গ্রামের প্রথম ব্যক্তি যিনি আইপিএস পাশ করেছেন ।
উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন জেলায় কাজ করেছেন খাণ্ডবাহালে উমেশ গণপত । কোচবিহার জেলার দিনহাটার এসডিপিও পদে থাকার পর, তিনি 2020 সালে আলিপুরদুয়ার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবেও কাজ করেছেন । চলতি মাসে তিনি জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার হিসেবে কাজে যোগ দেন ।
উমেশের কথায়, "নিজের ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব হয় । একটা পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া নয় । আমি আজকের ছাত্র সমাজকে বলতে চাই, যত কঠিন পরিস্থিতিই হোক, লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যেতে হবে । তবেই লক্ষ্য ভেদ করা যাবে । মনের জোর থাকলে সব হাসিল করাই সম্ভব । ব্যর্থতা আসবেই ৷ তা বলে হেরে গেলে চলবে না ।"
20 বছর আগের ব্যর্থতার কথা আর মনে রাখতে চান না । এখন সরকারি পরিষেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে এগিয়ে যেতে চান খাণ্ডালবাহালে উমেশ গণপত ।