হাওড়া, 14 মে : সাঁতরাগাছি স্টেশনে চলছে অবৈধ জুয়ার মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ। এই খবর সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের প্রাণ নাশের হুমকিও দেওয়া হয় ৷ সাংবাদিকদের খবরের জেরে পুলিশের জালে ধরা পড়ে দুই ব্যাক্তি (Illegal gambling busted at Santragachi station) ৷
হাওড়ার দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি স্টেশন হাওড়া শহরের অন্যতম ব্যস্ত স্টেশন । প্রতিদিন ভোর হলেই কর্মসূত্রে সুদূর দক্ষিণী রাজ্যে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরতে ভরসা এই স্টেশনই। বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের সঙ্গে থাকে মাসের পর মাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করা টাকা সঙ্গে মনের কোণে উকি দেয় আত্মীয় পরিজনদের জন্য উপহার নিয়ে যাওয়ার বাসনা। একেই ভিত্তি করেই দীর্ঘদিন ধরে 'প্রতারণার ফাঁদ' পাতত কিছু অসাধু মানুষ। মাত্র পাঁচ কিংবা দশ টাকার লটারির টিকিটের বিনিময়ে মিলবে হাজার হাজার টাকা বা ঝাঁ-চকচকে দামি মোবাইল, আরও অনেক কিছু প্রলোভনের জিনিস ৷
এমনই একগুচ্ছ প্রলোভন দেখিয়ে এই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে ডেকে আনত তাঁরা। তারপর ভাগ্য পরীক্ষার ছলে লটারির নামে হাতিয়ে নেওয়া হতো পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে থাকা রোজগারের সমস্ত টাকা । কখনও 14 হাজার, কারোর কাছ থেকে 8 হাজার, কারোর থেকে অর্থের অঙ্কের সংখ্যাটা ছিল 20 হাজার। যার পকেটে যতটুকু থাকত প্রায় সবটাই কেড়ে নিত ওই অসাধু কারবারিরা । কার্যত প্রকাশ্য রাস্তার উপরে সাঁতরাগাছি স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রমরমিয়ে চলছিল এই জুয়ার ফাঁদ।
আরও পড়ুন : রেশনের মাল পাচারের চেষ্টা, গ্রেফতার এক
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, প্রায় সাত-আট জনের একটি দল দিনের পর দিন লটারি খেলানোর নামে সর্বস্ব লুট করে নিত ভিন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের। এরপর ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা হাতে পায়ে ধরেও ফেরত পেতেন না সেই টাকা ৷ অনেক ক্ষেত্রে হুমকি দিয়েও মানিব্যাগ থেকে টাকা আদায় করে নিত সে সমস্ত অসাধু কারবারিরা। আর এই সব কিছুর খবর জানত স্থানীয় থানাও।
এক প্রতারিত শ্রমিক বলেন, "আমার কাছ থেকে সাড়ে চোদ্দো হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাঁচ মাস হায়দরাবাদে কাজ করার পর ওইটুকুই আমার সম্বল ছিল।" অন্যদিকে, শনিবার ভোরে সাংবাদিকদের কাছে খবর পেয়ে সাঁতরাগাছি স্টেশন সংলগ্ন কোনা এক্সপ্রেসের ওপর ওই আখড়ায় হানা দেয় জগাছা থানার পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সমস্ত মালপত্র। সঙ্গে আটক করা হয় দু'জনকে ।
এই খবর করতে গেলে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া ছাড়াও প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দক্ষিণ হাওড়ার বিধায়ক নন্দিতা চৌধুরী জানান, এদিন সকালে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। এরপরই জগাছা থানার আধিকারিককে তিনি ফোন করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন । যাঁদের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন বিধায়ক। তিনি আরও জানান, তিনি নতুন নির্বাচিতা সদস্য । তবে যে কোনও ধরনের খারাপ কাজ তাঁর এলাকায় হলে তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেন।
আরও পড়ুন : সিবিআই অভিযানেও বন্ধ হয়নি কারবার, বেআইনি কয়লা বাজেয়াপ্ত করল কুলটি পুলিশ
গোটা চক্রের এই অবৈধ টাকা স্থানীয় এক চা বিক্রেতার মাধ্যমে রেল পুলিশের হাতে যায়, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের ৷ ওই চা বিক্রেতার নাম অমল সাহা ৷ তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, "2005 সাল থেকে চায়ের দোকান চালালেও এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না ।" যদিও এদিনের ঘটনায় নিজেদের টাকা ফেরত পেয়ে খুশি দক্ষিণ ভারত থেকে ফেরত আসা রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা ।