শিলিগুড়ি, 29 অগস্ট: দুর্গাপুজোর আর হাতেগোনা কয়েকটা দিন বাকি । শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে প্রতিটি পুজো মণ্ডপে । কোথাও থিম আবার কোথাও সাবেকি । করোনার দু'বছরের ভ্রুকুটি উড়িয়ে এবার স্বাভাবিক ছন্দে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজাে । কিন্তু এবার পুজোতেও সিঁদুরে কালো মেঘ দেখছে ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা । কারণ রাজ্য সরকারের তরফে থার্মোকল নিষিদ্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা (Thermocol Artists and Decorators in Trouble) ।
বরাবরই পুজো উদ্যোক্তারা দুর্গাপুজোর আয়োজনে অন্তত ছয় মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করে । মূর্তি থেকে পুজোমণ্ডপ । অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় কাজ । কিন্তু আচমকা চলতি বছরের জুলাই মাসে রাজ্য সরকারের তরফে প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । আর তাতেই বিপাকে পড়েছে উত্তরবঙ্গের অন্তত দশ থেকে পনেরো হাজার শিল্পী ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা । কারণ পুজোমণ্ডপ সাজিয়ে তোলার একটি অপরিহার্য সামগ্রী থার্মোকল । শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় থামোর্কল চেহারা নেয় নানা ধরনের উপকরণে ।
আরও পড়ুন: কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, সমস্যায় রামেশ্বরপুর মালাকার পাড়ার চাঁদমালা তৈরির শিল্পীরা
সিংহভাগ পুজো মণ্ডপের জন্য তাই থার্মোকলের তৈরি সামগ্রী তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে । নিয়ে নেওয়া হয়েছে অগ্রিম টাকাও । ঠিক সেইসময় রাজ্যের নিষেধাজ্ঞার নির্দেশিকা বিপাকে ফেলে দিয়েছে শিল্পীদের । নিষেধাজ্ঞায় ছাড় না দিলে পথে বসতে হতে পারে শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের । তাই শিল্পী ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের কাতর আবেদন, অন্তত এই বছরটা নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দিক রাজ্য সরকার । আগামী বছর থেকে থার্মোকলের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব বিকল্প কোনও সামগ্রী পুজোমণ্ডপ সাজানোর কাজে ব্যবহার করা হবে ।
উত্তরবঙ্গ ডেকোরেটর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গোপাল সরকার বলেন, "করোনার কারণে দু'বছর আমাদের দেওয়ালে পীঠ ঠেকে গিয়েছিল । চলতি বছরে আশার আলো দেখেছি আমরা । ভালো কাজও চলছিল । কিন্তু রাজ্য সরকারের থার্মোকল ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করতেই আমরা ফের সমস্যায় পড়ে গিয়েছি । কারণ পুজোমণ্ডপ সাজিয়ে তোলার জন্য থার্মোকলের সামগ্রী তৈরি প্রায় শেষের দিকে । আমরা অগ্রিম টাকাও নিয়েছি । এমতাবস্থায় এই একদম শেষ মুহূর্তে কী করব জানা নেই । আমাদের আবেদন এই বছরটা ছাড় দিক রাজ্য সরকার ।"
আরও পড়ুন: লাভ আছে, তবু কারিগর ও কাঁচামালের অভাবে ধুঁকছে শোলার কদম ফুল শিল্প
সংস্থার সভাপতি সঞ্জয় পাল বলেন, "প্যান্ডেলের জন্য থার্মোকল তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে । দশ হাজার শিল্পী এই কাজ করে সংসার চালায় । একদিকে যেমন আমরা বিপদে পড়ব, একইভাবে উদ্যোক্তারাও বিপদে পড়বে ।"
থার্মোকল শিল্পী দেবাশিস বণিক বলেন, "20-25 বছর ধরে এই কাজ করছি । আমরা অগ্রিম পেয়ে বিনিয়োগ করে ফেলেছি । এই সময় নিষেধাজ্ঞা না তুললে সব টাকা জলে যাবে । আমরা না খেয়ে মরব । সংসার চালাতে পারব না । তাই রাজ্য সরকার এবছর আমাদের রেহাই দিক । সামনের বছর থেকে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করব ।"