জলপাইগুড়ি, 7 অক্টোবর: তিস্তায় ভেসে আসা মৃতদেহ উদ্ধারে বিলম্ব। নদীর জলে ভেসে আসা মৃতদেহ খুবলে খাচ্ছে শিয়াল-কুকুর ৷ বিস্ফোরক অভিযোগ নন্দনপুর বোয়ালমারির গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য জিতেন বিশ্বাস, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর মিশ্রর। সিকিমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে তিস্তা নদীতে ভেসে আসছে একের পর এক মৃতদেহ । জলপাইগুড়ি জেলায় এখনও পর্যন্ত 27টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে । বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছনো এতটাই কঠিন যে সেখান থেকে দেহ উদ্ধার করা খুব জটিল হয়ে পরেছে।
এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা দেহ উদ্ধারের কাজ করলেও একসঙ্গে এত মৃতদেহ ভেসে ওঠায় সমস্যা চরমে উঠেছে । ফলে সকালে উদ্ধারে গিয়ে রাত পর্যন্ত গড়িয়ে যাচ্ছে । রাত হয়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীতে কোন পথে যাওয়া হয়েছিল, অন্ধকারে আসার সময় সেই রাস্তা গুলিয়ে যাচ্ছে । ফলে মৃতদেহগুলিতে যেমন পচন শুরু হয়েছে, অন্যদিকে শেয়াল-কুকুর খুবলে খাচ্ছে বলেও অভিযোগ ।
জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসক সুদীপ পাল বলেন, ‘‘তিস্তা নদীতে মৃতদেহ ভেসে ওঠার খবর পাওয়া মাত্রই মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য টিম পৌঁছে যাচ্ছে । তবে এমন কিছু জায়গায় মৃতদেহগুলো রয়েছে, সেখানে গিয়ে দেহ উদ্ধার করতে যাওয়াটা খুবই কষ্টকর । তাই সময় লাগছে । কারণ নদীর জল-কাদা পেরিয়ে যেতে হচ্ছে । এমন অবস্থা যে তিস্তার বুক থেকে একটি মৃতদেহ আনতে সারাদিন লেগে যাচ্ছে । পুলিশ, এনডিআরএফ-সহ অন্যান্য কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে মৃতদেহগুলো জলপাইগুড়ি মর্গে নিয়ে আসছেন । একসঙ্গে এত মৃতদেহ উদ্ধার করার প্রয়োজন হয়ে পড়ায় সমস্যা চরমে উঠেছে ।’’
নন্দনপুর বোয়ালমারির গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য জীতেন বিশ্বাসের অভিযোগ, কয়েকদিন থেকে মৃতদেহ তিস্তার চরে পড়ে থাকার দরুণ শিয়াল খুবলে খাচ্ছে । তিনি প্রশাসনের কাছে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর মিশ্র জানান, মৃতদেহ তিস্তাতে ভেসে এসেছে । শিয়াল-কুকুরে খুবলে খাচ্ছে বলে তাঁর কাছেও খবর এসেছে।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত 27টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে । মৃতদেহের মধ্যে 7টি মৃতদেহ শনাক্ত করা গিয়েছে । 7টির মধ্যে 5 জন সেনা জওয়ানের দেহ ৷’’ এনডিআরএফ-এর ডেপুটি কমান্ডেন্ট বিবেক কুমার জানান, তিস্তায় জল কমে গিয়েছে ৷ ফলে স্পিডবোট চালানো যাচ্ছে না । কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটেই যেতে হচ্ছে মৃতদেহ উদ্ধারে । স্পিডবোট চালাতে 3-4 ফুট জল চাই । ফলে সমস্যা হচ্ছে । মৃতদেহগুলো তিস্তা নদীর এমন কিছু জায়গায় আছে সেখানে যেতে অনেক সময় লাগছে । জলপাইগুড়ি জেলায় দু’টি টিম কাজ করছে ।
জলপাইগুড়ি পৌরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল তথা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বিভাগীয় প্রধান স্বরূপ মণ্ডল বলেন, ‘‘তিস্তার নদীর বুকে মৃতদেহ উদ্ধারে দু’কিলোমিটার ভেতরে যেতে হচ্ছে । কখনও কখনও উদ্ধারকারীদের কাদায় হাঁটু পর্যন্ত ঢুকে যাচ্ছে । তিস্তার চরের লোক মৃতদেহ দেখলে আমাদের খবর দিচ্ছে । তারপর আমরা উদ্ধারে যাচ্ছি । তিস্তার নদীর চরে সর্বত্র যাওয়া যাচ্ছে না । তিস্তা নদীতে যারা যাচ্ছেন তাদেরও একটা ভয় থাকছে । হঠাৎ করে নদীতে জল বেড়ে গেলে তাদের প্রাণ হাতে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে ।’’
আরও পড়ুন: তিস্তার জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে মেয়ে, দেহের খোঁজে মর্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মান্নান খান