জলপাইগুড়ি, 26 মে: কোরোনা জেরে থমকে ডুয়ার্সের পর্যটন শিল্প । ডুয়ার্সের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড এখানকার পর্যটন শিল্প । কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন ব্যবসা । লকডাউনের ফলে ইতিমধ্যেই ক্ষতি হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা । হোটেল, রিসর্টের কর্মীদের মাইনে কাটা শুরু হয়ে গেছে । পর্যটন দপ্তরের কাছে আর্থিক প্যাকেজ সহ বিভিন্ন ছাড়ের দাবি জানিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা ।
লকডাউনের পরেই পর্যটকদের জাতীয় উদ্যানের জঙ্গলে প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে । তারপর গণপরিবহন, দুরপাল্লার ট্রেন-বাস সব বন্ধ ফলে ঘুরতে আসার কোন প্রশ্নই নেই । এমন পরিস্থিতিতে কবে যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন স্বাভাবিক হয় তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে । ফলে বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা । কবে স্বাভাবিক হবে ডুয়ার্সের পর্যটন উত্তর জানা নেই কারও । গরুমারা, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যগুলিতে পর্যটক না ঢুকতে পারায় ডুয়ার্সের বেসরকারি রিসর্টগুলিতে সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে । আগামী পুজোতেও বুকিং হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে, জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি ট্যুর অপারেটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অলোক চক্রবর্তীর । তিনি বলেন, "ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসা মূলত জঙ্গলকেন্দ্রিক । এই রাজ্য বা ভিন রাজ্য থেকে পর্যটকরা আসেন কেবল জঙ্গলে ঘোরার জন্য । লকডাউনের পর জঙ্গল ফের তিনমাসের জন্য বন্ধ থাকবে । ফলে এখন আর কেউ আসবে না । আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে । এছাড়া প্রচুর হোম স্টে আজ ক্ষতির মুখে । রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে আমরা প্যাকেজের আবেদন করছি । না হলে পর্যটন শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না ।"
লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেছেন, "মার্চ-এপ্রিল মাসে বোর্ডের পরীক্ষাগুলি শেষ হয় । ফলে এই সময় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকরা ডুয়ার্সে ঘুরতে আসেন । কিন্তু লকডাউনের জেরে সেসব বন্ধ । ফেব্রুয়ারির পর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ডুয়ার্সের সব রিসর্টে টানা বুকিং ছিল । লাটাগুড়িতেই কম-বেশি ৬২টি রিসর্ট বুক ছিল । সেসব বাতিল হয়েছে । তার মধ্যে ডুয়ার্সে পর্যটকরা আসেন বন্যপ্রাণী দেখার জন্য । এদিকে ১৫ জুন থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের সমস্ত জঙ্গল তিনমাসের জন্য বন্ধ থাকে । ফলে এই সময়টাতেও আমাদের ব্যবসা বন্ধ থাকবে ।" বিশেষ করে এই লাটাগুড়িকে কেন্দ্র করেই গোরুমারা জাতীয় উদ্যান,জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, লাভা, সান্তালেখোলা, চাপড়ামারি, ঝান্ডি-সহ পাহাড় ঘুরে থাকে পর্যটকরা । কিন্তু কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে গোরুমারা হর্নবিল নেস্ট,মূর্তি ইকো ট্যুরিজম সেন্টার,মৌচুকি, এলিফেন্ট ক্যাম্প, কালিপুর ইকো ভিলেজ,রাইনো ক্যাম্প,পানঝোরা পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের পক্ষ থেকে ।
ডুয়ার্স ডেভলপমেন্ট ফোরামের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব জানান, "ডুয়ার্সে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ৭২ হাজার মানুষ যুক্ত । পরোক্ষভাবে যুক্ত ৮৬ হাজার মানুষ । কিন্তু এই মুহূর্তে কর্মহীন সবাই । লকডাউন উঠে গেলেও দুর্গাপুজোয় বুকিং হবে কিনা বা মানুষজন ঘুরতে আসবেন কিনা বলা মুশকিল । এখনও পর্যন্ত আর্থিক লেনদেনের ক্ষতি ৭২০ কোটি । জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার ডুয়ার্সে রয়েছে ২৭৪ টি রিসর্ট । রিসর্টগুলির সঙ্গে তাদের গাড়ির চালক,গাড়ির মালিক,রিসর্ট,হোটেলের কর্মী, গাইড সবাই এখন বিপাকে পড়েছে । ডুয়ার্স টুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের থেকে আমরা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের কাছে আর্থিক প্যাকেজ দাবি করেছি । না হলে সবাই মারা পড়বে । কারণ আমরা কতদিন কর্মীদের মাইনে দিতে পারব তা বলা মুশকিল । ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আজ অসহায় । ডুয়ার্সে ১৪টি সংগঠন একত্রিত হয়ে কী করব তার রূপরেখা ঠিক করছি ।"