শিবপুর, 20 জুন: রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম...৷ বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বণের মধ্যে রথযাত্রা অন্যতম । দেশের সনাতনী হিন্দুদের কাছেও রথযাত্রার দিনটি বড়ই পবিত্র । রথযাত্রার দিনে শোভাযাত্রাও বড়ই বৈচিত্র্যময় । একইভাবে রথের ভিন্নতাও রথযাত্রার আঙ্গিককে আরও বর্ণময় করে তোলে । এমনই এক রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় হাওড়ার শিবপুরে । যে রথে পুরীর রথের মতো চড়েন না জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা । বরং সেই রথে চড়েন সনাতনী হিন্দুদের আদি দেব পরমেশ্বর নারায়ণ । তাঁর পুজোর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় শিবপুরের রথযাত্রা । জগন্নাথ দেবের স্থানে শ্রী নারায়ণকে নিয়ে সেই রথ পাড়ি দেয় তাঁর মাসির বাড়ি । হাওড়ার শিবপুরের প্রসিদ্ধ এই রথবাড়ির বৈচিত্র্যময় রথযাত্রা দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ ৷
পারিবারিক ইতিহাস বলছে, হাওড়ার শিবপুরের রথবাড়ি তিনশো বছরের অধিক প্রাচীন । তবে এত বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও প্রজন্মর পর প্রজন্ম বংশ পরম্পরায় রথযাত্রাক প্রাচীন রীতিকে ধরে রেখেছে ৷ প্রতি বছর পারিবারিক রীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে রথযাত্রা । পরিবারের সদস্যদের দাবি, ভূ-ভারতে এই বাড়ির রথ উৎসবের মতো এহেন উদাহরণ খুবই বিরল । অতীতের মতোই এ বছরও রথযাত্রা হবে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ও ব্যবস্থাপনায় ।
আরও পড়ুন: সুভদ্রার রথের চাকায় ফাটল, অশুভ সংকেতের আশঙ্কা জগন্নাথধামে
এই রথবাড়ির রথযাত্রার ইতিহাস প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পরিবারের অন্যতম সদস্য অনঙ্গজিত চট্টোপাধ্যায় জানান, মঙ্গলবার প্রথমে এই রথ প্রশাসনের নির্দেশে মন্দিরতলা যাবে । সেখান থেকে শিবপুর বাজার, ধর্মতলা হয়ে এই রথ যাবে মাসির বাড়ি শিবপুর ট্রাম ডিপোতে । সেখানে একটি মাঠে থাকবে এই রথ । আবার 28 তারিখ উলটো রথের দিন ফিরে আসবে রথবাড়িতে । তিনি আরও বলেন, তাঁদের বাড়িতে রথ আছে বলে একে রথবাড়ি বলেই ডাকা হয় । হাওড়া শিবপুরের বাসিন্দা হলেও উত্তরপ্রদেশের বেনারসে অগস্ত্য মিত্র লেনে তাঁদের পৈতৃক বাড়ি । সেখানেও শ্রীনারায়ণ পুজো হয় । যেহেতু শ্রীনারায়ণ তাঁদের কুলদেবতা, তাই পরিবারের সকলের উপাধিও নারায়ণ । আর তাই তাঁদের পরিবারের এই রথে শ্রীনারায়ণকেই পুজো করা হয় বলে তিনি জানান ।
এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মের হাত ধরে অতীতের বংশ পরম্পরা ও ঐতিহ্য মেনে অত্যন্ত নীতিনিষ্ঠ উপায়ে বংশের আরাধ্য ঈশ্বরের উপাসনার মধ্যে দিয়েই চলে আসছে শিবপুরের রথবাড়ির রথযাত্রা ৷