হাওড়া, 2 জুলাই: নিজের এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে এসেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী ৷ কিন্তু ভোট চাইতেই বিপত্তি! ৷ সরাসরি প্রার্থীর মুখের উপর 'তৃণমূলকে ভোট দেব না' বলে চেঁচিয়ে উঠলেন গ্রামবাসীরা ৷ শুক্রবার হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের বাণীপুর 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রথতলাতে এমনই ঘটনা ঘটেছে ৷
ওই এলাকার গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বাণীপুর 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধানকে বারবার বলেও রথতলা এলাকাতে বাসিন্দাদের পানীয় জলের সমস্যায় কর্ণপাত পর্যন্ত করেননি । আর পঞ্চায়েত ভোট আসতেই ভোট চাইতে চলে এসেছেন । তাই রথতলার বাসিন্দারা তৃণমূলকে ভোট দেবেন না বলেই জানিয়েছেন । যদিও এলাকাবাসীর এহেন জবাবের মুখে তৃণমূল প্রার্থী সাফাই দেন ওই বুথে বিজেপির সদস্যজয়ী হওয়ার জন্যই সেখানে কোনও কাজ হয়নি । বরং তিনি জয়ী হলে ওই এলাকার পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর জন্য চেষ্টা করবেন ।
তবে এহেন আশ্বাস পেলেও প্রার্থীর কথা শুনতে নারাজ গ্রামবাসীরা ৷ তাদের বক্তব্য, বুথ সদস্য বিজেপির হলেও পঞ্চায়েত প্রধান তো উন্নয়ন গ্রামের করতে কোনও দল বিচার করবেন না । তিনি তো পঞ্চায়েতের প্রধান । তাঁকে বারবার সমস্যার কথা বলা হলেও একটিবারের জন্য এই এলাকাতে সমস্যা দেখতেও আসেননি । নিত্যদিন এলাকাবাসীদের অনেক দূরে গিয়ে জল নিয়ে আসতে হয় । এদিনের ঘটনায় কোনও আবেদনে কান না দেওয়াতে ও এলাকাবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে হতভম্ব হয়ে এলাকা ছাড়েন তৃণমূল প্রার্থী ।
এলাকার দীর্ঘদিনের প্রবীণ বাসিন্দা রাম নাগিনা সিং অভিযোগের সুরে বলেন, "এটা বাণীপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের রথতলা এলাকা । এখানে পানীয় জলের বড় সমস্যা । শুক্রবার এখানে ভোট চাইতে আসে তৃণমূলের প্রার্থী । ওকে বলে দিয়েছি ভাই তোকে ভোট দেব না । টানা ছয় মাসের অধিক সময় ধরে আমরা গঙ্গাজলে রান্না করছি ও খাচ্ছি । তোকে ভোট দিয়ে লাভ কী ? তৃণমূলের থেকে টাকা, চাকরি কিছু চাইনি, শুধু এলাকাতে যে জলের কল সারানো হোক সেটা চেয়েছি । তাই শুনে প্রার্থী বলছে আমাদের বুথে বিজেপির সদস্য জিতেছিল । কিন্তু পঞ্চায়েত প্রধান তো কোনও দলের হয় না । তাঁকে একাধিকবার বলা সত্ত্বেও এলাকার জলের সমস্যা মেটাতে কোনও কর্ণপাত করেননি । তাই প্রার্থীকে বলে দিয়েছি তৃণমূলকে ভোট দেব না ।"
একই অভিযোগের সুর ওই এলাকার অপর এক বয়স্কা বাসিন্দা ভবানী কর্মকারের গলাতেও । তিনি অভিযোগ করে তৃণমূল প্রার্থীকে বলেন, "এলাকাতে পানীয় জলের সংযোগ নেই । এই অবস্থায় গঙ্গা থেকে জল নিয়ে রান্না-সহ দৈনন্দিন কাজ সারার পাশাপাশি ওই জলই খেতে হচ্ছে । পরিশ্রুত পানীয় জলের জন্য এই বয়সেও অনেক দূরে গিয়ে জল নিয়ে আসতে হচ্ছে । বাড়িতে জল না থাকলে বাচ্চাদের গঙ্গার জলই খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছি ৷ এতে তারা পেটের অসুখে ভুগছে । পঞ্চায়েতে লিখিতভাবে জানিয়েও সমস্যা মেটেনি । এখন ভোট এসেছে তাই বলছে ভোট দিলে কল সারাবে । আমাদের দরকার নেই কলের আর ভোটও দেব না । এদেরকে ভোট দিয়ে লাভ কী ?"
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী মৌসুমী সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট ইমন ভৌমিক বলেন, "শুক্রবার যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা তাঁদের প্রার্থীর উপরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থেকে ঘটেনি । বরং বাণীপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গত পাঁচ বছরে মানুষকে পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে । তাঁকে দল এবারে প্রার্থী করেনি ।"
ইমন ভৌমিকের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে ওই এলাকার অঞ্চল সভাপতি চন্দন সর্দার দাবি করে বলেন, "পঞ্চায়েত প্রধান পাঁচ বছরে কোনও কাজ করেননি । মানুষের যথেষ্টই ক্ষোভ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে । আর তাই তাঁকে দল এবারে প্রার্থী করেনি । এছাড়াও দল তাঁকে বহিষ্কার করেছে । ওই এলাকা থেকেও আমাদের প্রার্থী অনেক ভোটে জয়ী হবেন ।"
আরও পড়ুন: একান্নবর্তী সংসারে বোনের মতো, তবে পঞ্চায়েতে সম্মুখসমরে হাওড়ার বোস পরিবারের তিন বউমা
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত উড়িয়ে ওই পঞ্চায়েতে বিজেপির প্রাক্তন সদস্য সত্যেন্দ্র কুমার যাদবের পালটা অভিযোগ, "তিনি পঞ্চায়েত সদস্য থাকার সময় চার পাঁচবার স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গণস্বাক্ষর করিয়ে জলের কল সারানোর অভিযোগ পত্র জমা করিয়েছেন । পঞ্চায়েতের কল সারাই করার যিনি কন্টাক্টর সেও তৃণমূলের কর্মী । বিজেপি সদস্যদের এলাকার কল ইচ্ছাকৃত খারাপ করার নতুন কল লাগাতে হবে সব নানা ধরনের গল্প শোনানো । এটা তৃণমূলের জঘন্য রাজনীতি । সামনের পঞ্চায়েত ভোটে এলাকার মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবে ৷"
যদিও বাণীপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রীতা দাস অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বলেন, "আমি অযোগ্য হলে বাকি পঞ্চায়েতের যারা তৃণমূলের সদস্য ছিল তারা কতটা যোগ্য ? চার বছর ধরে যারা পঞ্চায়েতে আসেনি । আমাকে প্রধানের পদ থেকে সরাতে একাধিকবার অনাস্থা, মামলা করেও সরাতে পারেননি । আর আমি প্রধান ছাড়া দলের কোনও পদে নেই যেখান থেকে আমাকে বহিষ্কার করতে পারবে । আমি নির্দল হয়ে দাঁড়ানোর আগে অঞ্চল সভাপতিকে সব জানিয়েছিলাম । তিনি দেখছি বলে দায় সেরেছিলেন । আর রথতলা এলাকার কলের জন্য তিনি সাংসদ তহবিল ও ব্লক উন্নয়ন অধিকারিকদের কাছে লিখিত দিয়ে রেখেছিলেন । আর একমাস হাতে পেলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত । পঞ্চায়েত ভোট এত তাড়াতাড়ি হবে সেটা বুঝতে পারিনি । আমি পাঁচ বছরে কোনও দল বিরোধী কাজ করিনি, দলের বিরুদ্ধে কোনও কোথাও বলিনি । বরং আমার দলের লোকেরাই এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে ।"