জলপাইগুড়ি, 27 জানুয়ারি : পাহাড়ের রঙিন রূপ কোনওদিন দেখেছেন ? একসঙ্গে কালো, সাদা, সবুজ রঙের পাহাড় ? সেইসঙ্গে সামনে খরস্রোতা নদী । ভাবছেন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঠিকানা কোথায় ? জায়গাটার নাম ভুটান ঘাট । আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভিতরে রয়েছে এই বিভিন্ন রঙের পাহাড় । ভুটানের এই পাহাড় দেখার ইচ্ছে থাকলেও উপায় হয় না পর্যটকদের । তবে খুব তাড়াতাড়ি ইন্দো-ভুটান সীমান্তের পর্যটনস্থল ভুটানঘাট খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পর্যটন দপ্তর ।
আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের ভারত ও ভুটানের সীমান্তবর্তী এলাকায় ভুটানঘাট অবস্থিত । মূলত পাহাড়ের গায়ে বিভিন্ন রং দেখার জন্য এই ভুটানঘাটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে পর্যটকদের কাছে । ভুটান পাহাড় দেখার জন্য প্রতিদিনই পর্যটকরা আসেন ৷ কিন্তু, ভুটানঘাটে পাহাড়ের রঙিন প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন না । কালো সাদা,সবুজ,খয়েরি ও আরও প্রায় সাত-আটটা রঙের পাহাড় রয়েছে এখানে ৷ যা অন্য কোনও জায়গায় পাহাড়ের গায়ে লক্ষ্য করা যায় না । ফলে স্বাভাবিকভাবেই তা দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এই ভুটানঘাটে আসেন পর্যটকরা ৷ আগে জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকা ছিল ভুটানঘাট । নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কেএলও-র বাড়বাড়ন্ত ছিল । তবে এখন পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই ৷ এই ভুটানঘাটে যেতে গেলে পেরোতে হয় জঙ্গলের পথ । আলিপুরদুয়ার থেকে শামুকতলা হয়ে ময়নাবাড়ির জঙ্গলের পথ দিয়ে যেতে হয় । তবে ভারত-ভুটান সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় এবং বক্সা টাইগার রিজ়ার্ভের ভিতর দিয়ে যেতে হয় বলে সাধারণ মানুষকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয় না বনবিভাগ ।
তবে এই বিষয়ে এবার উদ্যোগ নিয়েছে বনদপ্তর ৷ রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, "আমি এর আগেও ভুটানঘাটে গিয়েছিলাম । ভুটানঘাটকে পর্যটকদের জন্য খুব তাড়াতাড়ি খুলে দেওয়া হবে। তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি । তবে সেখানে রাতে থাকার কোনও ব্যবস্থা থাকবে না । ডে কেয়ার সেন্টার করা হবে ৷ আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের থেকে রিপোর্ট পর্যটন দপ্তরের হাতে এসেছে । সেখানে নিরাপত্তার জন্য এসএসবি রয়েছে ৷ তাই আমরা ভারত সরকার ও ভুটান সরকারের সঙ্গে কথা বলে আইন মেনেই সব ব্যবস্থা নেব ৷ " তবে ভুটানঘাট পর্যটকদের কাছে খুলে দেওয়া এই আর্থিক বছরে সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি ৷
আরও পড়ুন : কংক্রিটের সৌন্দর্যায়ন, ঝুঁকির মুখে সোনাঝুরি
ভুটানঘাট খুলে গেলে এলাকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা । স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী রাজকুমার ছেত্রী বলেন, "ভুটানঘাটকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ব্লু হোম স্টে-র ব্যবস্থা করা হয়েছে । এর জন্য পার্শ্ববর্তী এলাকা কাঞ্চালি বস্তি, ময়নাবাড়িতে 6টি হোম স্টে তৈরি হয়েছে । কিন্তু ভুটানঘাট না খোলা থাকার জন্য তাঁরা বিপাকে পড়েছেন । ভুটানঘাট খুলে গেলে এই এলাকার প্রচুর ছেলে-মেয়ে যেমন কাজ পাবে, তেমনই কর্মসংস্থান হবে বলে আশাবাদী তিনি । অন্যদিকে ভুটানঘাট খুলে দিলে ঘোরার নতুন ঠিকানা পাবেন বলে মনে করছেন পর্যটকরা । তাঁরা বলেন, "আমরা ভুটানঘাট ঘুরতে এসেছিলাম । কিন্তু ঢোকার মুখে বনবিভাগের চেকপোস্টে আমাদের আটকে দেওয়া হয়েছে । ভুটানঘাট পর্যটনদের জন্য খুলে দিলে ভালো হয়।"