হাওড়া, 4 মার্চ : গরমাগরম ভোটের হাওয়া । চলছে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ । গরম ভোটের রঙিন আবির এবার মিষ্টিতেও । অবাক লাগছে ? ঠিকও শুনছেন, মিষ্টিতেও রাজনীতি । সৃষ্টিকর্তার ঠিকানা হাওড়া । সৌজন্যে মা গন্ধেশ্বরী সুইটস । এই উদ্যোগে পেট ও মন দুই ভরছে মিষ্টি প্রিয় বাঙালির । সেইসঙ্গে এর পিছনে কিন্তু একটা অভিনব বার্তাও আছে ।
ছোট দোকান । কাঁচের শোকেজ-ট্রেতে থরে থরে সাজানো জিভে জল আনা নানা ধরনের সন্দেশ । এ কিন্তু, যে সে সন্দেশ নয় । কোনওটা কাস্তে হাতুড়ি, কোনওটা আবার পদ্মফুল কিংবা জোড়া ফুল । রয়েছে রং-বেরঙের রসগোল্লাও । রাজনৈতিক রং । লাল, সবুজ ও গেরুয়া রং । টুম্পা সোনাও মিষ্টির হাত ঠাঁই নিয়েছে ট্রেতে । কিন্তু কেন এমন ভাবনা ?
বাংলা ভাষায় একটা মিষ্টতা আছে । একথা প্রায় অনেকের মুখেই স্বীকৃতি পেয়েছে । আর বাঙালি বরাবরই আবেগপ্রবণ ও রাজনীতি সচেতন বলে পরিচিত । সেই বাঙালি যখন রাজনৈতিক পরিসরে প্রবেশ করে তখনই মিষ্টতা হারায় তাঁর ভাষা । সেই ভাষাই তখন হয়ে ওঠে অশালীন ও নিম পাতার মতো তিক্ত । আর ভোটের আগে তো কোনও কথাই নেই । তাই এবার ভোটের আগে জিভে মিষ্টতার স্বাদ ফিরিয়ে দিতে হাওড়ায় একই ছাদের তলায় সব রাজনৈতিক দলের প্রতীক সহ তৈরি হয়েছে বাঙালির রসনা তৃপ্তির রাজনৈতিক মিষ্টি ।
বহু বছর ধরেই ভোটের আগে ও খেলাধূলার আগে এই ধরনের মিষ্টি তৈরি করে আসছেন হাওড়ার মিষ্টি দোকানের মালিক কেষ্ট হালদার । তিনি বলেন, " বিধানসভা ভোট তো এসেই গিয়েছে । এটা তো আমাদের উৎসবের মতো ব্যাপার । প্রত্যেক দল থেকে দেওয়াল লিখন চলছে । মিছিল, মিটিং হচ্ছে । সাধারণত সব শুভ কাজ মিষ্টি দিয়েই শুরু হয় । তাই মিষ্টির মাধ্যমে প্রত্যেক দলের চিহ্ণ তৈরি করেছি । সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস ও তৃণমূলের রসগোল্লা রয়েছে ।"
এর মধ্যে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে ? এই বিষয়ে মিষ্টির দোকানের মালিক বলছেন, " খেলাটা যেন মিষ্টিভাবে হয় । তার সঙ্গে সঙ্গে যাতে আমরা সবাই মিলে এই উৎসব আনন্দের মধ্যে দিয়ে সফল করতে পারি এবং আমরা প্রত্যেকটা মানুষকে বলতে চাই শান্তিভাবে ভোট দিন । আর যে দলই জিতুক তাঁরা যেন শান্তিভাবে সবার সঙ্গে মিলেমিশে যেন বন্ধুতটা বজায় রাখে । মিষ্টির মাধ্যম দিয়ে যাতে মিষ্টি সম্পর্কটা হয় তার জন্য আমার এই ভাবনা ।"
আরও পড়ুন, নন্দীগ্রাম দিবসের আবহেই নন্দীগ্রামে মনোনয়ন পেশ মমতার, সমাপতন ?
এই মিষ্টি-উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্রেতারা । মন ভরে স্বাদ নিচ্ছেন মিষ্টির । আর চাইছেন সব দলের মধ্যে রাজনৈতিক মিষ্টতা বজায় থাকুক । এক ক্রেতা জানাচ্ছেন, মিষ্টির স্বাদ দারুণ । অন্য জায়গাতে রাজনীতি বজায় থাকলেও মিষ্টির ক্ষেত্রে কিন্তু কোনও বাছবিচার নেই । একটাই কথা, মিষ্টির দোকানে এসে কোনও রাজনীতি নয় । ক্ষোভ থাকা দলকে না হোক, মিষ্টিতে কামড় বসিয়ে সুখ হাতাছাড়া করতে চাইছেন না কেউ-ই ।
সব মিলিয়ে ভোটের উত্তপ্ত রাজনীতির মধ্যে, লড়াইয়ের ময়দানে যে দলই জিতুক না কেন সমস্ত রাজনৈতিক তিক্ততা ভুলে সব দলের মধ্যে বজায় থাকুক রাজনৈতিক মিষ্টতার স্বাদ । এটাই চায় বাংলার সাধারণ মানুষ ।